ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতে এক্সাভেটর (ভেকু) ও ট্রলি গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংসের প্রতিবাদে দুই ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে গাড়ির মালিক ও শ্রমিকরা।
রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের গেইটের সামনে অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কর্মরত মাটি শ্রমিক, ট্রলির চালক, শ্রমিক, এক্সাভেটরের চালক, চালকের সহকারী (হেলপার) ও ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির মালিক প্রায় দুই শতাধিক মানুষ অংশ নেন।
এসময় বিক্ষোভকারীরা ইউএনও’র অপসারণ ও বিচার দাবি করে বার বার শ্লোগান দিতে থাকেন। এছাড়া ব্যাংক ঋণের টাকায় কেনা তাদের বৈধ ও মূল্যবান এক্সাভেটর মেশিন পুড়িয়ে ধ্বংস করার ঘটনায় যথাযথ ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তারা।
জানা যায়, ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পৃথক দু’টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার করে দুটি এক্সাভেটর (ভেকু) আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ও তিনটি মাটি টানা ট্রলি বিনষ্ট করেন। এ ঘটনার জেরে ইউএনও’র অপসারণ ও বিচার দাবি চেয়ে রবিবার দুপুরে উপজেলা পরিষদের সামনের স্টেশন সড়ক অবরোধ করে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ চলাকালে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় বিক্ষোভকারীরা উপজেলা পরিষদের মূল ফটকও অবরুদ্ধ করে রাখেন। প্রায় ঘন্টাখানেক পর ঘটনাস্থলে পুলিশ আসলেও অবরোধকারীদের সরাতে ব্যর্থ হয়। পরে দুপুর পৌঁনে দুইটার দিকে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ মোতুর্জা আলী তমাল ও সাধারণ সম্পাদক প্রান্ত সিদ্দিকীর সমন্বয়ে বিক্ষোভকারী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত এক্সাভেটরের মালিক হাসামদিয়া গ্রামের আবুল খায়ের শেখ জানান, আমি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে ও ধার-দেনা করে গত বছর ভেকুটি কিনেছিলাম। এখনও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আমি প্রায় ১৫ লাখ টাকা ঋনের দেনা আছি। এ অবস্থায় আমার বৈধ খননযন্ত্রটি পুড়িয়ে ধ্বংস করায় অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
তেলজুড়ি গ্রামের ট্রলি মালিক মো. তানজেল মোল্যা বলেন, এ ভাবে গাড়ি বিনষ্ট করে ইউএনও আমাদের পেটে লাথি দিয়ে রুটি রুজির পথ বন্ধ করেছেন। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার ও ক্ষতিপূরণ চাই।
বোয়ালমারী থানার উপ-পরিদর্শক মো. কামরুল হোসেন বলেন, উপজেলা পরিষদের সামনে সড়ক অবরোধ করে প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করে পুড়িয়ে দেওয়া ভেকুটি ও ট্রলি গাড়ি ধ্বংসের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দাবি করেন বিক্ষোভকারী।
এবিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানান, ‘কিছুদিন আগে থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে মাটি কাটায় ভেকু ও ট্রলি গাড়ির মালিক-চালকদের জরিমানা করলেও তারা এসব কাজে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। সে কারণে লোকজনকে আরো সচেতনতা করার জন্য বৃস্পতিবার ভ্রাম্যমাণ আদালতে জব্দকৃত এক্সাভেটর ও ট্রলি বিনষ্ট করা হয়। তবে আমি আইনের মধ্যে থেকেই অবৈধভাবে মাটি কাটার কাজে ব্যবহৃত জব্দকৃত খননযন্ত্র ও ট্রলি গাড়ি বিনষ্ট করেছি। আইন না বুঝে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন একটি মহল।’
তবে এ ব্যাপারে ফরিদপুর জজ আদালতের আইনজীবি গাজী শাহিদুজ্জামান লিটন জানান, ‘২০০৯ সালে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের জারি করা মোবাইল কোর্ট নির্দেশিকার অধ্যায় ৭-এ বলা হয়েছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক জব্দকৃত পচনশীল বা বিপদজনক বস্তু বিলিবন্ডেজ (ডিসপোজাল) করতে পারবেন। তবে জব্দকৃত আলামত বা মালামাল পচনশীল, বিপদজনক বা ধ্বংসযোগ্য না হলে তা কোন জিম্মাদারের জিম্মায় প্রদান করা যেতে পারে।’