বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংককে (ইউসিবি) এতদিন লুটে পুটে খেয়েছে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ও তার পরিবার।
পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি এম এ হাসেম ছিলেন ইউসিবি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম একজন। তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালে পারটেক্স গ্রুপের মালিক পরিবারের সদস্যদের ইউসিবি ছেড়ে যেতে বাধ্য করা করে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ও তার পরিবার। ব্যাংকটির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব নেন সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্ত্রী রুকমিলা জামান। তবে রুকমিলা জামান যুক্তরাজ্যে অবস্থান করায় ব্যাংকটি মূলত সাইফুজ্জামান চৌধুরী পরিচালনা করেছেন।
রুকমিলা জামান ব্যাংকের চেয়ারপারসন হলেও সাইফুজ্জামান চৌধুরী কার্যত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন এবং তাঁর ‘স্বেচ্ছাচারিতা ও লুটপাটের কারণে’ ব্যাংকটি আজ দেউলিয়া হওয়ার পথে। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে ১ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে, যা এই ‘ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা লুট করে পরিশোধ করা হয়েছে’।
২০১৭ সাল থেকে ব্যাংকটিকে একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে ‘অবাধ লুটপাট, আর্থিক দুর্নীতি ও বিদেশে টাকা পাচার’ করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ২০১৭ সালে ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সাল শেষে বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী তাঁর ক্ষমতা ব্যবহার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা উপেক্ষা করে মন্ত্রী থাকা অবস্থায় দায়িত্ব পালন করে গেছেন। এ জন্য ব্যাংকটির সম্পদের মান খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এখন এই ব্যাংকটিকে বাঁচাতে হলে পারটেক্স গ্রুপের মালিক পরিবারের সদস্যদের ছাড়াও ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। না হলে এই ‘ব্যাংকের ওপর আমানতকারীদের আস্থা’ উঠে যেতে পারে।
এদিকে, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংককে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন ব্যাংকের দেড় শতাধিক শেয়ারধারী। সম্প্রতি গুলশানে ইউসিবির প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে তাঁরা এই দাবি জানান। এই সময় তাঁরা বিভিন্ন ফেস্টুন প্রদর্শন করে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ‘বিদেশে অর্থ পাচার’ ও ব্যাংকটিতে ঘটা নানা অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ উত্থাপন করেন।