সোমবার তখন সন্ধ্যা। ওই সময় তীর্থ ভ্রমণ শেষে নৌকা করে ফিরছিলেন পুষ্পা ও চায়না। নৌকাটি ডিসি বাংলো এলাকায় এসে গাছের গুড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এ সময় আতঙ্কিত হয়ে পানিতে লাফিয়ে পড়েন বড় বোন। আর বোনকে ডুবতে দেখে তাকে বাঁচানোর জন্য ছোট বোনও পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এতে পানিতে ডুবে মারা যান দুই বোনই। তবে নৌকার অন্য যাত্রীদের জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা শহরের রিজার্ভ বাজার ডিসি বাংলো এলাকায় কাপ্তাই লেকে।
মারা যাওয়া বড় বোন পুষ্পা রানী চক্রবর্তীর বাড়ি দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি উপজেলা সদরের দক্ষিণ বাসুদেবপুর (বড় বন্দর)। তিনি ওই এলাকার গোপাল চক্রবর্তীর স্ত্রী। আর ছোট বোন চায়না রানী চক্রবর্তী (৫০) রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বগেরবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি একই গ্রামের বৈদ্যনাথের স্ত্রী।
নিহতদের ভাগিনা নিত্যানন্দ চক্রবর্তী বলেন, পুষ্পা রানী ও চায়না রানী দুজন আপন বোন। রাঙ্গামাটিতে আমার মাও গিয়েছিলেন। মা বেঁচে গেছেন। পুষ্পা রানী বড়, আমার মা মনজু রানী মেজ এবং চায়না রানী ছোট বোন। রাঙামাটিতে তীর্থ ভ্রমণে যাবেন বলেন তিন বোন রতনপুর এসেছিলেন। সেখান থেকে শিবচতুর্দশীতে রাঙামাটিতে গিয়েছিলেন। নিজ নিজ এলাকায় দুই বোনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ধরঞ্জী ইউনিয়নের রতনপুর হিন্দুপাড়া গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, ওই গ্রামের ৫৬ জনসহ নারী-পুরুষ ও শিশুসহ মোট ৬৯ জন শিবচতুর্দশীতে পূর্জা-অর্চনা করতে সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ মন্দিরে যান। গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রতনপুর বাজার থেকে একটি বাসে তারা রওনা দেন। রোববার দুপুরে বাসটি সীতাকুণ্ডে পৌঁছায়। এরপর তারা সেখানে পূর্জা-অর্চনা করেন। সোমবার বিকেলে ৬০ জনের ওপর নারী-পুরুষ রাঙামাটি ঝুলন্ত সেতু দেখে নৌকায় করে ফিরছিলেন। নৌকাটি ডিসি বাংলো এলাকায় এসে গাছের গুড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে নৌকা লেকের পানিতে ডুবে যায়। নৌকার যাত্রী পুষ্পা রানী ও চায়না রানী চক্রবর্তী পানিতে ডুবে মারা যান।
ওই নৌকার যাত্রী রতনপুর গ্রামের সুজন চন্দ্র বর্মন বলেন, আমরা সবাই রাঙামাটি ঝুলন্ত সেতু দেখে নৌকায় ফিরছিলাম। ডিসি বাংলোর কাছাকাছি এসে গাছের গুড়ির ধাক্কায় নৌকার তলার একটি কাঠ খুলে ভেতরে পানি ঢুকতে শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে নৌকাটি ডুবে যায়। পুষ্পা রানীকে বাঁচাতে গিয়ে তার ছোট বোন চায়না রানীও পানিতে ডুবে যান। পরে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আরো তিনজন আহত হন। তারা চিকিৎসা নিয়ে এখন সুস্থ।
পাঁচবিবি থানার ওসি জাহিদুল হক বলেন, রতনপুর গ্রামের সনাতন ধর্ম্বালম্বীরা লোকজনেরা রাঙামাটিতে গিয়েছিলেন। সেখানে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে জেনেছি।