নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা টাইমস সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলনকে মানিলন্ডারিংয়ের একটি মামলার আসামি হিসেবে কারাগারে পাঠানো হলেও বাস্তবে আইনানুগভাবে এখনো তিনি ওই মামলার আসামিই নন। ফরিদপুরের দুই ভাই বরকত-রুবেলের বিরুদ্ধে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি রাজধানীর কাফরুল থানায় যে মামলা করে তাতে প্রথমে ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয় ও ৪১ জনকে অব্যাহতি (NON SENT UP) দেয়। আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণও করে। পরে অভিযোগ গঠনের সময় আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য পাঠায় সিআইডিকে। এই মামলায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেয় ছয়জন। তারা হলেন- বরকত, রুবেল, নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী, আশিকুর রহমান ফারহান, নিশান মাহমুদ শামীম ও বিল্লাল হোসেন।
এদের মধ্যে শুধুমাত্র বরকত গণহারে ৫১ জনের নাম বলেন, ওই জবানবন্দিতে এক জায়গায় শুধু একবার আরিফুর রহমান দোলনের নাম আছে (বাকি পাঁচজনের কেউই দোলনের নাম বলেননি)।
সিআইডি অধিকতর তদন্তে প্রথম ১০ জনের (বরকত, রুবেল, মোহতাশেম হোসেন বাবর, এইচ এম ফোয়াদ, ফারহান, ফাইন, বিল্লাল, মিনার, নাসিম, ডেভিড) সঙ্গে আরও ৩৭ জনের নাম যুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় ৮ মাস আগে। এখনো আদালত সেটি গ্রহণ করেননি। এই অধিকতর অভিযোগপত্রে শেষ নামটি দোলনের। অধিকতর অভিযোগপত্র গ্রহণ হবে কিনা সর্বশেষ গত ৫ মার্চ আদালত সেজন্য শুনানির দিন ধার্য করেছেন আগামী ২২ এপ্রিল। যতদিন এই অভিযোগপত্র গৃহীত না হচ্ছে, আইন অনুযায়ী ততদিন পর্যন্ত দোলন আসামি নন।
এদিকে অধিকতর তদন্তে অভিযোগপত্রে নাম যুক্ত হতে পারে দু একটি মিডিয়ায় আসা এমন খবরের ভিত্তিতে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার আশঙ্কা থেকে আরিফুর রহমান দোলন ৮ মাস আগে হাইকোর্ট থেকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন নেন। পরবর্তীতে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণও করেন। তিনি প্রতি ধার্য তারিখে নিম্ন আদালতে হাজিরও হচ্ছিলেন- যদিও আদালত এই ৮ মাসে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেননি, শুনানিও করেননি। শুধুমাত্র প্রতিমাসে শুনানির দিন ধার্য হয়। অভিযোগপত্র গ্রহণ না হওয়ায় দোলন আসামিও নন। ওই মামলায় দ্বিতীয় দফায় যুক্ত হওয়া বাকি ৩৬ জনের কেউ কারাগারে নেই।
৫ মার্চ আরিফুর রহমান দোলন যথারীতি আগের মতোই আদালতে হাজিরা দেন। এদিনও সম্পূরক অভিযোগপত্র গ্রহণের শুনানির তারিখ দেওয়া হয় ২২ এপ্রিল। কিন্তু আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিয়মিত হাজিরা দেওয়া ঢাকা টাইমস সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলনকে কারাগারে পাঠান আদালত। অথচ এই মামলায় প্রথম অভিযোগপত্রে নাম থাকা ১০ জনের মধ্যে জামিনে আছেন সাতজন। এরা হলেন- বাবর, লেভী, ফারহান, মিনার, নাসিম, বিল্লাল ও ডেভিড।
আরিফুর রহমান দোলন ফরিদপুর-১ আসনে গত জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোট পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হন। তিনি ৮৫ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। ওই আসনে বিজয়ী আবদুর রহমান এখন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী। আরিফুর রহমান দোলন বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য।
আরিফুর রহমান দোলন ঢাকা টাইমস ছাড়াও সাপ্তাহিক এই সময় পত্রিকার সম্পাদক। তিনি আলফাডাঙ্গার বেগম শাহানারা একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা এবং কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমীর সভাপতি ও আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজের সভাপতি। পাশাপাশি তিনি একজন লেখক। উপন্যাসসহ তার লেখা ছয়টি বই বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত।
আরিফুর রহমান দোলন কর্মজীবনে আমাদের সময় পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর উপ-সম্পাদক ও প্রথম আলো পত্রিকার ডেপুটি চিফ রিপোর্টার ছিলেন।
তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য।
খ্যাতিমান সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলনকে দ্রুত মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা টাইমস পরিবার ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।