কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় বর্বরোচিত জঙ্গি হামলার সাত বছর আজ। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও কার্যত অগ্রগতি নেই বিচারাধীন মামলার। এখনও শুরু করা যায়নি সাক্ষ্যগ্রহণ।
আদালত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শোলাকিয়া জঙ্গি হামলা মামলার আসামিরা হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলারও আসামি। তাই সব আসামিকে একসঙ্গে আদালতে হাজির করতে না পারায় আটকে আছে বিচারপ্রক্রিয়া। বর্বরোচিত এ হামলার ঘটনায় এখনও আতঙ্ক কাটেনি এলাকাবাসীর। শোক কাটছে না নিহতদের স্বজনদের।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদের জামাত শুরুর আগমুহূর্তে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এদিন ঈদগাহের কাছে মুসল্লিদের প্রবেশপথে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। সেদিনের দুঃসহ স্মৃতি এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় এলাকার মানুষকে।
ইতিহাসের বর্বরোচিত এ হামলার সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও রয়ে গেছে নৃশংসতার চিহ্ন। হামলায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের দুই কনস্টেবল ছাড়াও নিজের ঘরে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন গৃহবধূ ঝর্ণা রানী ভৌমিক। এখনও ঘাতকদের বিচারের অপেক্ষায় নিহতদের স্বজনরা। দিনটি এলে এলাকার মানুষ অজানা আতঙ্কে থাকেন।
শোলাকিয়া হামলার পর ২০১৬ সালের ১০ জুলাই ঈদগাহের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করা সেই সময়কার পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শামসুদ্দীন বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা করেন। মামলায় ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক শফিকুল ইসলাম ডন ও তানিমসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সে সময়কার কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মুর্শেদ জামানকে। গ্রেফতার হন জেএমবির শীর্ষ নেতা রাজিবগান্ধীসহ আরও তিনজন।
২০১৮ সালের ২৬ জুলাই পাঁচ জঙ্গিকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। চার্জ গঠন করা হয় একই বছরের ২৮ নভেম্বর। আসামিদের মধ্য চারজনই ঢাকার হলি আর্টিজান মামলার আসামি। তাদের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা থাকায় শোলাকিয়া হামলা মামলায় সব আসামিকে একসঙ্গে কিশোরগঞ্জ আদালতে হাজির করা যাচ্ছে না। তাই বিচারকাজ বিলম্বিত হচ্ছে।
জেলা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবু নাসের মো. ফারুক সনজু বলেন, ‘চাঞ্চল্যকর এ মামলায় আমরা সাক্ষ্য নিতে প্রস্তুত। সব আসামিকে আদালতে হাজির করা যাচ্ছে না। গত ৬ জুন সাক্ষ্যগ্রহণের কথা ছিলে। ১৭ জন সাক্ষী আদালতে হাজির হয়েছেন। কিন্তু রাজশাহী কারাগারে থাকা আসামি আনোয়ার হোসেনকে আদালতে হাজির করা যায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ২৫ জুলাই আবারও তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত। আমরা আশা করছি শিগগিরই মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হবে।’
কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, ‘শোলাকিয়া জঙ্গি হামলার ঘটনাটি পুলিশ কাছে থেকে দেখেছে। সহকর্মীরা নিজেদের জীবন দিয়েছে। জীবনবাজি রেখে পুলিশ জঙ্গিদের রুখে দিয়েছে। আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মামলাটি সুপারভিশন করেছে। নিবিড় তদন্ত শেষে পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। বিলম্ব হলেও আমরা আশা করি রাষ্ট্র ন্যায়বিচার পাবে।’ ঘটনার সময় নিহতদের পরিবারকে সব সময় সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
শোলাকিয়া জঙ্গি হামলা মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে হলি আর্টিজান মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজিব গান্ধী, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান ও সবুর খান হাসান ওরফে সোহেল মাহমুদ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন। অপর দুই আসামি আনোয়ার হোসেন রাজশাহী ও জাহিদুল হক তানিম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন।