ফরিদপুরের প্রতারক সিকদার লিটনের বিরুদ্ধে দুটি মামলায় অভিযোগ গঠন করেছে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। মঙ্গলবার সাইবার ট্রাইবুনালের বিচারক আস সামস জগলুল হোসেন আসামির উপস্থিতিতে চার্জ গঠনের আদেশ দেন।
হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, অর্থআত্মসাৎ, প্রতারণা এবং সাইবার অপরাধে দেশের বিভিন্ন জেলায় অর্ধডজনের বেশি মামলার আসামি সিকদার লিটন। ফরিদপুর, খুলনা, পাবনা ও ঢাকার আদালতে মামলাগুলোর বিচার চলছে।
একাধিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন সিকদার লিটন। তবে বন্ধ ছিল না প্রতারণা। ছদ্মবেশে নানাভাবে মানুষকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে অবৈধভাবে অর্থআত্মসাতের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মামলাও হয়েছে এসব ঘটনায়। পরে ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর র্যা ব ফরিদপুরের ভাঙ্গায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে তাকে।
মঙ্গলবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল সিকদার লিটনের বিরুদ্ধে যে দুটি মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে তার দুটোই ফেসবুকে এসে অশালীন মন্তব্য ও কুৎসা রচনার অভিযোগে। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সুফিয়া বেগম রোজীকে নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে অশালীন ও আপত্তিকর মন্তব্য করায় মামলা করা হয় লিটনের বিরুদ্ধে। ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট সুফিয়া বেগম বাদি হয়ে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। অপর মামলাটি দৈনিক ঢাকা টাইমস সম্পাদকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে কুৎসা রটনা, মিথ্যাচার ও ভাবমূর্তি নষ্টের অপরাধে করা হয়েছে। ২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আকিবুর রহমান বাদি হয়ে এই মামলা করেন। অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে দুটো মামলাতেই বিচার শুরু হলো সিকদার লিটনের। আগামী ৯ জুন থেকে বিচার শুরু হবে। প্রথম দিনই মামলার স্বাক্ষ্য নেওয়া হবে।
অর্থআত্মসাতের ঘটনায় পাবনায় মামলা:
ব্যবসায়ীর সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে সিকদার লিটনের বিরুদ্ধে পাবনা জেলা আদালতে একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ব্যবসায়ীক অংশীদার হিসেবে পাবনার একজনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেন প্রতারক লিটন। পরে ওই ঘটনায় ভূক্তভোগী ব্যবসায়ী ইন্দ্রজিৎ আমিনপুর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলাটি থানা পুলিশ ছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় দুদক ওই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। বর্তমানে মামলাটির বিচারকাজ শেষপর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া পাবনা জেলার আটঘরিয়া থানায় প্রাণনাশের হুমকি ও চেষ্টার অভিযোগে আরও একটি মামলা রয়েছে লিটনের বিরুদ্ধে।
প্রতিবেশী নারীকে হত্যা চেষ্টায় মামলায় আসামি লিটন:
লিটনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তারই প্রতিবেশি একজন নারী আঞ্জিরা বেগম। ওই ঘটনায় তিনি একটি মামলা করেন। ওই মামলায় ফরিদপুর আদালতে বিচার কাজ প্রায় শেষ। এখন রায় ঘোষণার অপেক্ষা। মামলার অভিযোগপত্র ও বাদি সূত্রে জানা যায়, প্রতিবেশীকে মামলা দিয়ে ফাঁসানোর ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন সিকদার লিটন। কিন্তু আঞ্জিরা বেগম সেই টাকা দিতে অস্বীকার করায় লিটন তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেন। ওই ঘটনায় তিনি ফরিদপুরে মামলা করেন আঞ্জিরা।
খুলনাতেও আছে প্রাণনাশের মামলা:
খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় সিকদার লিটনের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ১৯ মার্চ চাঁদা দাবি ও প্রাণনাশের একটি মামলা করা হয়।
চাকরি দেওয়ার নাম করে অর্থ আত্মসাত:
২০১৮ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন- বিআইডব্লিউটিসিতে চাকরি দেওয়ার আশ্বাসে এক তরুণের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নেয় প্রতারক সিকদার লিটন। দুই বছরেও চাকরি কিংবা টাকা কিছুই ফেরত পাননি ভুক্তভোগী নাজমুল। টাকা চেয়ে দীর্ঘদিন প্রতারক লিটনের কাছে ধরনা দিলেও টাকা তো দুরে থাক এখন উল্টো হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাকে। ভুক্তভোগী নাজমুল গরু বিক্রি ও জমি বন্ধক রেখে লিটনকে টাকা দেয়। কিন্তু সেই টাকা আর তিনি ফেরত পাননি।