ধর্ম ডেস্ক : ফজরের পর অল্প সময় ও ছোট্ট আমলের বিনিময়ে রয়েছে পূর্ণ একটি হজ ও একটি ওমরার সাওয়াব। অল্প সময়ে গুরুত্বপূর্ণ এ ছোট্ট আমলটি করতেন বিশ্বনবি। কী সেই ছোট্ট আমল?
মদিনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাত যাপন শেষে ফজর নামাজ আদায় করতেন। ফজরের নামাজের পর পূর্বাকাশে সূর্যের আভা ওঠা পর্যন্ত এ অল্প সময় ফজরের নামাজের স্থানে অবস্থান ও জিকিরে নিয়োজিত থাকতেন বিশ্বনবি। তারপর তিনি দুই রাকাআত নামাজ আদায় করতেন। হাদিসের নিয়মিত এ আমলের সুস্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায়।
১. সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান : হজরত জাবের বিন সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাজের পর উত্তমরূপে সূর্যোদয় পর্যন্ত নামাজের স্থানেই বসে থাকতেন।’ (মুসলিম)
২. দুই রাকাতআত নামাজ ও সাওয়াব : অতপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দুই রাকাআত সুন্নাত নামাজ পড়ার জন্য তার উম্মতকে উৎসাহ প্রদান করেন, এবং এতে যে সাওয়াব রয়েছে তাও স্মরণ করিয়ে দেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন ‘যে ব্যক্তি জামাআতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করে (মসজিদে নামাজের স্থানে বসে) বসে আল্লাহর জিকিরে মশগুল থেকে সূর্য উদয় হওয়ার পর দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করবে, সে পরিপূর্ণ এক হজ্জ ও ওমরার সওয়াব পাবে। (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘পরিপূর্ণ’ এ কথাটি তিনি তিনবার বলেছেন।’ (তিরমিজি)
অতঃপর আরো নামাজ ও আমল : ফজরের পর পর দুই রাকাআত নফল (ইশরাক) নামাজ পড়ার পর চাশতের নামাজের সময় হয়। দ্বিপ্রহর হবে হবে ভাব এমন সময়। যখন সূর্যের তাপের প্রখরতা বাড়তে থাকে। তাপে মুখ পুড়ে যাবার উপক্রম হয়। এটা হল চাশতের নামাজের সময়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রচণ্ড কাজের চাপ; জীবন যাপনের চাহিদা পূরণের ব্যস্ততা, নবুয়ত ও রেসালাতের প্রচুর দায়িত্ব পালন; বিভিন্ন দিক থেকে আসা প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ; সাহাবিদের দ্বীন ও ঈমানি শিক্ষা প্রদান এবং পরিবারের সবার অধিকার আদায়ের পরও এসব নফল ইবাদত ছাড়েননি। নিরলসভাবে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করে গেছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত মুয়াজা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললাম- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি চাশতের নামাজ পড়তেন? তিনি উত্তরে বলেন, ‘হ্যাঁ’। তিনি ৪ রাকাআত (চাশতের নামাজ) পড়তেন। অনেক সময় মা-শা আল্লাহ বেশিও পড়তেন।’ (মুসলিম)
বিশ্বনবির অসিয়ত : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই চাশতের নামাজ সম্পর্কে অসিয়তও করে গেছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমার বন্ধু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে প্রতি মাসে-
১. তিনটি রোজা রাখা;
২. দুই রাকাআত চাশতের নামাজ পড়া ও
৩. ঘুমানোর আগে বিতর নামাজ আদায় করার অসিয়ত করেছেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফজরের পর নামাজের স্থানে সূর্য ওঠা পর্যন্ত বসে জিকির-আজকার করে ইশরাকের নামাজ পড়ার মাধ্যমে পরিপূর্ণ হজ ও ওমরার সাওয়াব পাওয়ার তাওফিক দান করুন। অতঃপর জোহরের নামাজের আগে চাশতের নামাজ পড়ারও তাওফিক দান করুন। আমিন।