হুইপপুত্রের গোপন ব্যবসায় বলি হলেন তরুণ ব্যাংকার ও ব্যবসায়ী আবদুল মোর্শেদ চৌধুরী। ২৫ কোটি টাকার ঋণের বিপরীতে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেও নিষ্কৃতি মেলেনি এই ব্যাংক কর্মকর্তার। তাকে বেছে নিতে হয়েছে আত্মহননের পথ। এ ঘটনা নিয়ে বন্দরনগর চট্টগ্রামে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
অনুসন্ধানকালে ঘটনার নেপথ্যে নতুন নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে। কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে সাপ। তরুণ ব্যাংকার আবদুল মোর্শেদ চৌধুরী মৃত্যুর সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়েছেন ওই ব্যাংকারের স্ত্রী শিক্ষিকা ইশরাত জাহান চৌধুরী ও মা নুরনাহার।
জানা যায়, জাতীয় সংসদের আলোচিত হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর পুত্র নাজমুল হক চৌধুরী ওরফে শারুন চৌধুরী এর আগেও নানা কারণে বিতর্কিত। অস্ত্র উঁচিয়ে ফেসবুকে মহড়ার ছবি প্রকাশ, কখনো গোপন আস্তানায় আকণ্ঠ পানীয়ে ডুবে থাকা, কিংবা পিতার চেয়েও বয়স্ক মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতাকে ‘থাপ্পড় মেরে দাঁত ফেলে দেওয়া’র হুমকি- এমন বিতর্কের কোনো শেষ নেই তাকে নিয়ে। এই শারুন চৌধুরী এবার নিজেকে জড়ালেন তরুণ ব্যাংকারের মৃত্যু বিতর্কে।
সূত্র জানান, নানা গোপন ব্যবসায় জড়িত শারুন চৌধুরীসহ তার কয়েক বন্ধু। তাদের সে ব্যবসায় ধার নিয়ে পুঁজি খাটিয়ে আসল ও সুদসহ বিপুল টাকা পরিশোধ করেও সরল বিশ্বাসের বলি হন ব্যাংকার আবদুল মোর্শেদ চৌধুরী। সরল বিশ্বাসে জমা দেওয়া জামানতের চেক ফিরিয়ে নেননি তিনি। এতে ওইসব চেকের বিপরীতে বারবার লাভের টাকা দাবি করে চক্রটি। অব্যাহত রাখে বাসায় হামলা, উপর্যুপরি মামলা, অপহরণসহ নানা হুমকি। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবেও চাপ দেওয়া হয়। নানামুখী চাপে উদ্ভ্রান্ত ওই ব্যাংকার বাধ্য হয়ে আত্মহত্যা করে মুক্তি খোঁজেন। অবিরত হুমকিতে ভীতসন্ত্রস্ত এই তরুণের আত্মহত্যার নেপথ্যের সত্যতা খুঁজতে পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থাকে (ডিবি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
স্ত্রী ইশরাতের অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেই এ আত্মহননের পূর্বাপর ঘটনায় নানা পর্যায়ে পাওয়া গেছে যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও চিটাগাং চেম্বারের বর্তমান ও সাবেক দুই পরিচালকসহ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কয়েক নেতার নাম। ব্যবসায় পুঁজি লগ্নি এবং পরে মানসিক চাপে আত্মহত্যার এ ঘটনার আগে মধ্যস্থতায় উদ্যোগী হন একজন সাবেক এমপিও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হন ওই ব্যাংকার, যা তার সুইসাইড নোটে স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে।
