দলের প্রাণভোমড় মাশরাফি বিন মর্তুজা, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান কে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ‘পঞ্চপাণ্ডব’ বলা হয়ে থাকে। পঞ্চপাণ্ডবদের মধ্যে অন্যতম মাহমুদউল্লাহ দীর্ঘদিন ধরেই ছন্দে নেই।
সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপের পর লঙ্কায় তিনি ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও সুবিধা করতে পারচেণ না। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডেতেও ব্যর্থ তিনি। বলা যায় তিনি বাজে ধারাবাহিকতার মধ্যদিয়ে যাচ্ছেন। চরমভাবে ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া এই অভিজ্ঞ টাইগার ক্রিকেটারকে নিয়ে এবার বোমা ফাটাল ক্রিকেট বিষয়ক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ।
ভারতীয় এই ওয়েবসাইটি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে প্রকাশিত তাদের এক প্রতিবেদনে বলছে, বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পর মাহমুদউল্লাহে দল থেকে বাদ দিতে বলেছিলেন বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান!
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে ১ টিতে ফিফটি করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। নিউজিল্যান্ড সফর থেকেই কাফ মাসলের চোটে ভুগছিলেন। বিশ্বকাপে তাই তার কাছ থেকে বোলিং সার্ভিস পায়নি টিম বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন তিনি।আফগানিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ের সময় চোট পান মাহমুদউল্লাহ। এ কারণে ভারতের বিপক্ষে তিনি খেলতে পারেননি।
শ্রীলঙ্কা সিরিজে হয়তো বাদই পড়তে হতো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। তবে সাকিব ও লিটন এই দুজন সিরিজে না থাকায় আরেকটি সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।
রবিবার (২৮ জুলাই) শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে নিজেকে প্রমাণ করার দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন। ৫২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে দল যখন বিপদে তখন তিনি হাল ধরতে পারতেন। কিন্তু মাত্র ৬ রান করে ফিরেছেন মাহমুদউল্লাহ। এই ম্যাচে একটি ক্যাচও ছেড়েছেন। আগের ম্যাচেও মাত্র ৩ রান করেন তিনি। অবশ্য দীর্ঘদিন পর ১ ওভার বোলিং করে দিয়েছিলেন ৪ রান।
ক্রিকবাজ তাদের প্রতিবেদনে বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে ড্রেসিংরুমের সমর্থনও হারিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। নিজস্ব সূত্রের বরাদ দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহর ৪১ বলে ২৮ রানের অকার্যকর ও বিস্ময়কর ইনিংসটির পরও শুধুমাত্র নিজের জেদের বসে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা তাকে দলে রাখেন। এরপর থেকে সাকিব অধিকাংশ ম্যাচেই টিম প্ল্যানিংয়ের সময় দূরে দূরে থেকেছেন।
‘সাকিবের মতে বিশ্বকাপের তৃতীয় ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ জয়ের জন্য কোনো অভিপ্রায় দেখায়নি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিতে ২৮ বলে ৪১ রান করেন মাহমুদউল্লাহ, যখন শেষ ২০ ওভারে ১৯০ রান প্রয়োজন ছিল। সেই সময় ড্রেসিংরুমের সবার মধ্যে বিশ্বাস ছিল ম্যাচটা জেতা সম্ভব। কিন্তু মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিংয়ে কখনো সেই লক্ষ্য ফুটে ওঠেনি। আর সেটি ভালোভাবে নেননি সাকিব।’ ক্রিকবাজকে এমনটাই জানিয়েছে তাদের নিজস্ব সূত্র।
ক্রিকবাজ আরও বলছে, ড্রেসিংরুমেও সতীর্থদের কাছে সমর্থন পাচ্ছিলেন না মাহমুদউল্লাহ। আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজের পর থেকেই সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে চলেছেন এই ৩৩ বছর বয়সী। এমনকি নিজের ব্যাটিং পজিশন নিয়েও অসন্তুষ্ট ছিলেন ২০১৫ বিশ্বকাপে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি করা এই ক্রিকেটার। বিশ্বকাপে ব্যাটিং অর্ডারে নেমে গিয়ে ছয় নম্বরে ব্যাট করেছেন মাহমুদউল্লাহ।কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন আরও ওপরের দিকে ব্যাট করতে।
সূত্রের বরাত দিয়ে ক্রিকবাজ এও বলছে, বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফিফটি করে ফেরার পর মাহমুদউল্লাহ নাকি বেশ বাজে ব্যবহার করেছিলেন সতীর্থদের সঙ্গে। ঘটনা সত্য হলে দলের ভেতরে এক রকম কোন্দল ছিল এটা বলাই যায়। তবে আপাতত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যে দলে জায়গা হারানোর দিকেই এগিয়ে চলেছেন এটা প্রায় নিশ্চিত। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আরও ১টি ম্যাচ বাকি। কিছু কি করতে পারবেন এই ম্যাচে? এটা এখন দেখার অপেক্ষার টাইগার ক্রিকেটপ্রেমীরা।