শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১৯ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক আরো জোরদারে শেখ হাসিনা-মোদির ঐকমত্য

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ৬০ বার পঠিত

ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক আরো জোরদার করার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

শুক্রবার দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান গভীর সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেন। উভয়ে বিদ্যমান সম্পর্ককে আরো জোরদার করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সম্মত হন।

বৈঠক শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে দ্বিপাক্ষিক এ বৈঠক হয়।

ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, উভয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান গভীর সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং এই সম্পর্ককে আরো জোরদার করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছেন।

তিনি বলেন, মোদি আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানের ওপরও জোর দিয়েছেন।

মোমেন বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিদ্যমান শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের জন্য তার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

এর আগে, নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে বিকেলে দিল্লি পৌঁছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছেন, গত বছরের ৪ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে তার সফল রাষ্ট্রীয় সফরের পর দ্বিপাক্ষিক স্বার্থের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রী এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

বৈঠকে শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্যের কথা জানান।

মোমেন জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের অসাধারণ অগ্রগতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হওয়ায় ভারত থেকে আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনা ভারত সরকারকে অনুরোধ করেন।

তিনি বলেন, উভয় প্রধানমন্ত্রীই রেল ও সড়ক যোগাযোগসহ ভারতের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক সংযোগ বাড়ানোর জন্য আমাদের চলমান প্রচেষ্টা এবং কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে সম্মত হয়েছেন।

শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে নরেন্দ্র মোদির সহযোগিতাও কামনা করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এই ফলপ্রসূ ও উন্মুক্ত আলোচনা দুই পক্ষের মধ্যে অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর নিষ্পত্তিকে ত্বরান্বিত করবে এবং উভয় দেশের জনগণ এর দ্বারা উপকৃত হবে।

তিনি দ্বিপাক্ষিক বৈঠককে ফলপ্রসূ আখ্যায়িত করে বলেন, এটি অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

তিনি বলেনর, এই সময় উভয় প্রধানমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং উভয় সরকারপ্রধান একান্ত বৈঠকেও মিলিত হন।

শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথাও স্মরণ করেন। ‘জি-২০ নেতাদের’ শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য নরেন্দ্র মোদির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

বিশ্বের অনুন্নত অংশের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

জি-২০ বৈঠকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তার সরকারের বিগত ৯ বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি অত্যন্ত সন্তোষজনক। আমাদের আলোচনায় যোগাযোগ, বাণিজ্যিক সংযোগ এবং আরো অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় টুইট বার্তায় উল্লেখ করেছে ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বৈচিত্র আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা করেছেন। তারা কানেকটিভিটি ও সংস্কৃতির পাশাপাশি জনগণের মধ্যে মানুষে মানুষে পারস্পরিক বন্ধনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদার করতে সম্মত হয়েছেন।’

জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যত’-এর ওপর দু’টি ভাষণ দেবেন।

‘এক পৃথিবী’ এবং ‘এক পরিবার’ অধিবেশন চলাকালীন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড মহামারীর পরে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, ইউরোপে যুদ্ধের ফলে খাদ্য, সার এবং জ্বালানির মতো প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর বৈশ্বিক সরবরাহের মারাত্মক ব্যাঘাতের মতো চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবিলা করা যায় তা নির্দেশ করবেন।

এছাড়া বর্তমান সরকারের মেয়াদে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্যের অভিজ্ঞতাও প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণকারী বিশ্বনেতাদের কাছে তুলে ধরবেন।

ভারতের জি-২০ সভাপতিত্ব ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়েছিল এবং এই সভাপতিত্বের মেয়াদে ভারত বাংলাদেশসহ মোট নয়টি দেশের সব কয়টিকে জি-২০ সম্মেলনে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানায়।

দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, মিশর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী পর্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী পর্যায়ের এবং ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে আলোচিত এবং সম্মত হওয়া অগ্রাধিকারগুলোর প্রতি নেতৃবৃন্দের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে একটি জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণা গৃহীত হবে।

গ্রুপ অফ টুয়েন্টি (জি২০) হল আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রধান ফোরাম। এটি সমস্ত প্রধান আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ইস্যুতে বৈশ্বিক স্থাপত্য এবং শাসন শক্তিশালীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১৯৯৯ সালে এশীয় আর্থিক সংকটের পরে অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য জি২০ একটি ফোরাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

জি-২০ ১৯টি দেশ (আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।
জি-২০ সদস্য দেশগুলো বিশ্বব্যাপী জিডিপির প্রায় ৮৫ শতাংশ, বিশ্ব বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশের বেশি এবং বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের প্রতিনিধিত্ব করে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com