আত্মহত্যার ঘটনায় চারজনকে আসামি করে ইশরাত জাহান চৌধুরী বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। মামলায় নির্যাতন-আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ উঠেছে যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল হক চৌধুরী রাসেল, চিটাগাং চেম্বারের সাবেক দুই পরিচালক জাবেদ ইকবাল, তার ভাই পারভেজ ইকবাল এবং নাইম উদ্দিন সাকিব নামে চারজনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ দায়েরের পাঁচ দিন পার হলেও আসামিরা রয়ে গেছেন গ্রেফতারের বাইরে। পাঁচলাইশ থানার ওসি আবুল কাশেম ভুইয়া জানান, ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে আসামিদের বিরুদ্ধে নিজের ও তার স্বামী-সন্তানের পাসপোর্ট আটকে রাখার অভিযোগ করেছেন ইশরাত জাহান। তার অফিস ও বাড়িতে দফায় দফায় হামলা, মামলা ও অপহরণের হুমকির অভিযোগ এনেছেন অসহায় এই নারী।
ঘটনার পরম্পরা : ২০১৯ সালের ২৯ মে চিটাগাং চেম্বারের সাবেক দুই পরিচালক হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে দুটি গাড়িতে করে ১০-১২ জন যুবক ব্যাংকার মোর্শেদের বাসায় আসে। পারভেজ ইকবাল দলের অন্যদের নিয়ে লিফ্ট বেয়ে ওপরে উঠে বাসার দরজা ধাক্কাতে থাকেন। এ সময় দরজা খুলতে না চাইলে লাথি মারতে থাকেন। নিজের ও শিশু কন্যার নিরাপত্তার জন্য দরজা খুলতে না চাইলেও দরজার অন্য প্রান্ত থেকে হুমকি দিয়ে পারভেজ ইকবাল দরজা খুলতে চাপ দিতে থাকেন। উত্তেজিত পারভেজ ব্যাংকারের স্ত্রীর উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘আমরা আপনাকে আটকে রেখে ওকে (মোর্শেদ) আনব।’ এ সময় ভবনটির নিচে নেমপ্লেটবিহীন গাড়িতে হুইপপুত্র শারুন চৌধুরী ও সাবেক ছাত্রনেতা আরশেদুল আলম বাচ্চু বসা ছিলেন বলেও জানান তিনি। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ব্যাংকার মোর্শেদ তার স্ত্রী-সন্তানসহ পালিয়ে নিকটাত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেন। সহযোগিতা চান পুলিশের কাছে। থানায় জিডিও করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা পাননি মোর্শেদ। পরিবারটি এখনো চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
ইশরাত বলেন, ‘২০১৮ সালের মে মাসে আমার স্বামীকে পাঁচলাইশের এমএম টাওয়ারে নিয়ে যান সৈয়দ সাকিন সাঈম উদ্দীন। সেখানে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শারীরিক নির্যাতন, আমাকে বেঁধে ১২ কোটি টাকা অতিরিক্ত দাবি করে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে সই নেওয়া হয়েছিল। আমার ও মেয়ের পাসপোর্ট নিয়ে নেওয়া হয়। ২০১৯ সালে বাসায় হামলার ব্যাপারে মামলা করা হয়। বাসায় আক্রমণ, মেয়েকে অপহরণ, আমার স্বামীকে খুন করবে বলে অনেকবার প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া হয়। আপস ও আলোচনার কথা বলে ২০১৯ সালে ২৭ সেপ্টেম্বর সাকিব অস্ত্রের মুখে ৮৪টি চেকে জোরপূর্বক সই নিয়ে নেন। আমাদের ছয়টি অলিখিত ও স্বাক্ষরিত ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্প রয়েছে তাদের কাছে।’
