নিজস্ব প্রতিবেদক
যে সম্পূরক চার্জশিট আদালত গ্রহণই করেননি তাতে নাম থাকার দোহাই দিয়ে ফরিদপুর-১ আসনের জনপ্রিয় নেতা ঢাকা টাইমস সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলনের মতো একজন নিখাদ সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদকে কারাগারে পাঠানো নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ফরিদপুর-১ আসনের আপামর জনসাধারণ বলছেন, এ আসন থেকে ঈগল মার্কা নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে ৮৫ হাজার ভোট পাওয়াই বিপদের কারণ হয়েছে দোলনের। এ অপরাধেই জেলে যেতে হলো তার মতো নিরপরাধ একজন মানুষকে।
আর সাংবাদিক সমাজও বলছে, এটি যে কেবল রাজনৈতিক প্রতিহিংসা তার প্রমাণ পদে পদে রয়েছে। যে মামলায় আরিফুর রহমান দোলনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, সেই মামলার সম্পূরক চার্জশিটে দোলনের সঙ্গে নাম থাকা অন্যরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দোলনের নাম সবশেষ নম্বরে থাকলেও তাকেই কারাগারে পাঠানো হয়েছে, যা অবাক করার বিষয়। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, পেছনে রাজনৈতিক শক্তি কলকাঠি নাড়ছে। দোলন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি পক্ষ নানাভাবে হয়রানি করছে।
গত ৫ মার্চ থেকে দোলন কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। যে ঠুনকো অজুহাতে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা বিতর্ক। সাংবাদিক সমাজ ও ফরিদপুর-১ আসনের জনগণ আরিফুর রহমান দোলনের দ্রুত মুক্তি দাবি করেছেন।
দোলনের আইনজীবী বলছেন, দোলনকে মানিলন্ডারিংয়ের একটি মামলায় কারাগারে পাঠানো হলেও এখনো তিনি ওই মামলার আসামিই নন। ফরিদপুরের দুই ভাই বরকত-রুবেলের বিরুদ্ধে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি রাজধানীর কাফরুল থানায় যে মামলা করে তাতে প্রথমে ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয় ও ৪১ জনকে অব্যাহতি দেয়। পরে আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য পাঠায় সিআইডিকে। এই মামলায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেন বরকত, রুবেল, নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী, আশিকুর রহমান ফারহান, নিশান মাহমুদ শামীম ও বিল্লাল হোসেন। এদের মধ্যে জবানবন্দিতে শুধু বরকত গণহারে ৫১ জনের নাম বলেন, যার এক জায়গায় একবার আরিফুর রহমান দোলনের নাম আছে।
সিআইডি অধিকতর তদন্তে প্রথম ১০ জনের (বরকত, রুবেল, মোহতাশেম হোসেন বাবর, এইচ এম ফোয়াদ, ফারহান, ফাইন, বিল্লাল, মিনার, নাসিম, ডেভিড) সঙ্গে আরও ৩৬ জনের নাম যুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় আট মাস আগে। এখনো আদালত সেটি গ্রহণ করেননি। এই সম্পূরক অভিযোগপত্রে শেষ নাম অর্থাৎ ৪৬ নম্বর নামটি দোলনের। অধিকতর অভিযোগপত্র গ্রহণ হবে কি না আদালত সেজন্য শুনানির দিন ধার্য করেছেন আগামী ২২ এপ্রিল। এর আগেই দোলনকে কারাগারে পাঠানো নিয়ে নানা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। কারণ, যতদিন এই অভিযোগপত্র গৃহীত না হচ্ছে, আইন অনুযায়ী ততদিন পর্যন্ত দোলন আসামি নন।
লক্ষণীয় যে, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ৫০ জনেরও অধিক নাম একজন আসামি যে বলেছে তার মধ্যে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিপুল ঘোষের নামও আছে। এটাও উদ্দেশ্যমূলক। তবে সিআইডি সম্পূরক যে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছে তাতে প্রবীণ নেতা বিপুল ঘোষের নাম আবার বাদ দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা বিপুল ঘোষ চার্ট অব এভিডেন্সে একটি মাত্র এভিডেন্সের কারণে সম্পূরক অভিযোগপত্রে বাদ গেলে সাংবাদিক সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলনসহ আরও কয়েকজনকে কেন বাদ দেওয়াইবা হলো না?
আর যে সম্পূরক অভিযোগপত্র এখনো আদালত গ্রহণই করেনি সেই মামলায় একজন প্রতিষ্ঠিত সম্পাদককে কীভাবে কারাগারে পাঠানো যায়?
এদিকে অধিকতর তদন্তে অভিযোগপত্রে নাম যুক্ত হতে পারে— দু-একটি মিডিয়ায় আসা এমন খবরের ভিত্তিতে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার আশঙ্কা থেকে আরিফুর রহমান দোলন আট মাস আগে হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন নেন। পরবর্তীতে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণও করেন। তিনি প্রতি ধার্য তারিখে নিম্ন আদালতে হাজিরও হচ্ছিলেন। গত ৫ মার্চ আরিফুর রহমান দোলন যথারীতি আগের মতোই আদালতে হাজিরা দেন এবং বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
অথচ এই মামলায় সম্পূরক চার্জশিটে থাকা ৩৬ জনের মধ্যে দোলন ছাড়া কাউকেই কারাগারে পাঠানো হয়নি। এতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।
ফরিদপুর-১ আসনের মানুষ বলছে, রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে ফরিদপুর-১ আসনে গণমানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করায় কতিপয় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী আরিফুর রহমান দোলনের প্রতি ঈর্ষান্বিত। তাকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে তার বিরুদ্ধে পাতানো ও সাজানো একটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ানোও ছিল সেই গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।
দোলনের আইনজীবী শেখ বাহারুল ইসলাম বলেন, ‘বিস্ময়কর হলো মানিলন্ডারিং মামলায় পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র একজন আসামির জবানবন্দিতে কারও নাম উচ্চারণ হলেই সেই নামকেও অভিযোগপত্রে আনার অতীত রেকর্ড নেই। অভিযোগপত্র দেওয়ার জন্য পুলিশের যে ‘চার্ট অব এভিডেন্স’ সেখানে একটি মাত্র এভিডেন্স যদি একক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি হয় (মানিলন্ডারিং মামলার ক্ষেত্রে) তাহলে সেটি আসলে কখনোই বিবেচনায় নেওয়া হয় না।’
অতীতেও বিভিন্ন সময় পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের মাধ্যমে আসামিকে দিয়ে ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন অনেকের নাম ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ানোর অনেক অভিযোগ আছে, যা বিভিন্ন সময় অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রমাণিত হয়েছে। এর জ্বলন্ত উদাহরণ একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার সাজানো আসামি জজ মিয়া।
উল্লেখ্য, আরিফুর রহমান দোলন ফরিদপুর-১ আসনে গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৮৫ হাজার ভোট পেলেও পরাজিত হন। ওই আসনে বিজয়ী আবদুর রহমান এখন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী। পরে নির্বাচন কমিশনে দোলন ভোটে অনিয়মের অভিযোগ করেন। জমা দেন ভোটে কারচুপি হওয়ার ভিডিও ও ছবিসহ নানা প্রমাণ। যদিও তাও চাপা পড়ে আছে বিশেষ ক্ষমতায়। আরিফুর রহমান দোলন বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য।
আরিফুর রহমান দোলন ঢাকা টাইমস ছাড়াও সাপ্তাহিক এই সময় পত্রিকার সম্পাদক। তিনি আলফাডাঙ্গার বেগম শাহানারা একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা এবং কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমীর সভাপতি ও আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজের সভাপতি। পাশাপাশি তিনি একজন লেখক। উপন্যাসসহ তার লেখা ছয়টি বই বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত।
আরিফুর রহমান দোলন কর্মজীবনে আমাদের সময় পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার উপ-সম্পাদক ও প্রথম আলো পত্রিকার ডেপুটি চিফ রিপোর্টার ছিলেন। তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য। এছাড়াও আরিফুর রহমান দোলন সমাজসেবামূলক সংস্থা কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান।