শুধু নিউইয়র্কে জাতিসংঘের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণই নয়, এবারের যুক্তরাষ্ট্র সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়াশিংটন ডিসিতেও যাওয়ার কথা রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর এবারের যুক্তরাষ্ট্র সফরকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, জাতিসংঘে বাংলাদেশের উন্নয়নের সাফল্য গাঁথা তুলে ধরার পাশাপাশি গুরুত্ব পেতে পারে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন ও রোহিঙ্গা প্রসঙ্গও।
এছাড়া নির্বাচন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ইস্যুতে বাংলাদেশকে নিয়ে যেসব প্রশ্ন তুলছে মার্কিন প্রশাসন সেসব বিষয়েও ঢাকার অবস্থান ওয়াশিংটনকে জানানো হতে পারে ধারণা বিশিষ্টজনদের। সম্প্রতি সময় সংবাদদের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে কথা হয় সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত মোফাজ্জল করিম ও সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে।
কূটনৈতিক বাস্তবতায় গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যস্ততম সময় পার করছে বাংলাদেশ। আর অবশ্যসম্ভাবীভাবেই এসব উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক পরিসরে দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত আগস্টে সাউথ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন অতঃপর সেখানে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। এরপর চলতি মাসের শুরুতেই ভারতের নয়াদিল্লিতে জি-টোয়েন্টির লিডার্স সামিট। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক এবং সেলফি কূটনীতি। ঘুরেফিরে বাংলাদেশ যেমন নিজের ইতিবাচক অবস্থানের জানান দিয়েছে তেমনি কিছু অমিমাংসিত ইস্যুতেও আলোচনা চলছে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে।
কূটনৈতিক এমন কর্মসূচির ধারাবাহিকতাকেই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে লম্বা সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এবারের সফরে নিউইয়র্ক ছাড়াও, ওয়াশিংটন ডিসিতে যাওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কথা রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে অংশ নেয়ারও।
পররাষ্ট্র বিশ্লেষকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেছে, এবারের যুক্তরাষ্ট্র সফরের গুরুত্ব সম্পর্কে। তাদের মতে, জাতিসংঘের নিয়মিত কর্মসূচিতে বিভিন্ন সূচকে দেশের অবস্থান তুলে ধরবেন সরকার প্রধান।
সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত মোফাজ্জল করিম সময় সংবাদকে বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে উন্নীতি হয়েছে বা হতে যাচ্ছে এটাও আলোচনার মধ্যে আসবে। আমাদের এখানে অবাধ সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক একটা নির্বাচন হোক, এটা আমরা চাই এবং এটা আমরা কবরো। এই কথা বা আশ্বাসটুকু কোনো প্লাটফর্মে বা সাইড লাইন কোনো বৈঠক হয় সেখানে আলোচিত হবে বলে মনে করি।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, মানবাধিকার বিষয়টি নিয়ে সাম্প্রতিককালে বেশ আমরা চাপের মধ্যে আছি, হয়ত তিনি (শেখ হাসিনা) সেই ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে পারেন। সাম্প্রতিককালে আমাদের বিচার ব্যবস্থা নিয়েও তাদের কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, আমার ধারনা তার একটা কম্পন হয়ত সেখানে পাওয়া যাবে। অবশ্যই তারা এটি জানতে চাইতে পারে।
এ দুই বিশ্লেষকের মতে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের পাশাপাশি এবারের সফরে সাইড লাইনে রাজনৈতিক কিছু ইস্যুও আলোচনায় উত্থাপিত হতে পারে। যেখানে বাংলাদেশ তার অবস্থান স্পষ্ট করতে পারে।
হুমায়ুন কবির বলেন, বাংলাদেশের যে বিষয়গুলো উত্থাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সেই বিষয়গুলোকে আগে আমাদের ঠিক করতে হবে, সেই বিষয়গুলোকে যদি আমি ঠিক করতে পারি, তাহলে আমাদের অবস্থান শক্তিশালী হবে, সেখানে আমরা বক্তব্য উপস্থান করতে পারলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে। যে ইস্যুগুলো নিয়ে এখন আমরা জটিলতায় আছি, সেই ইস্যুগুলো নীতিগত অবস্থানের ইস্যু।
মোফাজ্জল করিম বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে সমস্ত মন্তব্য করছে এগুলো হয়ত আলোকপাত হতে পারে। আর ভিসানীতি বা অন্যান্য স্যাংশন এগুলো নিয়েও সুনির্দিষ্ট আলাপ আলোচনা হয় সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে।
শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই নয়। দেশের যেসব বিষয় নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয় বহির্বিশ্ব। সেসব ইস্যুর সমাধানও বিদেশি প্রেসক্রিপশনে নয় বরং দেশের মাটিতেই হওয়া উচিত বলে মত হুমায়ুন কবিরের।