শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ০১:১৪ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান
সংবাদ শিরোনাম ::
নৈতিকতা ও মানবসেবাই রোটারির প্রকৃত শক্তি ৩১ দফা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে: উত্তরা ও উত্তরখানে বিএনপির লিফলেট বিতরণে সমাবেশে আফাজ উদ্দিন ৩১ দফার ভিত্তিতে মানবিক রাষ্ট্র গঠনে তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি এগিয়ে যাচ্ছে: এস এম জাহাঙ্গীর পিআর পদ্ধতি চায় যোগ্যতাহীনরা, জনগণ চায় ব্যালটে ভোট দিয়ে সরকার গঠন – আমিনুল হক শ্যামলীর ইইউবি ক্যাম্পাস বিক্রির অভিযোগে ভূয়া ট্রাস্টির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন জবাবদিহিমূলক সরকার গড়বে বিএনপি: আমিনুল হক হেলমেটে বলের আঘাতে মাঝপথেই টেস্ট শেষ বেনেটের সরকারবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল সার্বিয়া ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর অর্ডিন্যান্স’-এর খসড়া অনুমোদন নিরাপত্তার স্বার্থে আমার বৈধ অস্ত্র আছে: আসিফ মাহমুদ

প্রভাতফেরির একাল-সেকাল

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ১২১ বার পঠিত

বাংলাদেশের ইতিহাসে একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু একটি দিনমাত্রই নয়। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ২০ বছর আগে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির দিনটি একটি ইতিহাস, বাঙালির রক্ত-রাঙানো জেগে ওঠার দিন, অনন্য একটি অর্জনের দিন, মায়ের মুখের ভাষাকে কেড়ে নেয়ার প্রয়াসী হায়েনাদের গ্রাস থেকে বাংলা ভাষাকে রক্ষা করার জন্য বাঙালি জাতির প্রতিজ্ঞাবদ্ধ একটি দিন। আজ বিশ্বের সবদেশ এই দিনটিকে স্মরণ করে, উদযাপন করে, আপন আপন ভাষাকে শ্রদ্ধা জানায়। তাই একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দিন।

একুশে ফেব্রুয়ারির সবচে সুন্দর দিকটি হচ্ছে প্রভাতফেরি। শীত শীত ভোরে খালি পায়ে হেটে হেটে শহিদ মিনারে যাওয়া। অথচ প্রত্যুষে খালি পায়ে প্রভাতফেরির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপিত হওয়ার প্রচলিত রীতি পালটে মধ্যরাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যেন সবাই আমাদের এ ঐতিহ্যটির কথা ভুলে গেছে, মুষ্টিমেয় কয়েকজন ঐতিহ্যদরদি মানুষ ছাড়া।

বাঙালির ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ‘প্রভাতফেরি’র নাম। । ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এর পরের বছরেই চালু হয় এই প্রভাতফেরি। শব্দটির আভিধানিক অর্থ প্রভাতে উদ্বোধনী সংগীত গেয়ে জনগণকে জাগানো। জানা মতে, প্রভাতফেরি আমাদের দেশেই প্রথম।

যেভাবে প্রভাতফেরির মাধ্যমে শহিদ দিবস পালন শুরু হয়

ইতিহাসমতে, ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো শহীদ দিবস পালিত হয়। অবাক করা বিষয় হলো, এই দিবসটি পালন শুরুই হয় প্রভাতফেরি দিয়ে। সেটা সব ছাত্র সংগঠনের সিদ্ধান্তেই এটা হয়। কারো কোনো একক সিদ্ধান্তে এটা হয়নি। প্রভাতফেরির দিনটিতে ঢাকার বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা খুব ভোরে মূলত ছাত্রাবাসগুলো থেকে বের হয়ে খালি পায়ে ফুল হাতে, কেউ ফুল ছাড়াই একুশের গান গাইতে গাইতে আজিমপুর কবরস্থানে গিয়ে শহিদদের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর তারা আসেন শহিদ মিনারের যে প্রতিকৃতি করা হয়েছিল সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। এভাবেই প্রভাতফেরির মাধ্যমে শহিদ দিবস পালন শুরু হয়েছিল।

‘একুশের পটভূমি ও একুশের স্মৃতি’ গ্রন্থে ‘শহীদ মিনারের কথা’ শীর্ষক নিবন্ধে ভাষাসংগ্রামী রফিকুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন- ১৯৫৩ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম শহিদ দিবসে প্রভাতফেরি করা হয় নগ্নপদে। কণ্ঠে ছিল গাজীউল হক রচিত গান, ‘ভুলবো না, ভুলবো না, একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলবো না’। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কালো পতাকাও তোলা হয় সেদিন। মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে যে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল ভাষা শহিদদের রক্তে সেই রাজপথে জুতা পায়ে হেঁটে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন না—এমন চিন্তা থেকেই খালি পায়ে প্রভাতফেরির প্রথা চালু হয়েছিল।

শুরু থেকে শহিদ মিনারের প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়ার রীতি ছিল। কারণ ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র হোস্টেলের ১২ নম্বর শেডের পূর্ব প্রান্তে যে স্মৃতিস্তম্ভ তথা শহিদ মিনার নির্মাণ হয়েছিল, সেখানেও এই ফুল দেওয়ার বিষয়টি ছিল। এখানে শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়টিই মুখ্য।

একুশের প্রভাতফেরির আদিরূপ অনেকটা মলিন হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে অর্থাৎ রাত ১২টা ১ মিনিটে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হচ্ছে। ভাষাসংগ্রামী ও সংস্কৃতিসেবীদের অনেকে এর বিরোধিতা করছে যদিও। কারণ, সেই শুরু থেকেই ভোরে প্রভাতফেরির মাধ্যমে অমর একুশে পালিত হয়।

বেশিরভাগ বোদ্ধারা মনে করেন, বাংলা বর্ষ গণনায় দিনের শুরু হয় সূর্যোদয় থেকে। কিন্তু খ্রিস্টাব্দ গণনার ক্ষেত্রে দিন শুরু হয় রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে। আমাদের রাষ্ট্রীয় জীবনে আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খ্রিস্টাব্দ অনুসরণ করে এলেও এটা যেহেতু ভাষা ও স্বাধিকারের বিষয়, সেহেতু প্রভাতফেরিটা ভোরবেলায়ই করা উচিত। মূলত ৮০’র দশকের পর থেকে রাত ১২টা ১ মিনিটে শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয়। অথচ একুশে ফেব্রুয়ারি পালনের প্রথম থেকেই এই সংস্কৃতিটা ছিল ভোরবেলায় প্রভাতফেরি করার। আর হত্যাকাণ্ডটিই সংগঠিত হয়েছিল সকালের পরপরই। তাই শ্রদ্ধা জানানোর উপযুক্ত সময় ছিল ভোরে, স্নিগ্ধ সকালের শুরুতে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com