প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র সাত বছরের রাফিন। প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার (১৬ মে) স্কুলে গিয়েছিল। পরীক্ষা শেষে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যালয় ছুটির পর টয়লেটে যায় সে। পরে দফতরি খোকন খান টয়লেট চেক না করেই বাইরে থেকে রশি দিয়ে দরজা আটকে দেন। এ সময় রাফিন দরজাটি খোলার জন্য চিৎকার করতে থাকলেও কোনো সাড়া মেলেনি। বারবার দরজা খোলার চিৎকার করায় রাফিনের গলা ও মুখ রক্তাক্ত হয়ে যায়। পরে প্রায় ৬ ঘণ্টা দরজা ধাক্কাধাক্কি করতে করতে একপর্যায়ে টয়লেটের দরজাটি খুলতে সক্ষম হয় রাফিন।
ঘটনাটি ঘটেছে মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের ৯ নম্বর পাঁচখোলা বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
জানা যায়, পাঁচখোলা এলাকার মৃত নুরুল হকের ছেলে রাফিন। সে ৯ নম্বর পাঁচখোলা বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির একজন ছাত্র। প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার স্কুলে গিয়েছিল। তখন তাদের পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষা শেষে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যালয় ছুটির পর টয়লেটে যায় সে। পরে দফতরি খোকন খান টয়লেট চেক না করেই বাইরে থেকে রশি দিয়ে দরজা আটকে দেন। এ সময় রাফিন দরজাটি খোলার জন্য চিৎকার করতে থাকলেও কোনো সাড়া মেলেনি। বারবার দরজা খোলার চিৎকার করায় রাফিনের গলা ও মুখ রক্তাক্ত হয়ে যায়। পরে প্রায় ৬ ঘণ্টা দরজা ধাক্কাধাক্কি করতে করতে একপর্যায়ে টয়লেটের দরজাটি খুলতে সক্ষম হয় রাফিন।
এদিকে ছুটির পর রাফিন শিশু নিবাসে না ফেরায় শিশু নিবাসের কর্মকর্তারা বিভিন্ন ছাত্র ও আত্মীয়ের বাড়িতে খুঁজতে থাকেন। তবে সন্ধ্যা ৬টার পর বিদ্যালয়ের তিনতলা থেকে একজন মুদি দোকানদারকে বিদ্যালয়ে প্রবেশের মূল ফটক খোলার কথা বলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে রাফিন। পরে স্থানীয় কয়েকজন মিলে তাকে উদ্ধার করে শিশুনিবাসে নিয়ে যায়।
এলাকাবাসী এ ঘটনাকে ১৯৮০ সালের শিশুতোষ চলচ্চিত্র ছুটির ঘণ্টার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, সেই চলচ্চিত্রে শিশুটি মারা গেলেও আমাদের এখানে রাফিন নামে যে ছেলে স্কুলের টয়লেটে ৬ ঘণ্টা আটকে ছিল সে উদ্ধার হয়েছে। হয়তো আর কিছু সময় হলেই ছুটির ঘণ্টার ওই ছেলের মতো রাফিনও মারা যেত।
শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে ওই ছাত্রের নিবাসে গেলে সে তার ভাষায় বৃহস্পতিবারের ঘটনা বর্ণনা করার চেষ্টা করলেও শিশু নিবাসের পরিচালক বাতেন খান তার সঙ্গে কথা বলতে বার বার বাধা প্রদান করেন। তবে এ কারণে রাফিনের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
রাফিনকে উদ্ধার করা সেই মুদি দোকানদার বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাথরুমে আটকা পড়েছিল স্কুলের একটি ছেলে। কোনমতে দরজা খুলে তিন তালার বেলকনি থেকে আমাদের ডাক দেয় সে। পরে আমরা তাকে গিয়ে উদ্ধার করি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রওশন আরা বেগম বলেন, ওইদিন আমি একটা মিটিংয়ে ছিলাম। বের হওয়ার আগ পর্যন্ত এমন কিছু আমার নজরে পড়েনি। আমি পরে ঘটনাটি জানতে পেরেছি। ঘটনার সঙ্গে কেউ জড়িত রয়েছে কিনা তদন্ত করে তা দেখা হবে।
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল মামুন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। যদি এরকম কিছু হয়ে থাকে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।