হাফসা আক্তার :
উত্তরায় বিমান দূর্ঘটনায় মাইলস্টোন ট্রাজেডিতে নিহত ও আহত পরিবারের পাশে থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়াও আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর সরকার গঠন করে তাদের সকল দাবি পুরণের কথা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক।
গতকাল মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর রোডে সদস্য সচিব মোস্তফা জামানের নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত নিহত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আশ্বাস দেন।
সভায় হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী নিহত পরিবারের সদস্যদের ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি ও অন্যান্য মানবিক সহায়তার বিষয়ে আলোচনা হয়।
এ সময় নিহত পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, “সরকার আমাদের কোনো খোঁজখবর নিচ্ছে না, এমনকি হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ক্ষতিপূরণের টাকাটিও আমরা এখনও পাইনি। নানা গড়িমসিতে বিষয়টি দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে।
তারা আরও জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে চান।
আমিনুল হক বলেন, “দুর্ঘটনার শুরু থেকেই বিএনপি তারেক রহমানের নির্দেশে নিহত পরিবারের পাশে রয়েছে। অতি শীঘ্রই তিনি নিজেও আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।”
উপস্থিত ছিলেন, সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, যুগ্ম- আহ্বায়ক এসএম জাহাঙ্গীর,এম কফিলউদ্দিন, আফাজ উদ্দিন, এবিএম রাজ্জাকসহ স্থানীয় আরো অনেক নেতৃবৃন্দ।
প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন,২১ জুলাই ২০২৪ইং মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে ভয়াবহ বিমান দূর্ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতির কারণে আমাদের কোমলমতি অনেক শিশুর অকালে প্রাণ ঝড়ে গেছে। অনেকেই আহত হয়ে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন এবং আমাদের অনেক অভিভাবক,শিক্ষক তারাও মারা গেছেন এই ট্রাজিটিতে।
তিনি বলেন,বিমান দূর্ঘটনার পর পর আমাকে আমার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফোন দিয়েছেন। তিনি সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে ও ফোন দিয়েছিলেন তাৎক্ষণিকভাবে। আমরা সেখানে উপস্থিত হয়ে সেনাবাহিনীর সাথে কথা বলে ফায়ার সার্ভিসের সাথে কথা বলি। আমরা সবাই সেই দুপুর বেলায় উপস্থিত হই। উপস্থিত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে আমরা কথা বলেছি ফায়ার সার্ভিসের যারা প্রতিনিধি ছিল তাদের সাথে কথা বলেছি এবং তাদেরকে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করেছি। আমাদের নেতাকর্মীরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ও কাজ করেছে।
সেনাবাহিনীর সার্বিক সহযোগিতা ও ফায়ার সার্ভিসের সার্বিক সহযোগিতায় আমরা দ্রুত সময়ের ভিতরে দুর্ঘটনা কবলিত এলাকাকে নিয়ন্ত্রণে এনেছি। আমরা চেষ্টা করেছি যে মানুষগুলো মৃত এবং ছোট ছোট বাচ্চা গুলোকে খুজেএবং তাদেরকে বের করে এনে তাদের স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। আমিনুল হক বলেন, অনেকেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন এখনো যারা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়ছেন তাদেরকেও সহযোগিতার প্রয়োজন। আমরা জানি এখানে সবাই রিস ফ্যামিলির ছিলো না। কিছু মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির ছেলেমেয়েরাও ছিল। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েরা হয়তো এখনো আছে, আমাদের এই কোমলমতি শিশুরা এখানে পড়াশোনা করছে। বিমান দূর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের অভিবাবকদের তিনি বলেন, আপনাদের আমি প্রথমে যে বিষয়টি আশ্বস্ত করতে চাই জয়নাল আবেদীন সাহেব উনি অত্যন্ত প্রবীণ একজন এ্যাডভোকেট, অত্যন্ত বরণ্য একজন মানুষ, তিনি যে রিট করেছেন এবং সেই রিট হাইকোর্ট আপনাদের পক্ষে রায় হয়েছে। আমি আপনাদেরকে আশ্বস্ত করতে চাই আপনাদের যে প্রোপজালটি আমি হাতে পেয়েছি আমি হয়তো আপনাদের এই প্রোগ্রামটি শেষ করেই আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বলবো। কথা বলে আমাদের এই সার্বিক বিষয়গুলো তাকে অবগত করব, আমি চেষ্টা করব হাইকোর্টের যে রায় আপনাদের পক্ষে দেওয়া হয়েছে সেই রায়টা যাতে বহাল থাকে আমরা এই বিষয়ে কাজ করবো। এ ছাড়াও অসুস্থ্য পরিবারগুলোর পাশে যাতে সরকার দাঁড়ান, আপনাদের যে ক্ষতিপূরণের দাবি এখানে আছে সে দাবিগুলো যাতে সরকার পূরণ করে, আমি এবং আমার মহানগর বিএনপির সকল নেতৃবৃন্দ আপনাদের পাশে রয়েছি ভবিষ্যৎতে পাশে থাকবে ইনশাল্লাহ। তিনি আবেগে আপ্লূত হয়ে বলেন, শিশুরা যারা নিহত হয়েছেন আল্লাহর তরফ থেকে ইতিমধ্যেই তাদেরকে শহীদি মর্যাদা দান করা হয়েছে। বাস্তবিক অর্থে আমরা বাংলাদেশী হিসাবে বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আপনার মত আমারও দাবী আমাদের সন্তানদেরকে যাতে রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদি মর্যাদা দান করা হয়। আমার পক্ষ থেকে এবং আমার দলীয় চেয়ারম্যান অবশ্যই আশা করি উনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন। আপনারা সকলেই যেটা প্রত্যাশা করেন ইনশাল্লাহ আমাদের পক্ষ থেকে আমাদের শিশুদেরকে যারা পৃথিবী থেকে চলে গেছে তাদেরকে যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদি মর্যাদা দান করা হয়।
