রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:০৯ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান
সংবাদ শিরোনাম ::
দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদারে সম্মত জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া রাশিয়ার ওপর আবার নিষেধাজ্ঞার হুমকি ট্রাম্পের জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে গেছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ১৩ বছর পর ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বাধীনতা বিরোধীরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, সবার সতর্ক থাকা জরুরি : আমিনুল হক মাইলস্টোন স্কুলের আহত শিক্ষার্থীর পাশে “আমরা বিএনপি পরিবার” অবসরপ্রাপ্ত ৭৮ কর্মকর্তার পদোন্নতির সুপারিশ যতোই চ্যালেঞ্জিং হোক, সুস্থ সবল প্রজন্ম গড়ে তুলতেই হবে : প্রধান উপদেষ্টা এনবিআরের ৪১ অতিরিক্ত কর কমিশনার বদলি সম্প্রতি ফ্লাইটসমূহে কারিগরি ত্রুটির প্রেক্ষিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের গৃহীত পদক্ষেপ

নদী ভাঙনে দিশাহারা মানুষ: দুর্গতদের পাশে দাঁড়ান: দয়াল কুমার বড়ুয়া

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০২৩
  • ১৬৯ বার পঠিত

বন্যা ও নদীভাঙনের কারণে প্রায় প্রতিবছরই বিপুল পরিমাণ সম্পদের ক্ষতি হয়। নদী বা চরাঞ্চলের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ অপেক্ষাকৃত দরিদ্র বা অনগ্রসর বিবেচিত হয়।
নদীভাঙন এ দেশে সব সময়ই ছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশেই নদীভাঙনের তীব্রতা অনেক বেড়ে গেছে। শুধু প্রধান নদীগুলোই নয়, এখন শাখা নদী বা অপেক্ষাকৃত ছোট নদীগুলোও বর্ষায় অনেক বেশি আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় মধুমতী নদীর ভাঙন তীব্র রূপ নিয়েছে। চোখের পলকে নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর, ফসলি জমি।
গত এক সপ্তাহে মধুমতীতে বিলীন হয়েছে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা। ফলে নদীপারের কয়েকটি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৩০০ পরিবার সব হারিয়ে নিঃস্ব হতে চলেছে। অনেকে বাড়িঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে পাঁচুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাঁশতলা বাজার, একাধিক পাকা সড়ক, দুটি মসজিদ, মাদরাসা, ঈদগাহ, কবরস্থানসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলছে, কিন্তু তা ভাঙন ঠেকাতে পারছে না।
সাম্প্রতিক সময়ে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে, বিশেষ করে সুনামগঞ্জে নদীভাঙনের তীব্রতা দেখা গেছে। উত্তরাঞ্চলে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে মানুষ দিশাহারা। যমুনা অববাহিকার অনেক স্থানেই ভাঙন দেখা দিয়েছে।
পদ্মা আগ্রাসী হয়েছে গোয়ালন্দ এলাকায়। ইছামতীর ভাঙনে মানিকগঞ্জের ঘিওরে একটি ঐতিহ্যবাহী হাটের একাংশসহ বহু ঘরবাড়ি, পাকা সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বংশাই ও ঝিনাই নদীতে ব্যাপক ভাঙনের খবর এসেছে। প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে এমন অনেক খবরই আসছে। এভাবে নদীভাঙন ক্রমেই বেড়ে চলার জন্য বিশেষজ্ঞরা অনেক কারণকেই দায়ী করছেন।
তার মধ্যে আছে নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া। নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় বর্ষায় বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পানি নদী দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে না। তখন দুই কূলে বেশি আঘাত করে এবং ভাঙন শুরু হয়। নদীভাঙনের আরেকটি বড় কারণ হিসেবে তাঁরা অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনকে দায়ী করেন। এতে নদীর স্থানে স্থানে গভীর গর্ত হয়ে যায়। বর্ষায় পানির স্রোত এখানে এসে পাকের সৃষ্টি করে। এটিও আশপাশে ভাঙন ত্বরান্বিত করে। এ ছাড়া নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়মকেও ভাঙনের জন্য দায়ী করা হয়।
মধুমতীর ভাঙন থেকে স্থানীয়দের রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। স্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। তার আগে নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের পুনর্বাসনে জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে।

নদীভাঙন একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ভাঙন রোধে এখনো কার্যকর উপায় বের করতে না পারায় প্রতি বছরই বিপুলসংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। মোটা দাগে এটি আমাদের ব্যর্থতা। এবারো তীব্র নদীভাঙন দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে এর আগে উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে কয়েক দফা বন্যার পর এখন তীব্র ভাঙনে দিশাহীন হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের মানুষ। বন্যার পানি নেমে গেলে ভাঙন আরো তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নদীভাঙন ঠেকাতে কংক্রিটের তৈরি ব্লক বাঁধের ধারে বা নদীর পানিতে ফেলার চল আছে দেশে। এত বছর হয়ে গেল, এখন পর্যন্ত আমরা নদীভাঙনের একটি টেকসই সমাধান খুঁজে পাইনি। শুধু নদীর পাড়ে মাটির বাঁধ তৈরি করে দুর্যোগ মোকাবেলার চেষ্টা করছি। অভিজ্ঞতায় বলে, বাঁধ বানের পানি ঠেকাতে যত কার্যকর, নদীভাঙন ঠেকাতে ততটা নয়। তবু প্রতি বছরই আমরা নদীভাঙন ঠেকাতে বাঁধ নির্মাণ করে শত শত কোটি টাকা পানিতে ঢালছি। বর্তমান প্রযুক্তি, অর্থাৎ মাটির বাঁধ দিয়ে নদীর ভাঙন খুব বেশি রোধ করা যাবে না। যদিও এক যুগ ধরে ধারাবাহিকভাবে দেশে নদীভাঙন কমেছে, নদীর তীর রক্ষায় ও বাঁধ নির্মাণে প্রচুর অবকাঠামো গড়ে তোলায় এটি হয়েছে। তবে বিনিয়োগ তুলনায় সাফল্য আরো বেশি হওয়া উচিত ছিল।
বাংলাদেশের মাটির ধরন অনুযায়ী নদীর তীরে ভাঙন একটি প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক ঘটনা। গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে ভাঙন রোধে অবকাঠামো তৈরি করলে ভাঙন আরো কমানো সম্ভব। এ ছাড়া ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে এমন নদীগুলোর ডুবোচর খনন করা ও বাঁধ মজবুত করে বানালে ভাঙনের মাত্রা আরো অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই নদীভাঙন রোধে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবভিত্তিক কর্মসূচি হাতে নেয়ার কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: দয়াল কুমার বড়ুয়া, কলামিস্ট ও জাতীয় পার্টি নেতা, সভাপতি, চবি অ্যালামনাই বসুন্ধরা। সংসদ সদস্য প্রার্থী ঢাকা-১৮ আসন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com