বিনোদন প্রতিবেদকঃ মঞ্চ থেকে চলচ্চিত্র অভিনয়ের সবখানে তিনি রাজত্ব করেছেন দুর্দান্ত প্রতাপে। কয়েক দশক অভিনয়ে তিনি মাতিয়ে রেখেছিলেন নিজের অভিনয় দিয়ে। ‘ভাঙ্গনের শব্দ শুনি’র সেরাজ তালুকদার, ‘সংশপ্তক’এর কানকাটা রমজান কিংবা ‘শ্যামল ছায়া’র একজন মুক্তিযোদ্ধাকে মানুষ মনে রাখবে অনেকদিন। নিজেকে কিংবদন্তিতে পরিণত করেছেন, তিনি হুমায়ুন ফরীদি।
আজ ২৯ মে, এ গুণী অভিনেতার জন্মদিন। ১৯৫২ সালের এমন একটি দিনেই পৃথিবীতে এসেছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। বেঁচে থাকলে ৭২ বছরে পা রাখতেন। জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলিতে অবিরাম ভালোবাসায় সময়ের কণ্ঠস্বর পরিবার স্মরণ করছে এই বরেণ্য অভিনেতাকে।
চার ভাই-বোনের মধ্যে ফরীদি ছিলেন দ্বিতীয়। ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেন চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে। একই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানিক কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হন স্নাতক করতে। কিন্তু পরের বছরই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় খাতা-কলম বাক্সবন্দি করে কাঁধে তুলে নেন রাইফেল। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে দামাল ছেলের মতো লড়াই করেছেন ফরীদি।
ছাত্র থাকাকালীন হুমায়ুন ফরীদি নাট্য সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয়েছিলেন। ১৯৬৪ সালে প্রথম কিশোরগঞ্জে মহল্লার মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি। টিভি নাটকে প্রথম অভিনয় করেন ‘নিখোঁজ সংবাদ’ শিরোনামের নাটকে। ফরিদীর প্রথম অভিনয় করা সিনেমার নাম ‘হুলিয়া’। নায়ক-খলনায়ক দুই চরিত্রেই তিনি ছিলেন সাবলীল। তবে হুমায়ুন ফরীদি বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত বিখ্যাত সংশপ্তক নাটকে ‘কানকাটা রমজান’ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য দেশজুড়ে তুমুল আলোচিত হয়েছিলেন।
‘সন্ত্রাস’, ‘ভণ্ড’, ‘ব্যাচেলর’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামলছায়া’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘মায়ের র্যোদা’, ‘বিশ্বপ্রেমিক’ ও ‘পালাবি কোথায়’সহ একাধিক জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন হুমায়ুন ফরিদী। ‘মাতৃত্ব’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য ২০০৪ সালে সেরা অভিনেতা শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পান এ অভিনেতা। এছাড়া নৃত্যকলা ও অভিনয় শিল্পের জন্য ২০১৮ সালের একুশে পদক (মরণোত্তর) লাভ করেছিলেন এই অভিনেতা। ২০১২ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এ কিংবদন্তি। তিনি না থাকলেও তার কাজের মধ্যে দিয়ে ঠিকই দর্শকের ভালোবাসা পাচ্ছেন। তার শূন্যতা পূরণ হওয়ার না।