নিজস্ব প্রতিবেদক: একটি চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক কৌশলে ক্লায়েন্ট সেজে ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ করেছে-থ্রি অ্যাংগেল মেরিন লিমিটেড।
বুধবার বিকালে রাজধানীর সেগুণবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুণি হলে এক সংবাদ সম্মেলনে
লিখিত বক্তব্যে থ্রি অ্যাংগেল মেরিন লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম এই অভিযোগ করেন।
ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, একটি অসাধুচক্র তাদের মুন্সিগঞ্জের ডক ইয়ার্ডে একটি অবৈধ জাহাজ ঠিক করার পর তার বিল পরিশোধ নিয়ে টালবাহানা করতে থাকে। বিলের জন্য বারবার তাগিদ দিলে এক পর্যায়ে বিল না দিয়ে কৌশলে ডক থেকে জাহাজটি সরিয়ে নেয়। উপরন্ত ওই জাহাজ অ্যাংগেল মেরিন লিমিটেডের ডক থেকে খোয়া যাওয়ার অজুহাত তুলে তাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তাদের প্রতারণা থেকে উদ্ধার পেতে ইতিমধ্যে তারা আইনের আশ্রয় নিয়েছে।
এ বিষয়ে তিনি জানান, গত ২২ মমে ২০২৩ সালে নয়ানগর, গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ এ অবস্থিত থ্রি অ্যাংগেল মেরিন লিমিটেডের শিপইয়ার্ডে জনৈক মিলন হাজী, রফিক এবং আবুল হোসেন নামের তিন ব্যক্তি ‘টি- টেকনাফ’ নামক একটি পুরাতন অয়েল ট্যাংকার মেরামতের জন্য নিয়ে আসেন। মেরামতের পর প্রথমতঃ ২৩ জুলাই তারা জাহাজের মালিকপক্ষের কাছে ৫ লক্ষ ২৪ হাজার টাকার বিল দাখিল করে। তখন তারা বিল প্রদান করেনি এবং জাহাজও ডেলিভারি নেয়নি।
এরপর আরো ৫ মাস পর এবছরের ৩ জানুয়ারি রফিক নামের এক ব্যক্তি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ওই সময় পর্যন্ত ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকার বিল তাকে দেওয়া হয়, তিনি সেই বিল গ্রহণ করেন। তিনি স্বয়ং উপস্থিত থেকে জাহাজটি আনডকিং করে পানিতে বার্থিং করে রাখেন। সেদিন তিনি জাহাজটি ডেলিভারি নিতে চান এবং দুই দিন পর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিলের অর্থ পরিশোধ করবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
তিনি বলেন, শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ এই প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় পানিতে বার্থিংরত জাহাজে তিনি (রফিক) তার নিজস্ব দুই জন স্টাফ সার্বাক্ষনিক পাহারারত অবস্থায় রেখে চলে যান। অদ্যাবদি তিনি কোনো বিল পরিশোধ করেননি। পাওনা বিলের জন্য রফিককে বারংবার তাগাদা প্রদান করা হলেও সে টাকা পরিশোধ করা হয়নি। উপরন্তু এবছরের এপ্রিল মাসের শেষ দিকে সন্ধ্যার পর পানিতে বার্থিংরত টি-টেকনাফ জাহাজটি নেওয়ার জন্য দুইটি টাগবোট জাহাজটির পাশে ভিড়লে শিপইয়ার্ডেরর লোকদের তা গোচরীভূত হয় এবং তখন শিপইয়ার্ড হতে জাহাজটি নিতে বাধা প্রদান করলে টাগবোট দুইটি চলে যায়।
