ধর্ম ডেস্ক: মানুষের অপরাধ হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ভালো ও মন্দ কাজের মধ্যেই মানুষ জীবন অতিবাহিত করে থাকে। মানুষের এসব ভালো কাজে রয়েছে সাওয়াব আর মন্দ কাজে রয়েছে ক্ষতি। কিন্তু ভালো ও মন্দ কাজের পরিণতি যা-ই হোক না কেন, এসবের রয়েছে শারীরিক উপকার ও ক্ষতি। হাদিসের বর্ণনা এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সাওয়াবের কাজ হলো-
– চেহারার উজ্জ্বলতা;
– অন্তরের আলো;
– রিজিকের প্রশস্তি;
– শরীরের শক্তি ও
– মানুষের অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টিকারী।
আর গোনাহ হচ্ছে-
– চেহারার কলুষতা;
– অন্তরের অন্ধকার;
– শরীরের দুর্বলতা;
– রিজিকের সংকট ও
– মানুষের অন্তরে বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী।’
মানুষের উচিত বেশি বেশি ভালো তথা সাওয়াবের কাজ করা এবং মন্দ তথা গোনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা। আর এ দুটি কাজই তাওবাহ ও ইসতেগফারের মাধ্যমেই সম্পন্ন করা সম্ভব।
সুতরাং যারা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে জীবন অতিবাহিত করেন। আল্লাহকে ভয় করেন। কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করেন না। শারীরিক উপকার ছাড়াও তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
‘প্রতিপালকের কাছে উপস্থিত হতে ভয় করে এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে, জান্নাতই হবে তার আবাস।’ (সুরা নাজিয়াত : আয়াত ৪০-৪১)
তবে মানুষ যে ভুল করবে না, এমন নিশ্চয়তা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ প্রকৃতিগতভাবেই মানুষ দুর্বল এবং বিপরীত বা মন্দ কর্মের প্রতি আসক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই মানব মন মন্দকর্ম প্রবণ।’ (সুরা ইউসুফ : আয়াত : ৫৩)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক আদম সন্তান ত্রুটিশীল ও অপরাধী, আর অপরাধীদের মধ্যে উত্তম তারা যারা তওবা করে।’ (তিরমিজি)
তাই শারীরিক ক্ষতি থেকে বাঁচতে গোনাহমুক্ত জীবন গঠনের বিকল্প নেই। যখনই কোনো অন্যায় বা গোনাহ সংঘটিত হবে, সঙ্গে সঙ্গে তাওবাহ ও ইসতেগফারের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। আর তাতে শারীরিক থেকে মিলবে মুক্তি।
মানুষের ভালো কাজ যেমন জীবনকে আলোকিত করে তেমনি গোনাহের কাজ তাদের জীবনকে করে দেয় অন্ধকার। তাই মানুষের কর্তব্য হল পাপের জন্য সঙ্গে সঙ্গে তওবাহ করে নেয়া। তওবাহ করলে আল্লাহ তাআলা বান্দার ওপর অত্যন্ত খুশি হন। হাদিসে এসেছে-
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তওবায় আল্লাহ তাআলা এই পরিমাণ খুশি হোন যে, যেমন ধর- তোমাদের কেউ গরম মরুভূমিতে গাছের সঙ্গে উট বেঁধে ঘুমিয়ে পড়ল। সে উটের সঙ্গে তার খাদ্য-পানীয়সহ সব আসবাবপত্র ছিল। ঘুম থেকে জেগে দেখল তার উটটি যথাস্থানে নেই। এদিক ওদিক খুঁজে কোথাও পাওয়া গেল না। যখন সে একেবারে নিরাশ হয়ে গেল। তখনই দেখল তার উটটি যথাস্থানে রয়েছে। এমন মুহূর্তে সে ব্যক্তি যতটুকু খুশি হবে, ঠিক কোনো বান্দা তওবাহ করলে আল্লাহ তাআলা তার চেয়েও বেশি খুশি হন।’ (মুসলিম)।
সুতরাং তাওবাহ করাও সাওয়াবের কাজ। আর তাতে শারীরিক ক্ষতির পরিবর্তে মিলবে উপকার। বাড়বে রিজিক। তাজা হবে ঈমান। যেমনটি মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
‘যারা তাওবা করে, ঈমান আনে এবং ভালো কাজ করে, আল্লাহ তাআলা তাদের খারাপ কাজগুলোকে ভালো কাজে পরিণত করে দেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর যারা তওবাহ করে এবং নেক কাজ করে আল্লাহর প্রতি তাদের তাওবাহ-ই সত্যিকারের তাওবা।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৭০-৭১)
সুতরাং শারীরিক ক্ষতির পরিবর্তে উপকার লাভে গোনাহমুক্ত জীবন খুবই জরুরি। এর জন্য তাওবাহ ও ইসতেগফারের বিকল্প নেই। এ তাওবাহ ও ইসতেগফারের জন্য কোনো ক্ষণ, দিন, সপ্তাহ, মাস বা বছরের অপেক্ষা করার সুযোগ নেই। যখনই অপরাধ হবে তখনই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে সমূহ ক্ষতি থেকে বাঁচতে হবে। ফিরে আসতে হবে আল্লাহর দিকে।
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের গোনাহমুক্ত জীবন লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।