মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১০:২৮ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

পলাতক শক্তি আমাদের ঐক্য ভাঙতে চায়: প্রধান উপদেষ্টা

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫
  • ০ বার পঠিত

সিটিজেন প্রতিবেদক: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমাদের সামগ্রিক ঐক্য পলাতক শক্তির গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে। তারা এ ঐক্য ভাঙতে চায়। তিনি বলেন, তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একের পর এক মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে।

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) মহান স্বাধীনতা দিবস ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজবের যেন এক মহোৎসব চলছে। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একের পর এক মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে। অভিনব সব প্রক্রিয়ায় গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এক ছবির সঙ্গে অন্য ছবি জুড়ে দেওয়া হচ্ছে, ঘটনা একটা ছবি আরেকটা এরকম ফটোকার্ড বানিয়ে, অন্য দেশের ঘটনাকে এ দেশের ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় করে ফেলছে। যতই নির্বাচন কাছে আসবে, এর রূপ আরও ভয়ংকর হতে থাকবে। কারা এর পেছনে আছে, কেন আছে তা আপনাদের সবারই জানা আছে।

তিনি বলেন, আমরা এই গুজব ও মিথ্যা তথ্যের প্রচারণা রোধ করতে জাতিসংঘের সহযোগিতা চেয়েছি। জাতিসংঘ মহাসচিব এর মোকাবিলায় আমাদের সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়ে গেছেন। জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম পর্ব সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। প্রথম পর্বের সমাপ্তির মধ্য দিয়ে অভ্যুত্থানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হলো। সবসময় মনে রাখতে হবে আমরা কিন্তু যুদ্ধাবস্থায় আছি। ‘গুজব’ হলো এই জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে পরাজিত শক্তির মস্ত বড় হাতিয়ার। গুজব দেখলেই গুজবের সূত্রের সন্ধান করতে থাকবেন। গুজবকে অবহেলা করবেন না। বহু অভিজ্ঞ সমর বিশারদ এই গুজবের পেছনে দিনরাত কাজ করছে, সীমাহীন অর্থ এর পেছনে নিয়োজিত আছে। এর মূল লক্ষ্য জুলাই অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করা। আমরা তাকে ব্যর্থ হতে দেবো না।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দেশের নারীরা দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে বহু বছর ধরে অনেক বাধা পেরিয়ে একটু একটু করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও এ দেশের নারীরা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক বৈষম্যের শিকার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত যত আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে, তার মধ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল সবচাইতে বেশি। গণ-অভ্যুত্থানে নারীরা দুঃসাহসিক ভূমিকা রেখেছে। পুরোনোকে দূরে ঠেলে দিয়ে নতুনের ভিত্তি স্থাপনের প্রতিজ্ঞা নিয়েছে। তারা ব্যাপক সংস্কারের কথা বলেছে। সর্বত্র নারীদের ভূমিকা আরও জোরালো করার কথা বলেছে।

তিনি বলেন, আমি মনে করি, জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের প্রেক্ষিত বদলে দিয়েছে। জুলাইয়ের পর নারীদের অবস্থান ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন হবে সেটাই আমরা চাই। আমরা বাংলাদেশ নিয়ে নতুন করে ভাবতে চাই। আর এই নতুন ভাবনায় নারীদের অবস্থান উচ্চতম পর্যায়ে অগ্রাধিকার পাক সেটাই আমরা চাই। পরিবারের সব সদস্য, পাড়া-প্রতিবেশী, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, স্কুল—আপনারা আপনাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে ছেলে শিশু ও মেয়ে শিশুর মধ্যে যেন কোনও বৈষম্য না সৃষ্টি না হয়, তা নিশ্চিত করুন। আসুন, নতুন বাংলাদেশে সবাই মিলে শিশুদের জন্য সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করি।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া নারীরা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ উল্লেখ করে তিনি বলনে, দেশে বিরাজমান বৈষম্যগুলো চিহ্নিত করে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও বৈষম্য নিরসনে আমাদের প্রত্যেককে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা, নারীকে খাটো করে রাখার প্রবৃত্তি যারা ধারণ করে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। আধুনিক প্রযুক্তি সব প্রকার বাধা ভেঙে দেওয়ার মহাশক্তি আমাদেরকে দিয়েছে। সে বাধা যত শক্তই হোক, যত উঁচুই হোক— সব দূরত্ব ঘোচানোর জন্য প্রযুক্তিকে অবশ্যই যেন আমরা ব্যবহার করতে আরম্ভ করি।

তিনি বলেন, নারীদের সুরক্ষায় পুলিশ হটলাইন নম্বর চালু করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে শর্ট-কোড চালু করা হচ্ছে। কল-টেকার হিসেবে শতভাগ নারী কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে; যেন নির্দ্বিধায় কথা বলা যায়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন হয়েছে। এসব মামলার তদন্ত ও বিচারের সময় কমিয়ে আনা হয়েছে, বিচার বিলম্বে বাধা দূর করা হচ্ছে। ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ডিএনএ ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে। খুব দ্রুতই বিশেষ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নতুন অনেক বিচারক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ভিকটিম শিশুরা যাতে দ্রুত বিচার পায়— সেজন্য আলাদাভাবে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের বিধান রাখা হচ্ছে।

প্রফেসর ইউনূস বলেন, নারী অধিকারের পাশাপাশি একইরকম গুরুত্বের সঙ্গে মনে রাখতে হবে সংখ্যালঘুদের নাগরিক অধিকার। সমতল ও পাহাড়ের জাতিগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার। কারও কোনও নাগরিক অধিকারকে অবহেলা করলেই এ জাতির জন্য মহাসংকট সৃষ্টি করবে। নাগরিক হিসেবে আমরা কেউ যেন অন্য নাগরিকের অধিকার হরণের দায়ে অভিযুক্ত হতে না পারি, সে ব্যাপারে আমাদের নিশ্চিত থাকতে হবে। তাহলেই সত্যিকার নতুন বাংলাদেশ জন্মলাভ করবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com