নিজেস্ব প্রতিবেদক
সিন্ডিকেট করে মালয়েশিয়া শ্রমিক পাঠানোর অন্যতম হোতা ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার শেখ রেহানার ‘ফান্ড ম্যানেজার’ আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের সহোদর ভাই ও আরেক ভাইয়ের স্ত্রী জিন্নাত ফাতেমা চৌধুরী ও জামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে দুদকের মামলায় অন্তভূক্ত করতে দুদক চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
বুধবার (১৯ মার্চ) জমা দেওয়া আবেদনে বলা হয়, গত ১১ মার্চ মঙ্গলবার সিন্ডিকেট করে মালয়েশিয়া শ্রমিক পাঠাতে সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত ১ হাজার ১২৮ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির ৩২ জনের মালিক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অথচ এই মামলায় স্নিগ্ধা ওভারসীস লিমিটেডের অন্যতম দুই শেয়ার হোল্ডার (২৫% করে) জিন্নাত ফাতেমা চৌধুরী, স্বামী: জালাল উদ্দিন চৌধুরী, মাতা: হোসনে জাহান চৌধুরী, ঠিকানা: গ্রাম: উত্তর গুথুমা (চৌধুরী বাড়ী), পো: গুথুমা, উপজেলাঃ পরশুরাম, জেলাঃ ফেনী এবং জামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, পিতাঃ মরহুম ছালেহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, মাতাঃ হোসনে আরা চৌধুরী রয়েছেন ধরা ছোয়ার বাইরে। তাদের নাম দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় অন্তভূক্ত করা হয়নি।
ফেনীর সীমান্ত দিয়ে ভারতে স্বর্ণ পাচার, মাদকের কারবার ও চোরাই গরু পাচারের মূল হোতা আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আলাউদ্দিন নাসিম। তার নির্দেশে এসব চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ করতেন নাসিমের ছোট ভাই ও জিন্নাত ফাতেমা চৌধুরীর স্বামী জালাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী পাপ্পু।
জিন্নাত ফাতেমা চৌধুরী ও জামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বাংলাদেশের অন্যতম দুর্নীতিবাজ ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার শেখ রেহানার ‘ফান্ড ম্যানেজার’ আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের সহোদর ভাই ও আরেক ভাইয়ের স্ত্রী। আলাউদ্দিন নাসিমের ব্যবসা তারা দেখবাল করবেন। জিন্নাত ফাতেমা চৌধুরী ও জামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর নামে শত শত কোটি টাকার সম্পদ রেখেছেন আলাউদ্দিন নাসিম।
ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম গত দেড় দশক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতসহ মাদক ব্যবসা, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ঘুষ-চাঁদাবাজির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করেছেন এই সাবেক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও সংসদ সদস্য। নাসিমের হাত ধরেই পরিচালিত হতো দেশের বেসরকারি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। ঢাকায় মদের ব্যবসা এবং ফেনীতে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ‘স্বর্গরাজ্য’ গড়েন। নাসিম ও তার পরিবারের সদস্যদের দেশ-বিদেশে নামে-বেনামে রয়েছে হাজার কোটি টাকার অর্থ-সম্পদ। এ ছাড়া কানাডায় রয়েছে বাড়ি-গাড়ি। নাসিমের হাত ধরে দেশে গত দেড় দশকে বিদ্যুৎ খাতে লুটপাটের মহোৎসব চলেছে। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় বিনা পুঁজিতে ব্যাবসায়িক পার্টনার হয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের প্রকল্প থেকে বিদেশে পাচার করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। ডাচ্-বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ৩০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। শুধু বিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা লোন নিয়ে বিদেশে পাচার করেন তিনি। জালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঋণ নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তাকে ২০ পার্সেন্ট কমিশন না দিলে কোনো টেন্ডারই পেতেন না ব্যবসায়ীরা। প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই তিনি বুঝে নিতেন তার কমিশনের টাকা।
প্রভাবশালী এই সাবেক এমপিকে ব্যাবসায়িক পার্টনার বানিয়ে কোনো রকম টেন্ডার বা প্রতিযোগিতা ছাড়াই সরকারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় বড় প্রকল্প বাগিয়ে নেন এক আলোচিত ব্যবসায়ী। তাকে বলা হয় দেশের অন্যতম মাদক ব্যবসায়ী। ঢাকার অভিজাত গুলশান এলাকায় রয়েছে তার মদের গুদাম, যা সবচেয়ে বড় মদের গুদাম। ঢাকার বিভিন্ন ক্লাব থেকে সদস্যদের জন্য কম দামে কেনা মদ তিনি বেশি দামে বিক্রি করেন বলে অভিযোগে রয়েছে।
মেয়ে রাকা চৌধুরী এখনো কানাডায় অবস্থান করছেন। এমপি হওয়ার আগেও তিনি পরিবার নিয়ে প্রায়ই কানাডায় থাকতেন। তিনি কয়েক হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সচিবালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ২০ পার্সেন্ট কমিশন নিতেন আলাউদ্দিন আহমেদ।
এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ফেনী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের মানুষের কৃষিজমি জিম্মি করে কাউকে দিয়েছেন স্বল্পমূল্য, আবার কেউ জমি লিখে দিতে না চাইলে সেই জমি তিনি দখল করে নিয়েছেন। ২০ বিঘা জমির ওপরে গড়ে তোলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুকুর রয়েছে চারটি। ফেনীর পরশুরামে ৩০ একর জায়গায় ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম কলেজ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জোরপূর্বক ও ভয় দেখিয়ে নামমাত্র মূল্য পরিশোধ করে কলেজের জন্য কৃষিজমির জায়গা দখল করে নেওয়া হয়। এবার ফেনী-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়ে মনোনয়ন বাণিজ্য করে ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরামে তার অনুসারীদের দিয়ে নানা কায়দা-কৌশল করে নির্বাচনের মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যান বানান। এ ছাড়া নির্বাচনি এলাকার বাইরেও অন্যান্য উপজেলায়ও তার অনুসারীদের চেয়ারম্যান বানান।
২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর কোনো পদে না থেকেও জনপ্রশাসনে পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন নাসিম।
শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন নাসিম দেশটিকে বানিয়েছিলেন অনিয়ম ও দুর্নীতির ‘স্বর্গরাজ্য’। মিস্টার টোয়েন্টি পার্সেন্ট হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন দেশব্যাপী। তাকে ২০ পার্সেন্ট কমিশন না দিলে কোনো টেন্ডারই পেতো না ব্যবসায়ীরা। প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই তিনি বুঝে নিতেন তার কমিশনের টাকা। বিভিন্ন সময় দুর্নীতির কারণে অনেকেই ধরা পড়লেও সব সময় অন্তরালে থেকে যেতেন দুর্নীতির বরপুত্র খ্যাত আলাউদ্দিন নাসিম। শেখ হাসিনা ও রেহানার ম্যানেজার হিসেবে ছিলেন বহাল তবিয়তে।
দুর্নীতির বরপুত্র খ্যাত আলাউদ্দিন নাসিমের অন্যতম সহযোগী জিন্নাত ফাতেমা চৌধুরী ও জামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে আইনের আওতায় আনতে দুদক চেয়ারম্যানের সুদৃষ্টি কামনা করা হয়।