১৩ মার্চ নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহল পার্লামেন্টে আস্থা ভোট জিতেছেন। তার দল কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (মাওবাদী) বেইজিংয়ের সাথে সু-সম্পর্কের জন্য পরিচিত। দলটির নয়াদিল্লির দিকে ঝুঁকে থাকা নেপালি কংগ্রেস থেকে দূরে সরে গিয়ে নেপালের আরেক কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী জোট) সাথে মিলিত হওয়ার সিদ্ধান্ত দেশটির রাজনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনকে চিহ্নিত করেছে।
ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস (আইডিএসএ) এর গবেষক নিহার নায়কের মতে, জোটের এই পরিবর্তন এই অঞ্চলে চীন-ভারত বৈরিতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ এটি নেপালকে চীনা স্বার্থের সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেপালের অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষায় চীনের প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেইজিং নেপালে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের (এফডিআই) একটি প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে অবকাঠামো প্রকল্পের মাধ্যমে। চীন এর মাধ্যমে নেপালের বৃহত্তম বিনিয়োগকারী হিসেবে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে, যা কাঠমান্ডু ও দিল্লির মধ্যে ঐতিহ্যগত অর্থনৈতিক সম্পর্কের পরিবর্তনকে চিহ্নিত করেছে।
গত সেপ্টেম্বরে চীন ও নেপাল বাণিজ্য, সড়ক যোগাযোগ এবং তথ্য প্রযুক্তিতে সহযোগিতা বাড়াতে সাতটি সমঝোতা স্মারক সহ ১২টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চার বছর বিনিয়োগের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনার পর নেপাল চীনের সাথে একটি বেল্ট অ্যান্ড রোড বাস্তবায়ন চুক্তি স্বাক্ষরের কাছাকাছি রয়েছে বলেও জানা গেছে। নেপালের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নারায়ণ কাজী শ্রেষ্ঠা আগামী সপ্তাহে পাঁচ দিনের সফরে চীন সফরে যাচ্ছেন। তিনি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করবেন। এই সফরে প্রত্যাশিত চুক্তিটি স্বাক্ষর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নেপালের বৈদেশিক নীতির পরিবর্তন ভারতের উদ্বেগকে আরও গভীর করতে পারে, যা ঐতিহ্যগতভাবে নেপালকে তার প্রভাব বলয়ের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। পাঁচটি ভারতীয় রাজ্যের সাথে একটি দীর্ঘ সীমান্ত ভাগ করে নেওয়া দেশ নেপালে চীনের বর্ধিত প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের জন্য সম্ভাব্য কৌশলগত আধিপত্য সম্পর্কিত উদ্বেগও বাড়িয়েছে।
ভারতীয় সংস্থাগুলি নেপালের প্রধান বিনিয়োগকারী ফিল, যেগুলি মোট অনুমোদিত এফডিআই-এর ৩০ শতাংশেরও বেশি। ২০২৪ সালে জানুয়ারীতে ভারত ও নেপাল একটি দীর্ঘমেয়াদী বিদ্যুৎ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে, যার লক্ষ্য ভবিষ্যতে নেপাল থেকে ১০হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা। দুই দেশের মধ্যে ১৯৫০ সালের শান্তি ও বন্ধুত্বের চুক্তি রয়েছে, যা উভয় দেশে বসবাস, সম্পত্তি, ব্যবসা এবং চলাচলের বিষয়ে ভারতীয় ও নেপালি নাগরিকদের পারস্পরিক আচরণের রূপরেখা দিয়েছে। নেপালের প্রায় ৩২ হাজার গুর্খা সৈন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কাজ করে।