হুমায়ুন কবির: গ্রাম বাংলার জীবনে রাতের অন্ধকার দূর করতে একটা সময় দেশের ৬৮ হাজার গ্রামের মানুষের ভরসা ছিল হারিকেন বা কুপি বাতি। যে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হত হেজাক লাইট। দিনদিন গ্রাম বাংলার সেই ঔতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এই জিনিসগুলোর ব্যবহার নেই বল্লেই চলে। নিজের ছেলে বেলায় ব্যবহৃত হারিকেন, কুপি বাতি, টর্চলাইট, টেন্ডেস্টার এবং একটি হেজাক লাইট সংরক্ষন করে রেখেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাবুর রহমান চৌধুরী। ৮০ বছরের বয়স্ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাবুর রহমান চৌধুরীর গ্রাম বাংলার এই সংরক্ষনের পেছনে রয়েছে কিছু কারনও।
খোঁজ করলে লক্ষ্য করা যাবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের অনেকেই লেখাপড়া করেছেন হারিকেন কিংবা কুপির আলোতে।
জীবন যাত্রার আধুনিকায়ন ও তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে বিলুপ্তির পথে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ‘হারিকেন বাতি’। অথচ গ্রামীণ জীবনে রাতের অন্ধকার দূর করতে একটা সময় মানুষের অন্যতম ভরসা ছিলো হারিকেন বা কুপি ।
আলতাবুর রহমান চৌধুরী বলেন অনেকেই হারিকেন বা কুপির আলোতে পড়ালেখা করেছেন। গৃহস্থলি এবং ব্যবসার কাজেও হারিকেন এবং হেজাক লাইটের ব্যাপক চাহিদা ছিলো। বড় বড় গৃহস্থের বাড়িতে হেজাক লাইট থাকত।
তবে এখন সেই হারিকেন অযন্ত আর অবহেলাসহ ঠাঁই রয়েছে জাদুঘরে। হারিকেনের স্থান দখল করেছে নানা ধরনের বৈদ্যুতিক বাতি।
একরকম হারিকেনের ব্যবহার এখন নাই বললেই চলে। প্রাচীন বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্য কুপি বাতি, হারিকেন, হেজাক লাইট ও টর্চ লাইট এখন শুধুই স্মৃতি। গ্রামের অমাবস্যার রাতে মিট-মিট আলো জ্বালিয়ে মানুষের পথ চলার স্মৃতি এখনো তাড়া করে। দিন দিন প্রযুক্তি মানুষকে উন্নত করছে।
বরিশাল জেলার মেহেদিগঞ্জ উপজেলার গবিন্দপুরের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন আলতাবুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন আমাদের ছেলে- মেয়েরা কুপি, হারিকেন, হেজাক লাইট কি এসব বিষয়ে কিছুই জানেনা। আগামী প্রজন্ম যেন গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া এসব ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে এই জন্য আমি আমার পরিবারে ব্যবহৃত অতিতের জিনিসগুলো সংরক্ষন করেছি।
তিনি আরো বলেন হেজাক লাইটটি আমার বাবা আকরাম রহমান চৌধুরীর স্মৃতি হিসেবে আমি এটি সংরক্ষন করেছি। প্রতিদিন আমি এই জিনিসগুলোকে পরিস্কার করি যাতে কোন রকম ময়লা না পড়তে পারে। দু- একদিন পরপর আমি হারিকেন ও কুপি জালাই এগুলোকে সচল রাখি। এক সময় হারিকেন দেখতে যেতে হবে জাদুঘরে। নতুন প্রজন্ম হয়তো জানবেও না হারিকেন কী বা হারিকেনের ইতিহাস।
তাপবিদ্যুৎ, জলবিদ্যুৎ, সৌরবিদ্যুৎসহ জ্বালানি খাতে ব্যাপক উন্নয়নে ঐতিহ্যবাহী হারিকেন বিলুপ্তির পথে। এছাড়াও প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎকে সংগ্রহ করে ব্যবহারের পন্থা আবিস্কার করেছে বিজ্ঞানীরা। চার্জলাইট, সৌরবিদ্যুৎসহ বেশ কিছু আলোর জোগান থাকায় এখন আর কেউই ঝুঁকছেন না হারিকেনের দিকে।
চায়না জাপানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে খুব দ্রুত চার্জ সংরক্ষণকারী আলোর প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছে। এভাবেই হয়তো চিরতরে হারিয়ে যাবে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য, এগুলো শুধু স্মৃতি হয়েই থাকবে।