সিটিজেননিউজ ডেস্ক ঃযে ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৬৫০, সে ঘটনায় আহতদের সংখ্যা যে হাজার ছাড়িয়ে যাবে তা অনেকটাই নিশ্চিত করে বলা যায়। তবে ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালের রেজিস্টারে মিলেছে ৪৩৯ জনের নাম। যারা কিনা সবাই গুরুতর আহত।
পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তর থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ-সহিংসতায় আহত ১৪৪ জন এখনো হাসপাতালে আছেন। তাদের মধ্যে ১০ জনের পা কেটে ফেলা হয়েছে। অপর একজনের হাত কাটতে হয়েছে।এই ১১ জনকে বাকি জীবন প্রতিবন্ধী হয়ে কাটাতে হবে।
জাকিরের বাঁ হাঁটুর ওপর থেকে কেটে ফেলেছেন চিকিৎসকেরা। বুলেটে হাড় ভেঙেছে, রক্তনালিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেন, জীবন বাঁচাতে পা কেটে ফেলা ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না। মোটা বড় ব্যান্ডেজ দিয়ে পা মুড়ে রাখা হয়েছে।
পঙ্গু হাসপাতালের পাশে রাস্তার ওপারে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। এই হাসপাতালে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩২ জন চোখে আঘাত পাওয়া রোগী ভর্তি ছিলেন। তাঁদের প্রত্যেকের চোখে পুলিশের ছোড়া ছররা গুলি লেগেছিল। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি, করছি। তার পরও দুই-তিনজনের ঝুঁকি অনেক বেশি। তাঁরা দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন কি না, তা এখনো বলা যাচ্ছে না।’
পায়ে, হাতে, চোখে বা শরীরের অন্য কোনো স্থানে গুলি লেগে আহত অনেকেরই এখনো চিকিৎসা শেষ হয়নি। রাজধানীর সাতটি সরকারি হাসপাতালে এ রকম ৪৩৯ রোগীর চিকিৎসা চলছে। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেলে ১৭৫ জন, পঙ্গু হাসপাতালে ১৪৪ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪১ জন, চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ৩২ জন, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৩০ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ জন এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে ১২ জন আছেন। এর বাইরে বেশ কিছু আহত ব্যক্তি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, যাঁদের পা কাটা গেছে, তাঁদের কৃত্রিম পা দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আছে। একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কৃত্রিম পা সংযোজনের বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রোগীদের ওষুধ দেওয়ারও উদ্যোগ নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম, পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলেন। হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার আগে নুরজাহান বেগম সাংবাদিকদের বলেন, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার সব খরচ সরকার বহন করবে। আর ফরিদা আখতার বলেন, হাসপাতাল থেকে ছুটি নেওয়ার পরও কারও কারও চিকিৎসার প্রয়োজন হবে। সেই প্রয়োজন মেটাতে প্রত্যেক রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।