শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:০৮ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান
সংবাদ শিরোনাম ::
হিরো আলম গ্রেপ্তার ঢাকায় ৪৪টি পুকুর ও জলাশয় সংস্কার কাজের উদ্বোধন করলেন পরিবেশ উপদেষ্টা জামায়াতসহ ১২টি দলের সঙ্গে ইসির বৈঠক সোমবার নির্বাচনে ব্যাঘাত ঘটানোর মতো শক্তি আওয়ামী লীগের নেই: প্রেস সচিব ফরিদপুরে জামায়াতে ইসলামী’র বিক্ষোভ মিছিল: আওয়ামী লীগের অপতৎপরতার প্রতিবাদে ঐক্যের আহ্বান ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্যাসেঞ্জার সার্ভিস ও ফ্যাসিলিটেশন কোর্স অনুষ্ঠিত জনগণ ফ্যাসিবাদ মুক্ত নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায়-ড. রেজাউল করিম। দলগুলো ঐক্যবদ্ধ না হলে জাতি মহাবিপদের সম্মুখীন হবে: প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট: প্রধান উপদেষ্টা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা ১৭ নভেম্বর

জনতার ক্ষোভের আগুনে পুড়লো আলাউদ্দিন নাসিমের ‘পাপের বাড়ি’

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৫৪ বার পঠিত

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেনীর পরশুরামে প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচ করে আলিশান বাড়ি বানিয়েছিলেন দুর্নীতির বরপুত্র ফেনী-১ আসনের সাবেক এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। বাড়িটি সব সময় কালোবাজারিদের দ্বারা জমজমাট থাকতো। সন্ধ্যা নামলেই বাড়তো সুন্দরী রমনীদের আনাগোনা। এখানে প্রতি‌দিন সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মদের আড্ডা। চলতো নর্তকিদের দিয়ে নাচ-গান। স্থানীয়রা এটার নাম দিয়ে দিয়েছিলেন ‘পাপের বাড়ি’। কারণ এখানে চলতো পাপাচার। আর বাড়িটি করা হয়েছিলো দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকায়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা নাসিমের পাপের বাড়ির আশপাশে জড়ো হতে থাকে। পরে রাতে সেখানে মানুষের ঢল নামে। একপর্যায়ে সেখানে গেট ভেঙে বাড়িতে ঢুকে পড়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। তাদের অনেককে দরজা-জানালা খুলে ফেলতে দেখা যায়। এসময় জানালার কাচ ভেঙে ফেলা হয়। অনেককে ভবনের ইট খুলে নিতেও দেখা যায়। পরে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা সেখানে আগুন দেয়।

নাসিমের বাড়ি সীমান্তবর্তী উপজেলা পরশুরাম পৌরসভার গুথুমা গ্রামে, যার তিন পাশে সীমান্ত। তার নেতৃত্বে এই সীমান্ত দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা থেকে অবৈধভাবে মাদক, ফেন্সিডিল, গরু, শাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক আসে বাংলাদেশে। আর বাংলাদেশ থেকে পাচার হয় স্বর্ণ। ২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার পদবি ব্যবহার করে প্রশাসনে বদলি, পদায়ন থেকে শুরু করে বিনা টেন্ডারে কাজ পাইয়ে দেওয়া, বিদ্যুৎ কোম্পানির লাইসেন্স করে দেওয়ার কাজ শুরু করে আলাউদ্দিন নাসিম। তিনি দেশটিকে বানিয়েছিলেন অনিয়ম ও দুর্নীতির ‘স্বর্গরাজ্য’। বালুমহাল, টেন্ডার বাণিজ্য, সালিশ বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য ও সীমান্ত থেকে চোরাকারবার চলত তার নির্দেশে। তিনি মিস্টার টোয়েন্টি পার্সেন্ট হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন দেশব্যাপী। তাকে ২০ পার্সেন্ট কমিশন না দিলে কোনো টেন্ডারই পেত না ব্যবসায়ীরা। প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই তিনি বুঝে নিতেন তার কমিশনের টাকা। বিভিন্ন সময় দুর্নীতির কারণে অনেকেই ধরা পড়লেও সব সময় অন্তরালে থেকে গেছেন দুর্নীতির বরপুত্র খ্যাত আলাউদ্দিন নাসিম।

আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম এক সময় ছিলেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার। এই পরিচয়ে তিনি সারাদেশে গড়ে তোলেন অপরাধের নেটওয়ার্ক। এমন কোনো অপরাধ নেই যার সাথে জড়াননি নারী লিপ্সু ও চরিত্রহীন নাসিম। বিগত হাসিনা সরকা‌রের আম‌লে আঙ্গুল ফু‌লে বনে গেছেন কলা গাছ। ক‌রে‌ছেন অঢেল সম্প‌দের পাহাড়।

আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম একজন চরিত্রহীন লম্পট। অনেক নারীকে বি‌ভিন্ন প্রলোভন দে‌খি‌য়ে নি‌য়ে যে‌তেন দেশের বাইরে। এক নাসিমেরর লালসার শিকার শতাধিক নারী। তার খপ্পরে পড়ে ও প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক নারী সর্বশান্ত হয়ে পথে বসেছেন। লোক লজ্জায় নারীরা তাদের এই বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে জানাতে পারেননি। কারণ, স্বামী-সন্তান’সহ সামাজিক মর্যাদার কথা বিবেচনা করে। আর এই সুযোগেই লম্পট আলাউদ্দিন নাসিম নিজের যৌন স্বার্থ চরিতার্থ করেন। ১৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার পুলিশ মহাপরিদর্শক ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে পৃথক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন জিনাত রিজওয়ানা নামে এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নারী।

এদিকে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করা হয়েছে।

২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরের একাডেমি এলাকায় গাড়িতে ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হককে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডটি আলাউদ্দিন নাসিমের পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় অভিযোগে।

বিদ্যুৎ খাতে মাফিয়া সিন্ডিকেটের গডফাদার আলাউদ্দিন নাসিমের হাত ধরে দেশে গত সাড়ে ১৫ বছরে বেসরকারি বিদ্যুৎ খাতে মহালুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। পতিত শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় বিনা পুঁজিতে ব্যবসায়িক পার্টনার হয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের প্রকল্প থেকে বিদেশে পাচার করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা।

ডাচ-বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ৩০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। এস আলমের মালিকানাধীন এসএস পাওয়ার ওয়ান লিমিটেডের মালিকানায়ও নাসিম রয়েছেন।

প্রতি মাসে ব্যাংকে এসএস পাওয়ার থেকে মোটা অঙ্কের চেক নাসিমের এবং তার ওয়াইফ প্রফেসর ডা. জাহানারা আরজু এর নামে জমা হয়। শুধু এই দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নয়, আরো কয়েকটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোন নিয়ে বিদেশে পাচার করেন তিনি। জালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঋণ নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আলাউদ্দিন নাসিম আত্মগোপনে চলে যান। বর্তমানে তারা ভারতে আছেন বলেন জানা গেছে। ফেনীর পরশুরামে ৩০ একর জায়গায় ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত করা হয় আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম কলেজ। জোরপূর্বক ও ভয় দেখিয়ে নামমাত্র মূল্য পরিশোধ করে কলেজের জন্য কৃষিজমির জায়গা দখল করে নেওয়া হয়। ফিল্মিস্টাইলে লাল কাপড় লাগিয়ে এস্কেভেটর দিয়ে শুরু করেন মাটি কাটা। লাল পতাকা টাঙানোর পর বলা হতো, এই জমিগুলো অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। পরে দেখা যায়, অধিগ্রহণ নয়, মানুষ জানতে পারেন দখল করা হয়েছে। নাসিম কলেজের নামে কয়েক বিঘা জমি জোর করে দখল করে নেন। আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধান করে তাকে আইনের আওতায় আনতে দুদক চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com