অনলাইন ডেস্ক: আজ ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সংঘটিত সিপাহী ও জনতার বিপ্লবের স্মরণে দিবসটি পালিত হয়। কর্নেল (অব.) আবু তাহেরের নেতৃত্বে সংঘটিত এই বিপ্লব জেনারেল খালেদ মোশাররফের তিন দিনের সরকারের পতন ঘটায়। এই বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান, এবং পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসেন।
কিছু সেনা কর্মকর্তার দ্বারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হবার পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। কিন্তু খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতার নেপথ্যে ছিলেন ১৫ অগাস্টের ঘটনার মূল নায়কেরা। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম) এ ব্যাপারটি মেনে নিতে পারেননি। তিনি তার অনুগত সৈন্য বাহিনী নিয়ে ৩ নভেম্বর মোশতাক সরকারের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান ঘটান। অভ্যুত্থানটি প্রাথমিকভাবে সফলও হয়। কিন্তু তার স্থায়িত্ব ছিল মাত্র তিন দিন। বস্তুত খালেদ মোশাররফ রক্তপাত এড়াতে চেষ্টা করেছিলেন, যা পরবর্তীতে তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।
গত ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানে জেনারেল খালেদ মোশাররফ রক্তপাতহীন ক্যু করতে গিয়ে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে তার নিজ বাসভবনে গৃহবন্দি করেন। কর্নেল (অব.) আবু তাহের সেসময় নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করছিলেন। কর্নেল তাহের ছিলেন জিয়াউর রহমানের একজন বিশেষ শুভাকাঙ্ক্ষী। তিনি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। সৈনিক-অফিসার বৈষম্য তার পছন্দ ছিল না। তার এই নীতির জন্য তাহের সেনাবাহিনীর সাধারণ সৈনিকদের মাঝেও দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন। কর্নেল তাহের বিশ্বাস করতেন জিয়াও তারই আদর্শের লোক।
জিয়া তার বাসভবনে বন্দি হয়ে থাকেন। খালেদ মোশারফের নির্দেশে তাকে বন্দি করে রাখেন তরুণ ক্যাপ্টেন হাফিজুল্লাহ। জিয়ার বাসার টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিন্তু ক্যাপ্টেন হাফিজুল্লাহ একটি ভুল করেন। তিনি ভুলে যান বেডরুমেও একটি টেলিফোন আছে। জিয়া কৌশলে বেডরুম থেকে ফোন করেন তাহেরকে। খুব সংক্ষেপে বলেন ‘সেভ মাই লাইফ’।
তাহের জিয়ার আহ্বানে সাড়া দেন। তিনি ঢাকাতে তার অনুগত ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সিপাহীদের পাল্টা প্রতিরোধ গড়ার নির্দেশ দিয়ে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। খন তার সফরসঙ্গী ছিল শত শত জাসদ কর্মী। কর্নেল তাহেরের এই পাল্টা অভ্যুত্থান সফল হয় ৭ নভেম্বর। কর্নেল তাহের, জিয়াউর রহমানকে বন্দিশা থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসেন। ওইদিনই পাল্টা অভ্যুত্থানে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা জেনারেল খালেদ মোশাররফকে হত্যা করেন।
কথা ছিল, জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের করে আনা হবে। তারপর জাসদের অফিসে তাকে এনে তাহেরদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হবে। পরে সিপাহী-জনতার এক সমাবেশ হবে। সেখানে বক্তব্য দেবেন জিয়া আর তাহের। কিন্তু মুক্ত হওয়ার পরে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। জিয়া ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হতে সম্মত হন না। ঊর্ধ্বতন সামরিক অফিসাররা তাকে পরামর্শ দিতে থাকেন। তাহের জিয়াকে ভাষণ দিতে বলেন। জিয়া ভাষণ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
তাহের বুঝতে পারেন জিয়া তাদের সঙ্গে আর থাকছেন না। তিনি পুনরায় সংগঠিত হতে থাকেন। কিন্তু জিয়া বুঝতে পারেন ক্ষমতায় টিকতে হলে তাহেরসহ জাসদকে সরাতে হবে। সেই অনুযায়ী গ্রেফতার হতে থাকেন জাসদের সব নেতা। তাহেরও গ্রেফতার হন। শুরু হয় এক প্রহসনের বিচার। গোপন আদালতে চলতে থাকে সেই বিচার।
১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই কর্নেল তাহেরের ফাঁসি হয়। অন্য নেতাদের বিভিন্ন মেয়াদের জেল হয়। ৭ নভেম্বরের বিপ্লবের কারিগর ছিলেন তাহের। আর তার ফলে ক্ষমতায় বসেন জিয়া।
‘বিপ্লব ও সংহতি’ -শব্দটি সাধারণত সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের স্লোগান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে বর্তমানে দিনটিকে মূলত জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দল বিএনপি ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে।
এদিকে জাসদের পক্ষ থেকেও ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার অভ্যুত্থান দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। তবে দলটির পক্ষ থেকে মনে করা হয় জেনারেল জিয়ার বিশ্বাসঘাতকতায় দিবসটি কালিমালিপ্ত।
অপরদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক দলসমূহ দিবসটি মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস হিসেবে অভিহিত করলেও কোনো কর্মসূচি পালন করে না।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল -জাসদ আজ বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে কর্নেল তাহের মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারসহ জাসদ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ এতে বক্তব্য দেবেন।
খালেদ মোশাররফ ট্রাস্ট আজ সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে সংবাদ সন্মেলন এবং ‘অভিমত প্রকাশ’ এর আয়োজন করেছে। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করবেন খালেদ মোশাররফ এর জেষ্ঠ কণ্যা ও সাবেক সংসদ সদস্য মাহজাবিন খালেদ।