সিটিজেন প্রতিবেদকঃ গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন সংশোধনের খসড়া উঠছে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে। ঐ খসড়ায় অপরাধ সংঘটনের দায়ে রাজনৈতিক দলকে সরাসরি শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে দেওয়া হচ্ছে না। তবে ট্রাইব্যুনাল চাইলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করতে পারবেন।
আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানান, আসছে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সংশোধনীর খসড়া উপস্থাপন করা হবে। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘সংশোধনী অধ্যাদেশে কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ থাকলে আর আদালত মনে করলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই সুপারিশ করা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩’-এ কিছু মারাত্মক বিচ্যুতির কথা দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন বলেছিল। সুশীল সমাজও বিভিন্ন সময় বলেছিলেন। সরকার যখন এটিকে সংস্কারের উদ্যোগ নিল, তখন সরকার চেয়েছে বিচারটি যেন দেশীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য হয়। একইসঙ্গে এর মাধ্যমে যেন সুবিচার সুনিশ্চিত করা হয়। এ জন্য ব্যাপক পরামর্শ করা হয়েছে। একটি অসাধারণ সংশোধনী করার জন্য চেষ্টা হয়েছে। যেটি এর বিচারের গুরুত্ব, যৌক্তিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা অনেক বাড়িয়ে দেবে।
আগামীকাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সেই সংশোধনীর খসড়া তোলা হবে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ এটি গ্রহণ করলে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যেই এটি আইনে পরিণত হবে। তারপর প্রক্রিয়াগত কারণে যতদিন লাগে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশের সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়ায় রাজনৈতিক দলের বিচারের ধারা যুক্ত হচ্ছে কি না?- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি দিন অপেক্ষা করেন। তারপর দেখতে পাবেন।
খসড়ায় কী আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘প্রস্তাবে আদালতকে সেভাবে সরাসরি ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে, আদালত যদি মনে করেন, তাহলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ সুপারিশ করবেন তারা।
এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আরও বলেন, ‘এটা এমন নয় যে, আদালত শাস্তি দেবেনই। আদালত যদি মনে করেন, শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করবেন শুধু। এটা খসড়ায় রাখা হয়েছে। তবে এটি উপদেষ্টা পরিষদের ওপর নির্ভর করে।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ওই আন্দোলনে সরকারি হিসাবে ৮৭৪ জন নিহত হন। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ ওঠে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গণহত্যা ও আওয়ামী লীগের শাসনের সময়ে গুমের অভিযোগগুলোর বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে বিচার কার্যক্রমের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। একইসঙ্গে আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।