হাফসা উত্তরা :
উত্তরার মেহেবুল হাসান (৩৭) ও তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার ইপ্তি (২৮) কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি হামলার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় জড়িত পুরো চক্রের পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- ১। মোঃ মোবারক হোসেন (২৫), ২। রবি রায় (২২), ৩। মো. আলফাজ মিয়া ওরফে শিশির (২২), ৪। সজীব (২০) ও ৫। মেহেদী হাসান সাইফ (২৪)।
থানা সূত্রে জানা যায়, উত্তরা পশ্চিম থানার একটি চৌকস টিম গতকাল মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) বিকেল ০৪.০০ ঘটিকায় আব্দুল্লাহপুর পশ্চিম পাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে রামদা দিয়ে ভিকটিমদের কুপিয়ে আহত করা আসামি আলফাজ মিয়া ওরফে শিশিরকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার হেফাজত থেকে ঘটনার সময় তাহার পরিহিত হালকা জলপাই রংয়ের একটি ফুলহাতা শার্ট জব্দ করা হয়। আলফাজের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) রাত ০২:০০ ঘটিকায় গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকা থেকে সজিবকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভিকটিমদের এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করা অপর এক আসামি মেহেদী হাসান সাঈফকে গাজীপুরের টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন মাজার বস্তি এলাকা থেকে আজ ভোর ৫:০০ঘটিকায় গ্রেফতার করা হয়। সাঈফের হেফাজত থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল ও ঘটনার সময় তার পরিহিত একটি শার্ট জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত আলফাজ মিয়া ওরফে শিশির ও মেহেদী হাসান সাইফের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তুরাগ নদীর পাড় থেকে আজ বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) সকাল ১০.০০ ঘটিকার সময় ঘটনায় ব্যবহৃত দুটি রামদা উদ্ধার করা হয়।
উত্তরা পশ্চিম থানা সূত্রে জানা যায়, সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রি.) রাত আনুমানিক ০৯.১৫ ঘটিকায় উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ সংবাদ পায় উত্তরা ০৭ নং সেক্টরের ০৯ নং রোডের বাসা নং-১০ এর সামনে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এক দম্পতিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাচ্ছে। এমন নৃশংস ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায় একজন স্ত্রী তার স্বামীকে সন্রাসীদের হামলা থেকে বাঁচাতে হাত জোর করে ক্ষমা চেয়েও রক্ষা পায়নি। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের টহল টিম তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পথচারীদের সহায়তায় ঘটনায় জড়িত মোঃ মোবারক হোসেন ও রবি রায়কে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় ভিকটিম নাসরিন আক্তার ইপ্তি বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) রাত আনুমানিক ০৯:০০ ঘটিকায় মেহেবুল হাসান ও নাসরিন আক্তার ইপ্তি দম্পতি উত্তরা পশ্চিম থানাধীন আমির কমপ্লেক্স থেকে কেনাকাটা করে বাসায় ফেরার সময় উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ০৭ নং সেক্টরের ০৯ নং রোডের বাসা নং-১০ এর সামনে পৌঁছে। এসময় উক্ত স্থানে তিন ব্যক্তি দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে বিকট শব্দ করে দ্রুত গতিতে এলোমেলোভাবে চালিয়ে যাওয়ার সময় একটি মোটরসাইকেল সামনে থাকা একটি রিকশাকে ধাক্কা দেয়। সে সময় রিকশায় চার বছরের একটি শিশু তার মায়ের সাথে ছিল। শিশুটির বাবা রিকশা থেকে নেমে মোটরসাইকেল চালক গ্রেফতারকৃত আসামি মোঃ মোবারক হোসেনের সাথে বাকবিতন্ডা শুরু করে। ঐ সময় রিকশার পিছনে থাকা ভিকটিম দম্পতি তাদের ঝামেলা করতে নিষেধ করে। সেসময় রিকশার যাত্রীরা চলে যায়। এ ঘটনায় মোটরসাইকেলে থাকা তিনজন মেহেবুল হাসানের সাথে তর্ক শুরু করে এবং এক পর্যায়ে তাকে মারপিট শুরু করে। এ সময় তারা বলতে থাকে “আমাদের চিনিস? আমরা কে?”। সে সময় ভিকটিম দম্পতি আশেপাশের লোকজনের সহযোগিতায় আক্রমণকারী একজনকে ধরে ফেলে ও তার মোটরসাইকেল আটক করে। এ সময় ফোন করে সে তার আরও কয়েকজন সহযোগীদের ডেকে নিয়ে আসে। তারা দেশীয় অস্ত্র রামদাসহ ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত জনসাধারণের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি করে রামদা দিয়ে মেহেবুল হাসানকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। এ সময় নাসরিন আক্তার ইপ্তি তার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তাকেও রামদা দিয়ে আঘাত করে। এতে উক্ত দম্পতি শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হয়। সংবাদ পেয়ে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের টহল টিম দ্রুততম সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জনগণের সহায়তায় মোবারক হোসেন ও রবি রায়কে গ্রেফতার করে। পুলিশ আহত দম্পতিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে তারা সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে। উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ সুত্রে জানা যায়, গ্রেফতার কৃতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।সুত্র ইনকিলাব