গত বছরের নভেম্ভরে পটুয়াখালী সরকারি কলেজে খাদ্য অধিদপ্তরের উপখাদ্য পরিদর্শক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র জালিয়াতির ঘটনায় কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক ও প্রশ্নপত্র জালিয়াতির মূল হোতা সোহেল মিয়াকে অব্যাহতি দিয়ে চার্জশিট প্রদান করার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ বলছে, এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যচ্ছে না, সম্পৃক্তদের বিষয়ে শীঘ্রই জানা যাবে। তবে বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, ঘটনার মূল হোতা কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক সোহেল মিয়া। সোহেল মিয়া বরগুনা জেলার আমতালী বাইনুন বুনিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল কাদের হাওলাদারের পুত্র। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় যে, এর আগেও অভিযুক্ত শিক্ষকের নামে তার নিজ এলাকায় ধর্ষণ, জমি দখল, বিবাহ বহির্ভুত নারীর সাথে সম্পর্ক জনিত একাধিক মামলা ছিল।
গত ১৯ নভেম্বর খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ পীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে সদর থানার উপপরিদর্শক মো. আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ৬ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন এবং আসামিদের আদালতের মাধ্যমে ২০ নভেম্বর কারাগারে পাঠানো হয়। আসামিরা হলেন দশমিনার নুরুল ইসলাম বয়াতির ছেলে মো. মাকসুদুর রহমান (৩০), পটুয়াখালির মো. রাজ্জাক চৌকিদারের ছেলে মো. রাসেল হোসেন (৩০), গলাচিপার শাহ আলম গাজির ছেলে মো. কাওছারুল আলম (৩০), দশমিনার সামসুল হক মৃধার ছেলে জহিরুল ইসলাম (৩১), নুর মোহাম্মাদের ছেলে আলিউল ইসলাম (৩২), পাথর ঘাটা বরগুনার হারুন অর রশিদের মেয়ে সিমু আক্তার (৩১)। আসামিরা বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।
এদের মধ্যে ১ নং আসামি মাকসুদুর রহমন ও ৩ নং আসামি মো. কাওছারুল আলম পটুয়াখালী সরকারি কলেজের নিয়োগ পরীক্ষা কমিটির সদস্য ৩ জন শিক্ষককে আর্থিক সুবিধা পাইয়ে দেয়ার জন্য পটুয়াখালীতে অবস্থান করেন দীর্ঘদিনের বন্ধু কলেজের প্রভাষক ও নিয়োগ কমিটির সদস্য মো. সোহেল মিয়ার বাসায়। সূত্র বলছে, নিয়োগ পরীক্ষার আগের দিন আসামিরা সোহেল মিয়ার বাসায় মিটিং করেন।
পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন কলেজের দর্শন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মো. আলী হায়দার, সদস্য কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মো. কমরুল হাসান এবং অভিযুক্ত মো. সোহেল মিয়া। মামলার ৩ নং আসামি মোঃ কাওছারুল আলম সোহেল মিয়ার সম্পৃক্ততার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দিলেও অভিযোগ রয়েছে অভিযুক্ত শিক্ষক কলেজের অধ্যক্ষ মো. নুরুল আমিনের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মো. সোহেল মিয়ার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এসবের সাথে সম্পৃক্ত নই। কোন মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এসব রটাচ্ছে।
কলেজের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহকারি অধ্যাপক মো. সেলিম রাশা বলেন, আমার জানা মতে কলেজে তার বিষয়ে কোন অভিযোগ নেই। তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রশ্নফাঁসের সাথে সম্পৃক্ত আছেন কিনা সে বিষয়ে জানা নই।
অভিযোগের বিষয়ে পটুয়াখলী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামন বলেন, তদন্তে পরীক্ষা কমিটির সাথে যুক্ত দুজন শিক্ষকের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তদন্ত শেষের দিকে শীঘ্রই চার্জশিট জমা দেয়া হবে।
কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. নুরুল অমিন বলেন, সোহেল মিয়া এবং প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় আটক হওয়া গলাচিপা কলেজের এক শিক্ষক বন্ধু হওয়ায় তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে জানি। তবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত কিনা সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই। আর আমি কলেজে নতুন এসেছি এবং সোহেল মিয়াকে মামলা হতে অব্যাহতির জন্য কোথাও সুপারিশ করিনি।