ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের কারণে খাদ্য সংকট চরম রূপ নিয়েছে। খুব দ্রুতই পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। যদি এ অবস্থা থেকে উত্তরণে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয়, তবে এ সংকট কেবল বহু মাস না, বহু বছর স্থায়ী হবে। বুধবার (৮ জুন) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক ডা. আংগাউজি আকুঞ্জু-আইওয়েলা এমন তথ্য দিয়েছেন।
বিবিসির বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রতিনিধি দার্শিনি ডেভিডকে তিনি বলেন, আমার আশঙ্কা, যুদ্ধের কারণে খাদ্যশস্যের যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তাতে বিশ্বজুড়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হবে।
বিশ্বে সূর্যমুখী তেলের ৪২ শতাংশ, ভুট্টার ১৬ শতাংশ, বার্লির ১০ শতাংশ ও গমের ৯ শতাংশের সরবরাহ আসে ইউক্রেন থেকে। ডা. আংগাউজি বলেন, যদি ইউক্রেন থেকে এখনই খাদ্যশস্য বের করে নিয়ে আসতে না পারি, তবে জুলাইয়ে আবারও তারা একই পরিমাণের ফসল ঘরে তুলবে, যা অপচয় হয়ে যাবে। কারণ তাদের কাছে ইতিমধ্যে যে পরিমাণ খাদ্যশস্য আছে, তা তারা রফতানি করতে পারেনি।
তার মতে, এতে আগামী কয়েক বছর ধরে খাদ্য সংকট অব্যাহত থাকবে। আর বিশ্বের কয়েকটি অংশের জন্য যা হবে বিপর্যকর। তিনি বলেন, বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারা এসব দেশ কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী অঞ্চলগুলো থেকৈ খাদ্য ও সার আমদানি করে।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্থনি গুতেরেস। তিনি বলেন, ১১৬ কোটি মানুষ এই যুদ্ধের ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা ও জ্বালানির ওপর যুদ্ধের প্রভাব ব্যাপক, মারাত্মক। সময়ের সঙ্গে এই সংকট আরও তীব্রতর হচ্ছে।
গুতেরেস বলেন, ক্ষুধা ও অসহায়ত্ব লাগামহীন করে তোলার হুমকি তৈরি করেছে যুদ্ধ। এতে বিশ্বকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, চলতি বছরের সংকট খাদ্যাঞ্চলগুলোতে প্রবেশের সুযোগের অভাব হিসেবে দেখা হচ্ছে। কিন্তু পরবর্তী বছরগুলোতে তা খাদ্যের অভাব হিসেবেই সামনে চলে আসবে। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হলেও এই সংকট থাকবে না বলে জানান জাতিসংঘের মহাসচিব।
এদিকে তুরস্কের তত্ত্বাবধানে ইউক্রেনীয় খাদ্যশস্যের জন্য সমুদ্রপথে একটি করিডর স্থাপনে জাতিসংঘের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বেশ কয়েকটি বড় বাধা রয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে, ইউক্রেনীয় বন্দরগুলো থেকে অবরোধ উঠিয়ে নিতে রাশিয়াকে রাজি করানো।
আবার সমুদ্রপথে মাইন স্থাপন করে রেখেছে ইউক্রেন। কিয়েভ যাতে মাইন অপসারণ করে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আর এই করিডর যে নিরাপদ, জাহাজ ও বীমা কোম্পানিগুলোকে তা বোঝাতে হবে। এসব বাধা দূর করতে পারলেই জাতিসংঘের সমুদ্র করিডোর দিয়ে নিরাপদে খাদ্যশস্য রফতানি করা যাবে।