বিশেষ প্রতিবদেক: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতি আহ্বান থাকবে, যেই অবৈধ সম্পদ অর্জনের সঙ্গে জড়িত থাকুক, তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। সাধারণ মানুষের ‘হক’ যাতে কেউ কেড়ে নিতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করছি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির নির্মূল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দুর্নীতি বন্ধে জনগণের অংশগ্রহণ জরুরি। মানুষ সচেতন হলে, দুর্নীতি আপনা-আপনি কমে যাবে।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বর্তমান সরকারের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের স্মরণ আছে, গত বছর সরকার গঠনের পর জাতির উদ্দেশে ভাষণে আমি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের শোধরানোর আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করি। মানুষের কল্যাণের জন্য আমি যেকোনো পদক্ষেপ করতে দ্বিধা করবো না।
তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমি আবারও সবাইকে সতর্ক করে দিতে চাই, দুর্নীতিবাজ যেই হোক, যত শক্তিশালীই হোক না কেন তাকে ছাড় দেয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তার রোধে আমাদের পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উল্লেখযোগ্য সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। দেশবাসী এজন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী দেশসমূহ এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে সব সময়ই সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলার নীতিতে বিশ্বাসী। জাতির পিতা প্রণীত পররাষ্ট্র নীতির সারকথা, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়- এর ভিত্তিতেই আমাদের পথচলা। বিশেষ করে প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক ও সৌহার্দ্য বজায় রাখাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। আলোচনার মাধ্যমে আমরা দ্বিপাক্ষিক সমস্যা সমাধান করতে চাই। এটি আমাদের দুর্বলতা নয়, কৌশল।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এ কারণেই মিয়ানমারের দিক থেকে নানা উসকানি সত্ত্বেও আমরা সে ফাঁদে পা দেইনি। আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের পথ থেকে সরে যাইনি। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে মামলা হয়েছে। আমরা আশা করছি, এই আদালত থেকে আমরা একটি স্থায়ী সমাধান সূত্র খুঁজে পাব।
তিনি বলেন, আর্থসামাজিক খাতে অব্যাহত উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। যার সাক্ষ্য মেলে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের প্রতি বৈশ্বিক সমর্থনের মধ্য দিয়ে। সম্প্রতি ইকোসক, সিএফসি, সিআইএপি, এপিডিআইএম-সহ বেশকিছু আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশ নির্বাচিত হয়েছে। এ বছরও জাতিসংঘে বাংলাদেশ উত্থাপিত ‘শান্তির সংস্কৃতি’ এবং ‘প্রাকৃতিক উদ্ভিজ্জ তন্তু ও টেকসই উন্নয়ন’ শীর্ষক রেজুলেশনসহ রোহিঙ্গা বিষয়ক বেশ কয়েকটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। পবিত্র ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা করে কেউ যাতে তরুণদের বিপথে পরিচালিত করতে না পারে, সেজন্য মসজিদের ইমামসহ ধর্মীয় নেতাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। সারা দেশে ৬৫০টি মজজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যেখানে হিংসা-বিদ্বেষ হানাহানি থাকবে না। সকল ধর্ম-বর্ণ এবং সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন। সকলে নিজ নিজ ধর্ম যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করতে সক্ষম হচ্ছেন।