সিটিজেন প্রতিবেদক: ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা সৈনিক ও কবি আহমদ রফিকের মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তার মরদেহটি ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) কফিন শোকযাত্রার মাধ্যমে ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মরদেহ নেওয়া হয়। জানা যায়, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ ও গবেষণার জন্য আহমদ রফিক তার মরণোত্তর দেহ দান করে গেছেন।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১২ মিনিটে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর।
দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন আহমদ রফিক। কিডনির সমস্যা ছাড়াও একাধিক মাইল্ড স্ট্রোকের শিকার হন তিনি। চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তাকে ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় ২৯ সেপ্টেম্বর বারডেমে স্থানান্তর করা হয়। তিনি তখন থেকেই সংজ্ঞাহীন ছিলেন এবং অক্সিজেন সাপোর্টে ছিলেন।
১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। একাধারে কবি, গবেষক, প্রাবন্ধিক, ভাষাসংগ্রামী ও রবীন্দ্রচিন্তাবিদ হিসেবে তিনি দুই বাংলাতেই সমাদৃত ছিলেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকা এই মনীষী একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। কলকাতার টেগর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাকে ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধিতে ভূষিত করে।
তার রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, সমাজ ভাবনা- বহুমাত্রিক চিন্তাধারায় নির্মিত ছিল তার লেখনী।
আহমদ রফিক নিউ ইস্কাটনের গাউসনগরের একটি ভাড়া বাসায় একাই বসবাস করতেন। ২০০৬ সালে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি নিঃসন্তান ও একাকী জীবনযাপন করতেন। তার একমাত্র সঙ্গী ছিল বই- নিজের লেখা ও সংগ্রহ করা অগণিত বইপত্র।
২০১৯ সাল থেকে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে থাকে, ২০২৩ সাল নাগাদ প্রায় দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েন। ২০২১ সালে পড়ে গিয়ে পা ভেঙে যাওয়ার পর তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটে।
উল্লেখ্য, ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রাবন্ধিক ইতিহাসবিদ এই লেখক শতাধিক গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বহু সম্মাননা।