সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৪ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

জ্বালানি সংকট: ইউরোপের অবস্থা কতটা নাজুক?

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২২
  • ১১১ বার পঠিত

আসন্ন শীত মৌসুমে বড় ধরনের জ্বালানি সংকটে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে ইউরোপ। এরই মধ্যে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে গ্যাসের দাম, কমছে সরবরাহ। চলমান এই জ্বালানি সংকট এবং এর জেরে আগামী কয়েক মাসে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা নিয়ে শঙ্কা এখন গোটা ইউরোপজুড়ে।

শীত যত ঘনিয়ে আসছে, ইউরোপে ততই বাড়ছে জ্বালানির দাম। এর অন্যতম বড় কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। কারখানা চালু রাখা কিংবা বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে শীতের সময় ঘর উষ্ণ রাখা, এসব ক্ষেত্রে বছরের পর বছর ধরে রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। তবে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনকে সহায়তা দেয়ায় গ্যাস সরবরাহ ‘স্থগিত’ রেখেছে মস্কো।

পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া এত দিন ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয় ব্যবহারের প্রায় ৪০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করলেও সেই রফতানি এখন ৭৫ শতাংশ কমে গেছে। তবে দেশটি এখনও ইউক্রেন, তুরস্ক ও কৃষ্ণ সাগর দিয়ে তুর্কস্ট্রিম পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস রফতানি করছে। যদিও যে কোনো সময় তা পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রাশিয়া বলছে, মস্কোর ওপর পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ‘স্বাভাবিক পরিণতি’ এটি।

ক্রেমলিনের এমন পদক্ষেপের পর ইউরোপের দেশগুলো আরও তরল প্রাকৃতিক গ্যাস কিনে সরবরাহে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করেছে। একইসঙ্গে চাহিদা কমিয়ে জ্বালানি সঞ্চয়ের ওপরও জোর দিচ্ছে তারা।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সদার স্কুল অব বিজনেসের অধ্যাপক অ্যাডাম প্যানক্রেটজ সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেন, ইউরোপে প্রাকৃতিক সম্পদের কোনো সরবরাহ নেই। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর সিদ্ধান্ত নিলেও নিজস্ব প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করতে চায় না ইউরোপ। ইউরোপে প্রচুর গ্যাস রয়েছে, কিন্তু তা সংগ্রহ করার প‌রিব‌র্তে ধীরে ধীরে তারা আমদানি করা রাশিয়ান গ্যাস ও তেলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ফলে এখন গ্যাসের উৎস হিসেবে রাশিয়ার বিকল্প খুঁজতে হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপের দেশগুলো।

ইইউ তার মোট গ্যাসের চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ আমদানি করে। গত ১০ বছরে তাদের দেশীয় উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকে। জার্মানি, ফ্রান্সের মতো দেশ, যাদের নিজস্ব গ্যাসের মজুত রয়েছে; তারাও নতুন করে উৎপাদন নিষিদ্ধ করেছে।

সাধারণ মানুষের ওপর কেমন প্রভাব পড়ছে?

ইউরোপীয় কমিশনের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত মাখনের দাম ৮০ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে পনিরের দাম ৪৩ শতাংশ, গরুর মাংস ২৭ শতাংশ এবং গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি।

বেড়েছে সারের দামও, যা অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে ফেলেছে কৃষকদের। এর ফলে অঞ্চলটির প্রায় ৭০ শতাংশ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় আয়ের একটি বড় অংশ এখন জ্বালানির পেছনে ব্যয় করতে হচ্ছে ইউরোপের লাখ লাখ মানুষকে। অনেকে এটিকে আখ্যা দিচ্ছেন ‘জ্বালানি দারিদ্র্যতা’ হিসেবে।

ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) মতে, গ্যাসের দামবৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইতালীয় ও জার্মান পরিবারগুলো।

জ্বালানি সংকট কতটা ভয়াবহ হতে পারে?

বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে, ইউরোপ ইতোমধ্যে তার স্টোরেজগুলোয় পুনরায় গ্যাস মজুত করতে সক্ষম হয়েছে এবং নভেম্বরের মধ্যে সেগুলোর ৮০ শতাংশ পূর্ণ করার যে লক্ষ্য ছিল তা পূরণ করেছে। ফলে আসন্ন শীতে মহাদেশটির হাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিকল্প খোঁজাও অব্যাহত রেখেছে ইউরোপ। এ ছাড়া জ্বালানির ক্রমবর্ধমান দাম মোকাবিলায় জনগণকে সহায়তা করার জন্যও নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

যদিও ইউরোপের স্থিতিশীলতা এবার নির্ভর করছে তুলনামূলক ‘স্বাভাবিক’ শীতের ওপর। কারণ তাপমাত্রা খুব বেশি কমে গেলে জ্বলানির চাহিদা বাড়বে কয়েকগুণ। তখন পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, জ্বালানি সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ইউরোপীয় অর্থনীতিও ভেঙে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। কারণ, প্রচুর ব্যয়বহুল হওয়ায় এ অঞ্চলে তেমন কিছুই উৎপাদন করা হয় না।

তবে বিশেষজ্ঞরা একটি জায়গায় সম্মত যে, পরিস্থিতি কঠিন হলেও এবারের শীত মৌসুম হয়তো কোনোভাবে পার করতে পারবে ইউরোপ। তবে উদ্বেগ বেশি পরের বছর কী ঘটবে, তা নিয়ে।

তারা বলছেন, সমস্যা এখনই দূর হবে না। আগামী বছরগুলোতে এ ধরনের পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেয়া যায়. তা নিয়ে এখনই পরিকল্পনার প্রয়োজন। কারণ আগামীতে এই সংকট আরও তীব্র হবে।

কী অপেক্ষা করছে ইউরোপের জন্য?

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতির জেরে যদি গ্যাস-বিদ্যুতের দাম আরও বাড়তে থাকে, বেকারত্বের হার বেড়ে যায় এবং অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়; এর সার্বিক প্রভাব প্রতিফলিত হতে পারে রাজপথে। অর্থাৎ দেশে দেশে সাধারণ মানুষ তীব্র প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু করতে পারে।

এদিকে জ্বালানি সংকট মোকাবিলা এবং জনগণের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করলেও ইউরোপের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ এ সংক্রান্ত সমস্যার কার্যকর ও টেকসই সমাধান। যেমন— গ্যাস সরবরাহের পাইপলাইন নির্মাণ, পারমাণবিক চুল্লি তৈরি, এলএনজি আমদানির অবকাঠামো তৈরি ইত্যাদি। অর্থাৎ সমাধান সবই দৃশ্যমান, তবে সময়সাপেক্ষ। আর সেই সময়টাই মূলত নেই ইউরোপের হাতে।

সূত্র: আল জাজিরা

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com