রাশিয়ার একজন কূটনীতিক ইউক্রেনে দেশটির বিশেষ সামরিক অভিযানকে ‘অপরাধ’ আখ্যা দিয়ে ‘পুতিনের রক্তাক্ত ও বিচারবুদ্ধিহীন যুদ্ধের’ প্রতিবাদে চাকরি ছেড়েছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ‘আগ্রাসী আচরণের’ সমালোচনা করে বিদেশি সহকর্মীদের কাছে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন তিনি।
সোমবার (২৩ মে) সকালে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। বরিস বনডারেভ নামের ওই কর্মকর্তার লিংকডইন প্রোফাইল থেকে জানা যায়, ২০১৯ সাল থেকে রাশিয়ার হয়ে তিনি জেনেভায় জাতিসংঘের মিশনে কাজ করেছেন। তিনি ২০ বছর ধরে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করেছেন।
বিবিসিকে তিনি জানান, তার প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্তে ক্রেমলিন নির্ঘাত তাকে বিশ্বাসঘাতক ভাববে। তবে তিনি তার বিবৃতিতে দেওয়া বক্তব্য পরিবর্তন করেননি। তিনি চলমান দ্বন্দ্বে ‘ইউক্রেনীয় এবং একই সঙ্গে রাশিয়ার জনগণের’ সঙ্গেও অপরাধ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, ২০ বছরের চাকরি জীবনে তিনি এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হননি যখন বিচারবুদ্ধিহীন নৃশংস এক যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও লিখেছেন, যারা এই যুদ্ধে মদদ দিচ্ছে তারা সারাজীবন ক্ষমতায় থাকতে চায়। এর জন্য তাদের যত প্রাণ বলি দিতে হয় তারা তা দিতে প্রস্তুত। হাজারো রুশ এবং ইউক্রেনীয় ইতোমধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছেন।
তিনি তার পূর্বের কর্মস্থল রাশিয়ার পররাষ্ট্র দফতরের ব্যাপারেও কথা বলতে ছাড়েননি। তিনি বলেন, দফটরটিতে কূটনীতি নেই, মিথ্যা ও ঘৃণা ছড়ানোতেই তারা বেশি আগ্রহী। তিনি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ, প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার বাহিনীকেও সমালোচনা থেকে রেহাই দেননি।
ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে রুশ সরকারের কোনো কর্মকর্তার পক্ষ থেকে প্রতিবাদের ঘটনা বেশ বিরল। কঠোর শাস্তির ভয়ে অনেকেই পুতিনের সমালোচনা করতে সাহস পাননা।
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, আমার কাছে আর কোন উপায় ছিল না। আমি মনে করি না যে আমার পদত্যাগ খুব একটা পরিবর্তন আনবে। তবে আমার আশা, যে বড় দেওয়াল আমরা নির্মাণ করছি সেখানে এই ঘটনা অন্তত একটি ইটের যোগান দিবে।
তিনি আরও জানান, রাশিয়ার বিশেষ অভিযানকে প্রথমে তার সহকর্মীরা আনন্দ ও উল্লাসের বিষয় হিসেবে দেখেছেন। তারা খুশি হয়েছেন এই ভেবে যে রাশিয়া এবার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে তারা এখন কিছুটা কম খুশি কারণ ইতোমধ্যেই তারা সমস্যায় পড়ছেন কেননা অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসছে। তবে আমার মনে হয় তাদের বেশিরভাগই তাদের মনোভাব পরিবর্তন করবেন না।
তারা হয়ত কিছুটা কম আক্রমণাত্বক হবেন, তবে কিছুতেই সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ অবস্থানে যাবেন না। তিনি আরও বলেন, নিজের দেশকে নিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারিতে অভিযান শুরুর আগ পর্যন্ত কখনো এত লজ্জা পাইনি।