তিনি আরও জানান, এর মধ্যেও থ্রি অ্যাংগেল মেরিন লিমিটেডের পাওনা বিল আদায়ের জন্য তাগাদা অব্যাহত রাখা হয়। প্রকাশ থাকে যে, জাহাজটি শিপইয়ার্ডের দক্ষিণ পাশে শেষ প্রান্তে মেঘনা নদীতে জাহাজ মালিক পক্ষের ২-৩ জন স্টাফের তত্ত্বাবধানে বার্থিং অবস্থায় ছিল। গত ১৬ মে বার্থিং চার্জসহ সর্বমোট প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার বিল রফিককে প্রদান করা হয় এবং তিনি তা গ্রহণ করেন। এরপরও তারা কোনো বিল প্রদান না করে টালবাহানা শুরু করে। এভাবে পানিতে বার্থিং থাকা অবস্থায় গত ১৯ মে সকাল থেকে টি-টেকনাফ অয়েল ট্যাংকার জাহাজ মালিকের ২-৩ জন স্টাফসহ উক্ত স্থানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিষয়টি শিপইয়ার্ডে যারা জাহজ মেরামতের জন্য আনেন তাদের জানালে তারা জাহাজ এবং স্টাফদের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। উক্ত সময়ে জাহাজের স্টাফদের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর চাইলে তারা তা দিতেও অস্বীকৃতি জানায়।
শহিদুল ইসলাম বলেন, জাহাজটি বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে থ্রি অ্যাংগেল মেরিন লিমিটেডের পক্ষে জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) গত ২৯ মে স্থানীয় গজারিয়া থানায় জাহাজ না পাওয়ার বিষয়ে একটি অভিযোগ দাখিল করেন।
তিনি বলেন, মুলত জাহাজটি ২০২৩ সালের মে সাসে ডকিং করলেও অক্টোবর মাসে এসে জানা যায়, জাহাজটি মের্সাস বেঙ্গল ইলেকট্রিক এর মালিকানাধীন। নৌযানটির নির্মাণ সন ১৯৪৫ ইং। ১৯৭২ সালে এটি BIWTC এর বহরে যুক্ত হয়। অতঃপর মেসার্স মাল্টিপল ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ইং তারিখে BIWTC হতে এক কোটি এগার লক্ষ টাকায় SCRAP হিসাবে কিনে নেয়। SCRAP জাহাজ কেনার পর একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘোষণাপূর্বক সেটি SCRAP হিসাবে বিক্রয়ের প্রচলিত বিধান থাকলেও এই কোম্পানিটি দীর্ঘ ৫ (পাঁচ) বছরের অধিককাল সময় কোন কারনে ফেলে রেখে দিল তা অনুসন্ধানের দাবি জানান তিনি।
তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- এই কোম্পানী বা তার Subsidiary সকল কোম্পানির মালিকানাধীন নৌযানসমূহ পুরাতন নৌযান ক্রয়পূর্বক IMO এবং নৌ নিরাপন্তার সকল বিধি ভঙ্গ করে এবং নতুন নৌযান হিসাবে রেজিষ্ট্রেশন করে বানিজ্যিকভাবে ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে কিছু অসাধু চক্রের মাধ্যমে সামান্য কিছু মেরামত করে এবং সরকারি সংস্থার সমূহকে বিভ্রান্ত করে তারা এই কাজ করে থাকে। তাদের পক্ষ থেকে থ্রি অ্যাংগেল মেরিন লিমিটেডকে এই ধরনের প্রস্তাব দেওয়া মাত্র তা প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং নৌযানটি আনডকিং করা হয়। এর কিছুদিন পরই তাদের নৌযানটি তারা রাতের অন্ধকারে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা বিল এবং ২টি Air Bag এর ক্ষতিপুরন প্রদান না করে নৌযানটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুরো বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক তথ্য গণমাধ্যমে তুলে ধরে, অসাধুচক্রটিকে আইনানুগভাবে শাস্তির আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের কোনো প্রতিষ্ঠান যাতে এ ধরনের চক্রের কবল আর না পড়ে, সেজন্য সবাইকে সর্তক থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন। সর্বপরি, কোম্পানির পাওনা প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা অবিলম্বে যাতে পেতে পারে, সে জন্যও সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন
থ্রি অ্যাংগেল মেরিন লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম।