শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৪ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান
সংবাদ শিরোনাম ::

সন্ন্যাসী থেকে কোটিপতি

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
  • ২৬৯ বার পঠিত

অনলাইন ডেস্ক, সিটিজেন নিউজ: পরপর বেশ কিছু দুঃখজনক ঘটনার জন্য অ্যান্ডি পাডিকোম্বের জীবন সম্পূর্ণ বদলে যায়। তার বয়স যখন ২২ তখন লন্ডনের একটি পানশালার বাইরে বন্ধুদের নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। সে সময় এক মদ্যপ গাড়িচালক তার বন্ধুদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দিলে তার দুই বন্ধু মারা যান।

এই ঘটনার কয়েক মাস পরেই তার সৎবোন সাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যায়। তার কিছুদিন পরেই অপারেশনের সময় মারা যায় তার সাবেক প্রেমিকা। সে সময় অ্যান্ডি পড়াশোনা করছিলেন। কিন্তু টানা কয়েকটি ঘটনার শোক সইতে না পেরে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি।
জীবন পুরোপুরি পরিবর্তন করার জন্য তিনি হিমালয়ে গিয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষু হওয়ার দীক্ষা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন। পরের ১০ বছর ভিক্ষু হিসেবে জীবনযাপন করেন অ্যান্ডি। ভ্রমণ করেন এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে। কখনও কখনও দিনে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্তও ধ্যান করতেন তিনি।

অ্যান্ডি বলেন, সবকিছু আবার সহজভাবে মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে ধ্যান তাকে সাহায্য করেছে। তিনি বলেন, ধ্যান আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন এনেছে। ধ্যান তাকে নিজের বিষয়ে কম চিন্তা করে অন্যান্যদের সুখের জন্য চিন্তা করতে শিখিয়েছে বলে জানিয়েছেন ৪৬ বছর বয়সী অ্যান্ডি।

তবে তার বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যরা শুরুর দিকে তাকে নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন। অ্যান্ডি বলেন, তাদের একজনও জানতো না যে কীভাবে এ বিষয়টি সামাল দেয়া যায়। কিন্তু তবুও প্রত্যেকে আমাকে সমর্থন ও সাহস দিয়ে গেছেন।

২০০৫ সালে যুক্তরাজ্যে ফিরে এসে ধ্যান বা মেডিটেশনে সহায়তা করার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেন তিনি। কিন্তু যুক্তরাজ্যে সে সময় মেডিটেশনের তেমন একটা চল ছিল না। তিনি বলেন, ধ্যানের সময় যে ভঙ্গিতে কথা বলা হয়, তা নিয়ে আপত্তি ছিল অনেকের। আবার কিছু মানুষের ধ্যান করার সময়ও ছিল না। আর তারা জানতোও না যে এটা কীভাবে করা যায়।

লন্ডনে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মেডিটেশনের প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করেন অ্যান্ডি, যেখানে অতিরিক্ত কাজের চাপে থাকা পেশাজীবীদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ক্ষেত্রে সাহায্য করার চেষ্টা করতেন তিনি।

বর্তমানে তিনি এবং তার সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড পিয়েরসন জনপ্রিয় চিকিৎসা বিষয়ক অ্যাপ হেডস্পেস পরিচালনা করেন। এটা বিশ্বজুড়ে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি বার ডাউনলোড করা হয়েছে এবং যাদের বার্ষিক আয় ১০ কোটি ডলারেরও বেশি বলে ধারণা করা হয়।

৩৮ বছর বয়সী রিচার্ড ২০০৫ সালে চাকরি করতেন। জীবন ও কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সহায়তা নিতে অ্যান্ডির কাছে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, অ্যান্ডির সাথে যখন আমার পরিচয় হয় তখন আমি বেশ মরিয়া ছিলাম। আমি সামাজিকভাবে টানা দুশ্চিন্তায় ভুগতাম। এটা ভীষণ সমস্যা তৈরি করতো। আমার বন্ধুবান্ধব ছিল না যাদের সাথে ওই সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব হতো।

তিনি বলেন, প্রথম সেশনের পরই আমি বুঝতে পারি আমার মাথায় আসলে কতগুলো চিন্তা রয়েছে এবং আমার জীবন কতটা ছন্নছাড়া। আমার যে ওই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার রাস্তা রয়েছে, তা বুঝতে পেরেও আমি বেশ উত্তেজিত ছিলাম।

রিচার্ড যখন বুঝতে পারেন যে ধ্যান করে কী পরিমাণ লাভ হয়েছে তার, তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে অ্যান্ডির সাথে এই ব্যবসায় যোগ দিতে এবং সবাইকে এ বিষয়ে জানাতে হবে।

রিচার্ড বলেন, দক্ষতা অদল-বদলের মতো একটি বিষয় ছিল সেটা। সে আমাকে ধ্যান করা শেখায় আর আমি তার ব্যবসা মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য কয়েকটা বুদ্ধি দেই তাকে। ২০১০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করা শুরু করে দেন তারা।

ধ্যানের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করার পাশাপাশি দলগতভাবে মেডিটেশনের সেশনও পরিচালনা করেন তারা।আয়ের টাকা এবং বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া সাহায্য নিয়ে হেডস্পেস অ্যাপের প্রথম ভার্সন বাজারে ছাড়ে তারা। এতে ১০ মিনিট দীর্ঘ ধ্যানের নির্দেশাবলী সংযুক্ত বেশ কিছু ফাইল ছিল।

ব্যবসার শুরুতেই ভাগ্য সহায় হয় তাদের। যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকা এক শনিবারে তাদের প্রতিটি কপির সাথে হেডস্পেসের একটি করে পুস্তিকা সংযোজন করে। ভার্জিন আটলান্টিক এয়ারলাইন্সও হেডস্পেসের মেডিটেশনের অ্যাপটি তাদের প্লেনের বিনোদন বিভাগে যুক্ত করে। যার ফলে অ্যাপটি দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় এবং ডাউনলোডের হার বেড়ে যায়।

বর্তমানে এই অ্যাপ ব্যবহার করতে মাসে প্রায় ১০ পাউন্ড অর্থ ব্যয় করতে হয়। অ্যাপে নির্দেশনাগুলো দেয়া হয়েছে অ্যান্ডির কণ্ঠ ব্যবহার করে। তিনি বলেন, শুরুর দিকে এটি শুধু আমাদের প্রকল্প ছিল। কেউ আমাদের টাকা দিতো না, তাই আমরা বন্ধুদের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য চেয়ে নিতাম। এক বন্ধু রেকর্ডিং স্টুডিও ব্যবহার করতে দেয় বিনামূল্যে, আরেক বন্ধু অফিস দেয় কোনো অর্থ না নিয়ে।

তিনি বলেন, কিছু মানুষ আমাদের চিন্তাকে বিশ্বাস করেছে ও সম্মান করেছে। কেউ কেউ তাদের আগের চাকরির চেয়ে কম বেতনে আমাদের সাথে কাজ করেছে। তাদের প্রতি আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।

২০১৩ সালে রিচার্ড ও অ্যান্ডি ব্যবসার কেন্দ্র সরিয়ে লন্ডন থেকে লস অ্যাঞ্জেলসে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন থেকে হেডস্পেসের সদর দপ্তর লস অ্যাঞ্জেলসে রয়েছে। তিনি বলেন, লন্ডনকে আমার ভালোবাসি না তা নয়। কিন্তু আমাদের দু’জনেরই স্বপ্ন ছিল ক্যালিফোর্নিয়ায় জীবন কাটানোর। আমরা সার্ফিং ও পাহাড়ে হাইকিং করতে ভালোবাসি, আর আমাদের দু’জনের পরিবারও খুশি।

শুরুতে নিজেদের অর্থায়নে পরিচালিত হলেও, ২০১৪ সাল থেকে ব্যবসা ও অ্যাপের কার্যক্রম বড় করার উদ্দেশ্যে বাইরের বিনিয়োগ গ্রহণ করা শুরু করে হেডস্পেস। বর্তমানে সাড়ে ৭ কোটি ডলার লগ্নি করা রয়েছে হেডস্পেসে, যদিও সিংহভাগ মালিকানা অ্যান্ডি ও রিচার্ডের হাতেই।

শুরুতে অ্যান্ডি ও রিচার্ড দু’জনই ব্যবসার সব অংশের দেখভাল করতেন। কিন্তু ব্যবসা বড় হওয়ার পর থেকে তারা কাজ ভাগ করে নেন। প্রধান নির্বাহী হয়ে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ও তিনশ কর্মীর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নেন রিচার্ড।

অ্যান্ডির মূল কাজ এখনও অ্যাপের সম্প্রসারণের বিষয় চিন্তা করা এবং নেপথ্য কণ্ঠ দেয়া। হেডস্পেস বর্তমানে শুধু একটি অ্যাপ নয়। তাদের তিনশোর বেশি ব্যবসায়িক ক্লায়েন্ট। এসব প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও কর্মীদের ধ্যান করতে সাহায্য করেন তারা।

হার্ভার্ড ও স্ট্যানফোর্ডসহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের সাথে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন গবেষণায় সহায়তা করছে তারা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com