গত ২৬ এপ্রিল গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে মারা যান মুনিয়া। মুনিয়ার মৃত্যুর পরপরই তার বড় বোন নুসরাত তানিয়া আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ নিরপেক্ষভাবে মামলা তদন্ত করছে এবং এরকম একটি ঘটনার পর যত দ্রুত সম্ভব তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার সেটি পুলিশ করেছে এবং পুলিশের এ ভূমিকা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। পুলিশ এই মামলা তদন্তের জন্য যা যা করা দরকার সবকিছু করেছে। কিন্তু নুসরাত তানিয়া যিনি এই মামলার অন্যতম বাদী তিনি এতে সন্তুষ্ট নন। বরং এখন তিনি পুলিশকেই হুমকি দিচ্ছেন এই মামলার বিষয়ে। নুসরাত যেভাবে চান সেভাবে যেন মামলার গতি প্রকৃতি নির্ধারিত হয় এটি নুসরাত চাইছেন। কিন্তু পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য যা যা প্রয়োজন সেটিই করছে। এ নিয়েই নুসরাতের সাথে এখন তদন্তকারীদের মতপার্থক্যের খবর পাওয়া গেছে এবং এইসব মতপার্থক্যে নুসরাত পুলিশদেরকে হুমকি এবং ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নুসরাত তানিয়া পুলিশের বিরুদ্ধে এখন প্রকাশ্যে কথা বলছেন। একাধিক টকশোতে তিনি বলেছেন যে, পুলিশ যথাযথভাবে মামলা তদন্ত করছে না। অথচ বাংলাদেশে এ ধরনের আত্মহত্যার পরপরই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেওয়ার আগে কখনো কোনো মামলা হয়েছে কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর যদি খোঁজা যায় তাহলে দেখা যাবে যে এটি বাংলাদেশের অপরাধ তদন্তের ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। নুসরাত তানিয়া অভিযোগ করেছেন যে, পুলিশ তাকে ডেকে তার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যেকোনো একটি আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার অনেকগুলো দিক থাকে এবং যেহেতু নুসরাত কেবল এই মামলার বাদী নন, তিনি মুনিয়ার অফিশিয়াল গার্ডিয়ান এবং নুসরাতের ভাড়া করা বাড়িতেই মুনিয়া থাকতেন, সেহেতু এই মামলায় অনেক ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ আসে এবং এ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর নুসরাত তানিয়াকেই দিতে হবে।
যেমন মুনিয়া কেমন করে এত দামী একটি বাসায় থাকতেন এই প্রশ্নের উত্তর নুসরাতকে দিতে হবে। মুনিয়া কিভাবে চলতেন এই প্রশ্নের উত্তর নুসরাতকে দিতে হবে। নুসরাত সবকিছু জেনে কেন সে সময় ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, একজন অভিভাবক হিসেবে সেই প্রশ্নের উত্তরও নুসরাতকেই দিতে হবে। কিন্তু এই সমস্ত প্রশ্ন যখন সামনে চলে আসছে তখন নুসরাত তা এড়িয়ে যাচ্ছেন এবং তদন্তকারীদেরকে সহযোগিতা করছেন না। বরং নুসরাত তার নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এই মামলাকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলে। সেটা করতে না পেরে তিনি এখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর নানারকম চাপ সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন মহলকে বলেছেন যে, পুলিশের বিরুদ্ধেও তিনি মুখ খুলবেন। ইতিমধ্যে তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে কিছু কিছু কথাবার্তা গণমাধ্যমে বলেছেন। সামনে আরো বলবেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। নুসরাত তানিয়াই এই ঘটনার পর আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা করার জন্য থানায় গিয়েছিলেন। এখন নুসরাত তানিয়া অন্য কথা বলছেন। তিনি বলছেন যে, এটি আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা হবে না হত্যা মামলা হবে এটি পুলিশই তাকে বলে দিয়েছে।
নুসরাত তানিয়া একজন ব্যাংকের কর্মকর্তা, শিক্ষিত নাগরিক। কাজেই পুলিশ তাকে যেভাবে বলবে সেভাবে তিনি মামলা করবেন এটা তো হতে পারে না। আসলে নুসরাতকে ব্যবহার করছে যে মহলটি সেই মহলটি তাদের লক্ষ্য এবং স্বার্থ উদ্ধার না হওয়ার কারণে এখন ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং তারা মনে করছেন যেকোন প্রকারে যেন এই মামলায় কোন বিশেষ ব্যক্তিকে ফাঁসিয়ে দেওয়া যায়। সেটি যখন সম্ভব হচ্ছে নি তখন তারা পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল গ্রহণ করছে এবং চাপ সৃষ্টির কৌশলে তারা যুদ্ধাপরাধী এবং স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির দ্বারা পরিচালিত কিছু অনলাইন প্লাটফরমকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলছে যে, তারা নির্মোহভাবে এবং নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করছেন এবং তদন্তের স্বার্থে যাকে যতটুকু জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার এবং যে তথ্যগুলো উদ্ধার করা দরকার তার সবগুলোই তারা উদ্ধার করবেন। এতে কেউ যদি রুষ্ঠ হয় তাহলে আমাদের কিছু করার নাই। আর যদি কেউ ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য কোন মামলা করে থাকেন তদন্তে সেটা বেরিয়ে আসবে এবং তখন তার বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর এ কারণেই এখন নুসরাত একটু অস্থিরতায় ভুগছেন। কারণ তিনি এই মামলা করে যেভাবে লাভবান হতে চেয়েছিলেন পুলিশের নিরপেক্ষ এবং বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। আর তাই এখন পুলিশের ওপরই রুষ্ঠ নুসরাত।