ইশরাত বলেন, ‘হুমকিদাতাদের অর্থবিত্ত এবং রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে আমরা চরম অসহায়। আমি নিজের ও মেয়ের জীবন-মানইজ্জত নিয়ে চরম শঙ্কিত।’ তিনি বলেন, ‘মিথ্যে পাওনার দাবিতে সাকিব আমার ও আমার স্বামীর বিরুদ্ধে আটটি মামলা করেছিলেন। অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় সবকটি মামলায় আমি খালাস পেয়েছি। আমার স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগও খালাসের প্রক্রিয়ায় ছিল।’
পুলিশ সবকিছুই জানত : ইশরাত জাহান চৌধুরী বলেন, ‘সবকিছুই পুলিশ জানত। ডিসি অফিসে সমঝোতা বৈঠক ও চুক্তি হয়। বাচ্চুসহ উপস্থিত থেকেই চুক্তি হয়।’
এ ব্যাপারে সিএমপির ডিসি বিজয় বসাক বলেন, ‘ব্যাংক কর্মকর্তা মোর্শেদ ও তার স্ত্রী তাদের বাসায় হামলার ঘটনায় জিডি করার পরই উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতার জন্য এসেছিলেন। বাসায় হামলার পরই বৈঠক হয়। উভয় পক্ষের হয়ে সমঝোতার মধ্যস্থতাকারী নিকটাত্মীয় ব্যবসায়ী আজম খান, মোর্শেদ ও তার বড় ভাই আশরাফ একাধিক সমঝোতা বৈঠকে বসেন। পারভেজ ইকবালরা পাওনার জন্য মামলা করে মোর্শেদের ব্যাংকের চাকরিচ্যুতি এবং তার স্ত্রীকে চাকরিতে যেতে বাধা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘মামলা করলে চাকরির ক্ষেত্রে সমস্যা হবে- এমনটি জানিয়ে মোর্শেদ সহযোগিতা চাইলে দুই পক্ষে সমঝোতার চেষ্টা করি। দুই পক্ষের সমঝোতার কাগজ অনুযায়ী দেনা পরিশোধ প্রক্রিয়া হচ্ছিল।’
যুবনেতার হুমকি : এ ঘটনার প্রায় দুই বছর পরও দফায় দফায় আসল ও সুদ পরিশোধের পরও অতিরিক্ত টাকার জন্য যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল টেলিফোনে চাপ দিতে থাকেন বলে অভিযোগ করেন ব্যাংকার মোর্শেদের স্ত্রী ইশরাত। পারভেজ ও জাভেদের হয়ে টেলিফোনে রাসেলের হুমকির এক দিন পরই ব্যাংক কর্মকর্তা মোর্শেদ আত্মহত্যা করেন। তাই মামলায় রাসেলকে অভিযুক্ত করা হয় বলে জানান ইশরাত। এ-সংক্রান্ত অডিও রেকর্ডে রাসেলকে বলতে শোনা যায়, ‘বিজয় (পুলিশের ডিসি বিজয় বসাক) পুলিশে চাকরি করে। আজ এখানে আছে তো কাল চলে যাবে। আমি কিন্তু চট্টগ্রামে থাকব। আমার সঙ্গে এগুলো করলে বিপদ হয়ে যাবে।’ টেলিফোনে হুমকির প্রসঙ্গে যুবনেতা রাসেল জানান, তার ছোটবেলার বন্ধু জাবেদ ইকবালের অনুরোধে দুই পক্ষের অঙ্গীকারনামা দেখে তিনি মধ্যস্থতা করতে রাজি হন।
ব্যবসা নিয়ে ধোঁয়াশা : মুঠোফোন আলাপচারিতায় প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যেই দেনা পরিশোধের ব্যাপারে বারবার আশ্বস্ত করতে গিয়ে মোর্শেদ এই যুবনেতাকে বলতে থাকেন এক কাস্টমারের কথা। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কে সেই কাস্টমার? এত কোটি টাকা বিনিয়োগ কোন ব্যবসায় করা হয়েছিল তা কি জানতেন? এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি যুবলীগ নেতা রাসেল।