আর্থিক সহযোগিতার সর্বাত্মক সহযোগিতার কথা জানিয়ে
তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রায় তিনমাস হয়ে গেছে আমি জানি তাদের সুচিকিৎসার জন্য অর্থের প্রয়োজন হয়, এই তিন মাসে আমি আসলে জানিনা কারা আহত রয়েছেন তাই আপনাদের কাছ থেকে লিস্ট নিলাম যে শিশুরা এখনও আহত অবস্থায় রয়েছে তাদের পরিবার গুলোর সাথে দেখা করবো এবং তাদের সাথে কথা বলবে এবং তাদের সার্বিক চিকিৎসার আমাদের পক্ষ থেকে দলের পক্ষ থেকে সর্বোত্তম সহযোগিতা করবো আপনাদের মাধ্যমে। আমিনুল হক বলেন, যেহেতু আপনার একটা সংগঠন দাঁড় করেছেন এই সংগঠনের মাধ্যমে কাজগুলো শেষ করতে চাই এবং সবগুলো করবো ইনশাল্লাহ ।
তারেক রহমানের সাথে আলাপ করে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে আমিনুল হক বলেন,বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাতের যে অভিমত আপনারা প্রকাশ করেছেন চেষ্টা করব দ্রুত সময়ের মধ্যে তার শত ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে করতে।
আমাদেরকে একটু সময় দেন, আপনারা যারা এখানে নিহত পরিবারের সদস্যরা আছেন, খুব শীঘ্রই আপনারা যারা নিহত পরিবারের সজনরা রয়েছেন, আহত পরিবারের সজনরা রয়েছেন তাদেরকে খুব শীঘ্রই আমরা ডেকে আমাদের চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে একটি সাক্ষাতের ব্যবস্থা করব ইনশাআল্লাহ।অভিভাবক বলেন দলের চেয়ারম্যান বলেন, যাই বলেন আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সব সময় আপনাদের পাশে থাকবে।
চিকিৎসার আশ্বাস দিয়ে
আমিনুল হক বলেন, এখানে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয়ে এখানে যাদের শরীরে বার্ণ হয়ে গেছে কারো হাতে, কারো বুকে, কারো পায়ে, কারো পিঠে এই বার্ণটা কিন্তু যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন তাকে বহন করে যেতে হবে। এখনো যারা বার্ণ অবস্থায় অসুস্থ্য অবস্থায় জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়ছেন, আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি তারা যাতে সুন্দরভাবেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে,সুন্দরভাবে এই সমাজে তারা চলতে পারে। আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি আমাদের বারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাননীয় তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আমাদের প্রত্যেকটি পরিবারের প্রতি সার্বিক সহযোগিতা থাকবে ইনশাআল্লাহ। যে সকল ছেলেমেয়ে নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের প্রতি আমাদের সবসময় সার্বিক সহযোগিতা থাকবে। আমি আপনাদের আবেদন পত্রটি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠিয়ে দিব।জনগণের জন্য যেটা কল্যাণকর উন্নয়ন, উন্নয়নকর মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করি আমাদের এই ছোট ছোট সন্তানরা যারা বর্তমানে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে ইনশাআল্লাহ তাদের ও তাদের পরিবারের সকলের খোঁজখবর আমরা নিব।
আমাদের মাননীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সব সময় আপনাদের পাশে রয়েছে, আপনাদের পাশে থাকবে এবং আপনাদের পরিবার এবং আপনাদের সন্তানদের জন্য ভবিষ্যতে পড়াশুনা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সেবা চিকিৎসা সেবা সব কিছুর ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, আপনাদের সহযোগিতা চাই, আপনাদের এই সহযোগিতার মাধ্যমে যারা সন্তানকে হারিয়েছেন হয়তো সেই সন্তানকে আবার ফিরিয়ে দিতে পারব না, কিন্তু আপনাদের সন্তান হয়ে ভাই হয়ে আপনাদের পাশে থাকতে পারবো। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান এবং বিএনপি আপনাদের পাশে সবসময় থাকবে। তিনি তাদেরকে আশ্বস্ত আরো করে বলেন, আপনারা একটি প্রপোজাল দিয়েছেন ২১ জুলাইকে জাতীয় শিক্ষা শোক দিবস ছুটি নিয়েও আমি আমাদের মাননীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে কথা বলবো, আগামীতে যাতে এটাকে একটি জাতীয় শিক্ষা শোক দিবস ঘোষণার মাধ্যমে আমরা যাতে ছোট ছোট কোমলমতি শহীদ পরিবার গুলোকে সম্মানিত করতে পারি। আপনাদের এই শহীদদের স্মৃতি স্তম্ভ ধরে রাখার জন্য একটি মসজিদ নির্মাণের যে প্রপোজাল দিয়েছেন তা আমি দেখি নির্বাচনের আগে কতটুকু করতে পারি এবং নির্বাচনের পরে আপনারা যা যা দাবি জানিয়েছেন আমরা করার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ ।
এ জাতীয় আরো খবর..