আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো ভারতের বিতর্কিত ধনকুবের গৌতম আদানির সাথে হওয়া দু’টি বড় চুক্তি বাতিল করেছেন। এক দিন আগেই ভারতের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘুষের পরিকল্পনা করেছিলেন এবং তা গোপন রেখে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করেছিলেন। নিউ ইয়র্কের একটি আদালতে এই অভিযোগ দায়ের করা হয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো ভারতের ধনকুবের গৌতম আদানির সঙ্গে হওয়া দুইটি বড় চুক্তি বাতিল করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটররা আদানির বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনার পর এই সিদ্ধান্ত এসেছে। তবে আদানি গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটরদের আনা ওই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে অস্বীকার করেছে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট রুটো তার ভাষণে বলেন, ‘যদি দুর্নীতির বিষয়ে নিশ্চিত প্রমাণ বা বিশ্বাসযোগ্য তথ্য আসে, আমি কঠোর পদক্ষেপ নিতে পিছপা হব না।’ তার এই বক্তব্যে সংসদে উপস্থিত জনতা চিৎকার করে সমর্থনও জানায়।
আদানি গ্রুপ কেনিয়ার প্রধান বিমানবন্দরে ১ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছিল। চুক্তি অনুয়ায়ী ৩০ বছরের জন্য তারা এটি পরিচালনা করবে। এ ছাড়া বিদ্যুৎলাইন নির্মাণের জন্য জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ৭৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও একটি চুক্তি ছিল।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বিমানবন্দর প্রকল্পের অধীনে নতুন রানওয়ে এবং জোমো কেনিয়াট্টা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে উন্নত যাত্রী টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনাও ছিল।
তবে এই চুক্তিগুলো কেনিয়ার মানুষ খুব একটা পছন্দ করেনি। অনেকেই দুর্নীতির আশঙ্কা করছিলেন। বিমানবন্দর চুক্তি নিয়ে গত সেপ্টেম্বর মাসে বিমানবন্দরকর্মীরা ধর্মঘট শুরু করেছিলেন। তাদের ধারণা, এই চুক্তির ফলে অনেক কর্মী চাকরি হারাতে পারেন।
তবে দেশটির জ্বালানিমন্ত্রী অপিও ওয়ানডায়ি গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদীয় কমিটিতে বলেছিলেন, ‘বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি বা ঘুষের ঘটনা ঘটেনি।
প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। বিশেষ করে, তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে বারবার ওঠা অভিযোগগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে। তিনি আরো জানান, তার সরকার এখন বিমানবন্দর ও জ্বালানি প্রকল্পের জন্য নতুন অংশীদার খুঁজতে কাজ শুরু করবে।
আদানি গ্রুপের অবস্থা খারাপ হতে থাকে নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চের বিতর্কিত এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর। এরপর গৌতম আদানির মালিকানাধীন বিভিন্ন কম্পানির শেয়ারের মূল্যে ধস নামে। গত বছর জানুয়ারিতে এক সপ্তাহেই প্রায় ২৫০০ কোটি ডলারের ব্যক্তিগত ধন-সম্পদ উধাও হয়ে গেছে আদানির।
বিনিয়োগ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ গত বছর তাদের প্রতিবেদনে আদানির বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘করপোরেট জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজির’ অভিযোগ আনে। আদানি এরপর হিনডেনবার্গ রিসার্চের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল। হিনডেনবার্গও পাল্টা জবাবে জানায়, তারা এ বিষয়ে আদালতে লড়াই করতে প্রস্তুত।
সূত্র : বিবিসি