নিজস্ব প্রতিবেদক, সিটিজেন নিউজ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়কে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন । ‘খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের খুলনা শহরাংশ চার লেনে উন্নীতকরণ’ নামের একটি প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে এ নির্দেশ দেন তিনি।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়।
সভায় আরও বিভিন্ন বিষয়ে অনুশাসন দিয়েছেন বলে একনেক পরবর্তী ব্রিফিংয়ে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব নূরুল আমিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ‘খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের খুলনা শহরাংশ চার লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় কিছু ফুটেজ দেখানো হয়। এতে দেখা গেছে সড়কে যানবাহন এলোপাতাড়িভাবে রাখা।
ফুটেজ দেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেখেন, রাস্তা কিন্তু অনেক বড়। কিন্তু আমাদের অভ্যাস খারাপ হওয়ায় গাড়িগুলো কিভাবে রাখা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সড়কের শৃঙ্খলা ফেরানোর নির্দেশ দেন।
পাশাপাশি সড়ক রক্ষার্থে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পণ্যবাহী কোনো যানবাহন বা ট্রাক যাতে ওভারলোড হয়ে সড়কে না ওঠে সেজন্য সংশ্লিষ্টদের খেয়াল রাখতে হবে।
সড়কের নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। একই ধরনের প্রকল্প যেন অনেকে বাস্তবায়ন না করে এ বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে।
এখন থেকে দেশের সব সড়কে ড্রাইভার-হেলপারদের জন্য সড়কের পাশে আধুনিক বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হবে। আমরা চাই যাতে কোনো চালক একটানা ৫ ঘণ্টার বেশি গাড়ি না চালান।
অনুশাসন দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে রাস্তার পাশে গাছ লাগাতে হবে। বিশেষ করে একনেকে অনুমোদন পাওয়া খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা সড়কে বাঁশজাতীয় গাছ লাগাতে হবে।
পাহাড়ি এলাকায় পরিচিত যেসব ছোট ছোট ঝোপজাতীয় বাঁশ দেখা যায় সেগুলো লাগাতে হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে জলাধার তৈরি করতে হবে।
এছাড়া গ্রাম পর্যায়ের হাসপাতালে যেতে না চাওয়ায় চিকিৎসকদের প্রতি আবারও ক্ষোভ, বিরক্তি ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একনেক সভায় ‘কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ ও ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন, মানিকগঞ্জ’ প্রকল্পের প্রসঙ্গ এলে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়, সেখানেও চিকিৎসকরা যেতে চান না। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ডাক্তার আমরা দিই, কিন্তু ডাক্তার যেতে চান না।
এজন্য প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা তো আমাদের চেষ্টা করতে হবে মিটমাট করার জন্য। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, ডাক্তাররা যেখানে চাকরি করেন, সেখানে প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করলে তবুও হয়তো কিছুটা ভালো হতো। যখন চাকরি করেন এক জায়গায়, প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করেন আরেক জায়গায় বা পার্টটাইম পড়ান আরেক জায়গায়, তখন তারা হাসপাতালে থাকতে পারেন না। দুঃখের সঙ্গে, বিরক্তির সঙ্গে, ক্ষোভের সঙ্গে, অভিমানের সঙ্গে কথাগুলো বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
৮ প্রতিষ্ঠানকে ১৪০ কোটি টাকা অনুদান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার আট প্রতিষ্ঠানকে ১৪০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রী গণভবনে এসব প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুদানের চেক তুলে দেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্টকে ২৫ কোটি টাকা করে অনুদান দেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতি জাদুঘরকে ১৫ কোটি, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালকে ১০ কোটি এবং ইমাম ও মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টকে ১০ কোটি টাকা অনুদান দেন।
এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টকে পাঁচ কোটি টাকা অনুদান দেন বলে প্রেস সচিব জানান।