মাদারীপুরের কালকিনিতে তানিমা চৌধুরী চৈতী (২২) নামে এক গৃহবধূকে যৌতুকের জন্য পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করে ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ ওঠেছে। স্বজনরা এ জন্য নিহতের স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে দায়ী করছেন।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কালকিনি উপজেলার দক্ষিণ রাজদী গ্রামে স্বামীর বাড়ি ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় ওই মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
তনিমা চৌধুরী চৈতী ডাসার উপজেলার পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামের সেলিম চৌধুরীর মেয়ে। তিনি কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
তানিয়ার স্বামী শাহীন আহম্মেদ কালকিনির দক্ষিণ রাজদী গ্রামের আবুল ফকিরের ছেলে।
এ দিকে স্বজনদের অভিযোগ, যৌতুক না দেয়ায় পরিকল্পিতভাবে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে তানিয়াকে হত্যা করেছেন তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
স্বজনরা জানান, ১১ মাস আগে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীনের সঙ্গে বিয়ে হয় চৈতীর। বিয়ের পর যৌতুকের জন্য চৈতীকে চাপ দিতে থাকেন শাহীন। সম্প্রতি বাবারবাড়ি থেকে কয়েকবার টাকা এনে শাহীনের হাতে তুলে দেন চৈতী। এরপরও যৌতুক দাবি করে শাহীন ও তার পরিবারের লোকজন।
পরে যৌতুক দিতে অস্বীকৃতি জানালে মঙ্গলবার বিকেলে চৈতীকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মরদেহ ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ ওঠে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে।
পরে মরদেহ উদ্ধার করে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চৈতীর বাবারবাড়িতে খবর দেয়া হয়। পরিকল্পিতভাবে চৈতীকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের।
নিহত চৈতীর মামা অ্যাডভোকেট মো. সেলিম বলেন, আমার ভাগ্নি চৈতীকে যৌতুকের জন্য হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার বিচার চাই। কয়েকবার যৌতুক দেয়াও হয়েছে। শাহীনের উপযুক্ত শাস্তি চাই।
নিহত ওই শিক্ষার্থীর বাবা সেলিম চৌধুরী বলেন, আমার মেয়ের হত্যার জন্য শাহীনই দায়ী। ওর বিচার হওয়া উচিৎ। আমার মেয়ে কখনই আত্মহত্যা করতে পারে না।
এদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।
তবে তার মা শাহিনুর বেগম বিষয়কে আত্মহত্যা বলে দাবি করলেও এর কারণ সম্পর্কে কিছুই জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, কি কারণে আমার ছেলের বউ আত্মহত্যা করেছে কিছুই বুঝতে পারছি না। সকালে একসঙ্গে সংসারের কাজ করেছি। কিন্তু দুপুরের পরে এই ঘটনা ঘটেছে। আমার ছেলের সঙ্গে বা আমাদের কারও সঙ্গে কোনো রকম ঝগড়াও হয়নি চৈতীর। কিন্তু কেন এমন হলে সেটা বুঝতে পারছি না?
মাদারীপুরের কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজমুল হাসান জানান, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপতত থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে। নিহতের শরীরের পেছনে রক্তজমাট একটি চিহ্ন পাওয়া গেছে। এটি সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।