একসময়ের প্রবহমান নড়াই নদী কালের বিবর্তনে এখন হয়েছে সরু খাল। এই সরু খালটি এখন রামপুরা খাল হিসেবে পরিচিত। যদিও আশির দশকে এই নদীপথটি ব্যবসাবাণিজ্যের অন্যতম একটি রুট ছিল। দূর-দূরান্ত থেকে মালামাল আসত নৌকা করে। সেসব আজ অতীত। নৌকা দু-একটা এখনো চলে বটে, কিন্তু রামপুরা খাল হারিয়েছে তার জৌলুস।
প্রাচীনকাল থেকে আশির দশকের শুরু পর্যন্ত ঢাকার মধ্যাঞ্চলের প্রধান নৌপথ ছিল নড়াই নদী। এই নদীর দুই তীরে পাল, সেন, সুলতানি ও মোগল আমলের বিভিন্ন স্থাপত্য নিদর্শন প্রমাণ দেয় এখানে শহর গড়ে উঠেছিল অনেক আগে থেকেই। রাজধানীর পূর্বদিকের বালু নদী থেকে পশ্চিম দিকের তুরাগ নদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল নড়াইয়ের ধারাটি। বর্তমানে এর পশ্চিমাংশ পুরোই ভরাট করা হয়ে গেছে। মাঝের অংশটি হাতিরঝিল নামে পরিচিত। তবে একেবারে পূর্বদিকের অংশটি এখনো প্রবহমান এবং স্থানীয়ভাবে নড়াই নদী নামেই পরিচিত।
সময়ের ব্যবধানে দখলে-দূষণে নড়াই এখন মৃত খালে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় নথিতেও নদী বাদ দিয়ে খালের নাম উপাধি দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, আশির দশকের শুরুর দিকেও নদীর পশ্চিমাংশ কারওয়ান বাজার পর্যন্ত নৌপথ চালু ছিল। একসময় এ নড়াই নদী দিয়ে হাতিরঝিল হয়ে নৌপথে শাকসবজিসহ অন্যান্য মালামাল কারওয়ান বাজার যেত। কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ ভবনের পাশে মাছের পাইকারি বাজারটিতে একসময় শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ নদের মাছের ল্যান্ডিং পোর্ট ছিল। বর্তমানে সরকারি খাতায় এই নদীটির নাম রয়েছে রামপুরা বা বেগুনবাড়ি খাল হিসেবে।
এই খালে মগবাজার, মধুবাগ, উলন, দাসপাড়া, রামপুরা, খিলগাঁও, মেরুল, বাড্ডা, বেগুনবাড়িসহ আশপাশ এলাকার বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হতো। বর্তমানে হাতিরঝিল প্রকল্পের পানি পাম্পের মাধ্যমে এ খালের পানি নিষ্কাশন করা হয়। তাছাড়া ঝিলের অতিরিক্ত পানিও রামপুরা ব্রিজ হয়ে এ খালে পড়ে।
দখলে-দূষণে মৃতপ্রায় নড়াই নদীকে খাল উল্লেখ করায় নিন্দা জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। গত বছরের অক্টোবর মাসে ‘নোঙর বাংলাদেশ’ রামপুরা বনশ্রী-সংলগ্ন নদীর তীরে ‘নড়াই নদী’র নাম ফলক উন্মোচন এবং নৌকা র্যালির আয়োজন করেছিল। সেখানে নদীর নাম বাদ দিয়ে খাল হিসেবে চিহ্নিত করায় প্রতিবাদও করেছিল সংগঠনটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোঙর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুমন শামস বলেন, রামপুরা খাল নয়, এটার নাম নড়াই নদী। এই নদী রক্ষায় আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। শুনেছি এই নদীর দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনের। কিন্তু কোনো মেয়রের এই নদী নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই। বর্তমানে দখলে-দূষণে বিপর্যস্ত। এ নদী রক্ষায় দরকার মেয়র, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কাউন্সিলরদের এক জায়গায় আসা। এক জায়গায় আসতে পারলে এই নদীসহ সব নদী খাল উদ্ধার হবে ও সংরক্ষণ হবে।
যদিও বর্তমানে রামপুরা খালটি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন রয়েছে। এর মধ্যে রামপুরা ব্রিজ থেকে ফরাজী হাসপাতাল পর্যন্ত ঢাকা উত্তরের আওতাধীন এবং সেখান থেকে বালু নদ পর্যন্ত দক্ষিণের আওতাধীন। যদিও মেরাদিয়া বাজার পর্যন্ত খালটির অবস্থা খুবই করুণ। এ বিষয়ে দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকা উত্তরের অংশে খাল সংস্কারে পরিকল্পনা রয়েছে। দখল ও দূষণ বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখবেন। আর দক্ষিণের খাল সংস্কারে কোনো পরিকল্পনা নেই।