কীভাবে যুক্ত হলেন হইপপুত্র : কী ব্যবসা ছিল তাদের? এটি কি সুদের লগ্নির ব্যবসা? যদি তা হয়ে থাকে তাহলে এখানে হুইপপুত্র কিংবা অন্যদের কার মূলধন বা লভ্যাংশ আসলে ছিল কত? প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এসব নিয়ে। হুইপপুত্র শারুন চৌধুরী কীভাবে এ ব্যবসা বা লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত হলেন তা অনুসন্ধানকালে উঠে এসেছে নানা তথ্য। মোর্শেদের স্ত্রী ইশরাত বলেন, ‘শারুনের সঙ্গে সরাসরি আমার স্বামীর কোনো লেনদেন ছিল না।’ মোর্শেদের সঙ্গে সরাসরি লেনদেন না থাকলেও শারুন চৌধুরী, বাচ্চু ও রাসেল কেন এ রকম টর্চার করলেন তার জবাব মিলছে না জানিয়ে ইশরাত বলেন, ‘শারুন চৌধুরী কেন উপর্যপুরি সক্রিয় হলেন এ নিয়ে জানতে মোর্শেদই একদিন প্রশ্ন করেছিলেন। সে প্রশ্নে শারুন তখন জবাব দিয়েছিলেন, সরাসরি লেনদেন আমি করিনি। পারভেজের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেছি।’
আরেক এমপির মধ্যস্থতা : ইশরাত বলেন, ‘দলবল নিয়ে বাসায় হামলার পর আমরা নিকটাত্মীয় ব্যবসায়ী আজম খানের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। তিনি মধ্যস্থতায় এগিয়ে আসেন। একপর্যায়ে সীতাকুন্ডের এমপি দিদারুল আলমও ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হিসেবে মধ্যস্থতার চেষ্টা করেন।’ এমপি দিদারুল আলম জানান, তার কন্যার শ্বশুরবাড়িতেও একবার জাভেদ ইকবাল অনুরোধ করেন সমঝোতার। ‘কিন্তু শেষ পর্যন্ত জাভেদ ইকবালের ভাই পারভেজের অনাগ্রহে এমপি দিদারের সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়’ বলে জানান মোর্শেদের স্ত্রী।
শারুন চৌধুরী এ প্রক্রিয়ায় কীভাবে যুক্ত হলেন জানতে চাইলে এসপি বিজয় বসাক জানান, ‘জামানত বাবদ চেক গ্রহণের বিপরীতে ব্যবসায় পারভেজের মাধ্যমে শারুন বিনিয়োগ করে এবং পারভেজকে তার পাওনা টাকার জন্য চাপ দেয়। যেহেতু মোর্শেদের কাছে সরাসরি পাওনাদার নয়, সেহেতু সমঝোতা বৈঠকে শারুনকে আসতে দেওয়া হয়নি।’
এমপি দিদারুল আলম বলেন, ‘মোর্শেদ কিছু শেয়ার ব্যবসা করত বলে আমি জেনেছি।’ অন্যদিকে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য পারভেজ ইকবালদের হয়ে ফোন করা সেই যুবলীগ নেতাও এ ব্যবসার ধরন কিংবা লগ্নিকৃত টাকা কোথায় বিনিয়োগ করেছে তা জানেন না বলে জানান। সাবেক ছাত্রনেতা আরশেদ বাচ্চুও বলেন, ‘ওরা কীসের ব্যবসা করত তাও জানি না।’
এদিকে এত বিপুল অর্থের পুঁজি বিনিয়োগের এ ব্যবসাটি কীসের, তার ধরন নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আসেনি কথিত পাওনাদার পারভেজ ও জাবেদ ইকবাল এবং নাইম উদ্দিন সাকিবদের আইনজীবীদের সংবাদ সম্মেলনে। সেখানে শুধু ‘ভালো লাভের বিনিয়োগে’র কথাই বলা হয়েছে। মোর্শেদের স্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ওরা টাকা খাটিয়েছে। কোথায় খাটিয়েছে সেটা ওরাই বলুক।’
পারভেজের দাবি মেনে নেন মোর্শেদ : আজম খান বলেন, ‘মৃত্যুর আগে ৭ এপ্রিল এক দফায় ২ কোটি টাকা লেনদেনের কথা হয়েছিল। এ টাকা ব্যাংকে ট্রান্সফার দেওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছিলেন মোর্শেদ।’ তিনি বলেন, ‘এর পর থেকে পারভেজ ও জাভেদদের ফোন করেও আর পাওয়া যায়নি।’
