সিটিজেন প্রতিবেদকঃ বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, রাজনীতির পরিবর্তন না হলে শুধু সরকার পতনের মধ্য দিয়ে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন হবে না। রাজনীতি যদি ঠিক না হয় তাহলে একটা নির্বাচন, একটা শাসন পরিবর্তন কখনো মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আনতে পারবে না।
রাজনীতি পরিবর্তনের দায়িত্ব শুধু রাজনীতিবিদদের নয়, এখানে জনগণের দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাই রাজনীতিবিদদের দুর্বৃত্তায়িত হওয়ার কতটুকু স্বাধীনতা দেবেন, সেটা আপনারা জনগণই নির্ধারণ করবেন। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুষ্ঠু ধারার রাজনীতির জন্য জনগণকে এটির পরিবর্তন করতে হবে।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘গণঅভ্যুত্থান- গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র: নাগরিক বিতর্ক’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভার আয়োজন করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদ।
রুমিন ফারহানা বলেন, একটা মানুষের ৮০০ বাড়ি থাকে বিদেশে, ১৪ বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে পাচার হয়ে যায়। এসব ঘটনা জেনে এত ঘৃণা লেগেছে যে, মানুষ এতটা লোভী হতে পারে। কতটা লোভী মানুষের কাছে আমরা আমাদের রাজনীতি নিয়ে গিয়েছি, ভাবতে অবাক লাগছে। এই রাজনীতির অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এটা গণঅভ্যুত্থান নাকি বিপ্লব এই বিতর্ককে আমি সুস্থ বিতর্ক হিসেবে দেখি। এখানে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে আক্রমণ করার কোনো সুযোগ নেই। এই আন্দোলন শুধু পাঁচ বছর পর পর সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয়, এটি ভোটের আন্দোলন নয়, নিজের পছন্দের সরকারকে বসানোর আন্দোলন নয়। তাই এটি গণঅভ্যুত্থান নাকি বিপ্লব, নির্বাচনের জন্য লড়াই নাকি রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তনের লড়াই, সেটা জনগণ তার সঠিক পথ বাছাইয়ের মধ্যে নির্ধারণ করে দেবে।
জুলাই আন্দোলন নিয়ে বিএনপির এ আইনজীবী নেতা বলেন, ২০১৮ সালে একটা গ্রাফিতি ছিল দেয়ালে দেয়ালে, রাষ্ট্র মেরামতের কাজ চলছে। তাই জুলাইয়ের এই আন্দোলন হঠাৎ ঘটে যাওয়া কিছু নয়। অনেক আগে থেকে সমাজের একটা অংশ ফ্যাসিবাদের টপ টু বটম পরিবর্তন চেয়েছে, রাষ্ট্র কাঠামোর পরিবর্তন চেয়েছে। তাই এটি শুধু দেড় মাসের আন্দোলন বলা যাবে না।
রুমিন ফারাহানা বলেন, আমাদের প্রত্যেকের ভেতরে শেখ হাসিনা আছে। গত ১৫ বছর ধরে আমাদের মধ্যে শেখ হাসিনার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফ্যাসিস্ট মনোভাব, স্বৈরাচারী মনোভাব সবসময় ছিল। মতের মিল না হলেই বিরোধী মতকে ট্যাগ দেওয়া আমাদের চিন্তার প্যাটার্ন হয়ে গেছে। এটা এখনো আছে।
লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান বলেন, শেখ হাসিনা যতদিন ছিলেন আমাদের মাঝে ইউনিটি ছিল। কিন্তু এখন আমাদের মাঝে মতানৈক্য দেখা যাচ্ছে। আমাদের বহুক্ষেত্রে হয়তো একমত হওয়া যাবে না। এই মতানৈক্যের কারণে দেশকে পেছনে ঠেলে দেওয়া যাবে না। ফ্যাসিবাদবিরোধী সবাই মিলে একপক্ষ হয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা একটা বিতর্ক তৈরি করে ফেলেছি- এটা বিপ্লব নাকি গণঅভ্যুত্থান। আমরা এখন এমন কোনো প্রত্যাশা যেন না করি, যেটা এখন পূরণ করা সম্ভব নয়। দীর্ঘমেয়াদে যে স্বৈরাচার আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকছে সেটা থেকে বের হতে হবে। আমাদের যদি নির্বাচন ব্যবস্থা চালু থাকে তাহলে ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে থাকবে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাসমিন রানা বলেন, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট দরকার। সেজন্য এমন একটি সংবিধান তৈরি করতে হবে, যে সংবিধান মানুষের হৃদয়ে থাকবে। মানুষের আশা-ভরসার স্থান হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের নাম থেকে গণপ্রজাতন্ত্রীর মধ্যে প্রজাতন্ত্র বাদ দিতে হবে। প্রজা একটু অবজ্ঞাবাচক শব্দ। প্রজা হওয়ার জন্য আমরা যুদ্ধ করিনি।
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাইফুল হক, আবু সাঈদ খান প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আহ্বায়ক শেখ আব্দুর নূর, অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের সদস্য সচিব বাবর চৌধুরী।