আজম বলেন, ‘আমি মধ্যস্থতা করার পর থেকে সাড়ে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা সুদসহ পেমেন্ট হয়েছে। এরপর ৭ কোটি টাকা দাবি করছিলেন পারভেজ। মোর্শেদ এগ্রিও করেছিল।’ এমপি দিদারুল আলম বলেন, ‘২০১৩-১৪ সাল থেকেই এ লেনদেনটি হয়ে আসছিল বলে জেনেছি।’
শারুন-বাচ্চুর সম্পৃক্ততা : ব্যাংকার মোর্শেদ চৌধুরীর সঙ্গে এ বিনিয়োগ, বাসায় হামলা, টাকা উদ্ধার প্রক্রিয়ায় শারুনের সঙ্গে বাচ্চুর নাম উঠে এসেছে। একাধিক মুঠোফোন আলাপ ও পুলিশের ডিসির কক্ষে অনুষ্ঠিত সমঝোতা বৈঠকে বাচ্চুর উপস্থিত থাকার তথ্য পাওয়া যায়। শারুন ও বাচ্চুর এক সমঝোতা বৈঠকে বসার কথা স্বীকার করেন আজম খান।
অভিযোগ প্রসঙ্গে হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীর মতামত জানান চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করে বাচ্চু বলেন, ‘পুলিশের ডিসি বিজয় বসাক বাবুর অফিসে আমি এ বৈঠকের জন্য যাইনি। কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি গঠন বিষয়ে অহিদ ভাই (অহিদ শহীদ সিরাজ স্বপন)-এর সঙ্গে কাজ নিয়েই সিএমপির ডিসি অফিসে গিয়েছিলাম।’
কেন আসামি নন শারুন ও বাচ্চু? তবে কেন এ মামলায় হইপপুত্র শারুন চৌধুরী কিংবা সাবেক ছাত্রনেতা আরশাদ বাচ্চুকে আসামি করা হলো না? এ প্রশ্নের জবাবে মোর্শেদের স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরী বলেন, ‘শারুন চৌধুরী ও বাচ্চু ২০১৯ সালে বাসায় হামলার ঘটনায় উপস্থিত থাকলেও এদের সঙ্গে সরাসরি মোর্শেদের টাকার লেনদেনের কোনো প্রমাণ নেই। অডিও ভয়েস কিংবা অন্য কোনো সম্পৃক্ততার প্রমাণ আছে কিনা তা পরে হয়তো পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসতে পারে।’ ইশরাত বলেন, ‘আমি সাক্ষ্য-প্রমাণ হাতে নিয়েই কাউকে অভিযুক্ত করতে চাই। তা ছাড়া বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করে বের করে আনলেই যথার্থ হয়।’
সুইসাইড নোট : ইশরাত জাহান চৌধুরী অভিযোগ করেন, ‘আমার স্বামী মোর্শেদ ব্যবসার জন্য বিভিন্ন দফায় ২৫ কোটি টাকা ধার নেন। বিপরীতে তাদেরকে লাভসহ ৩৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু তারা বেশি লভ্যাংশের দাবিতে স্বামীর ওপর মানসিক চাপ, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। অনৈতিক মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে মোর্শেদ আত্মহত্যা করেন। সুইসাইড নোটে তিনি সব ঘটনা বলে গেছেন।’ সুইসাইড নোটে মোর্শেদ উল্লেখ করেন, ‘আর পারছি না। সত্যি আর নিতে পারছি না। প্রতিদিন একবার করে মরছি। কিছু লোকের অমানুষিক প্রেসার আমি আর নিতে পারছি না। প্লিজ, সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমার জুমকে (মেয়ে) সবাই দেখে রেখ। আল্লাহ হাফেজ।’
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন