ক্রীড়া ডেস্ক,সিটিজেন নিউজ: বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় লড়াই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ (রোববার)। চরম উত্তেজনাপূর্ন এই ম্যাচ দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ক্রিকেট ভক্তরা। কে জিতবে-পাকিস্তান না ভারত?
দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে ১৩১ ওয়ানডে ম্যাচে ৭৩টি জয় নিয়ে পাকিস্তান এগিয়ে থাকলেও এখনো পর্যন্ত বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে জয়ের খাতাই খুলতে পারেনি তারা। বিশ্বকাপে মুখোমুখি হওয়া ছয়টি ম্যাচের ছয়টিতেই হারের মুখ দেখেছে দেশটি।
কিন্তু কেন বিশ্বকাপ এলেই ভারতের সামনে অসহায় হয়ে পড়ে পাকিস্তান? সেই কারণ খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর বেশ কয়েকটি তথ্য।
বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে খেলা ছয়টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে টস জিততে পারেন পাকিস্তানের অধিনায়কেরা। এবং ছয়টির মধ্যে পাঁচটিতেই পরে ব্যাট করে হারে তারা।
ভারতের কাছে পাকিস্তানের হারের কয়েকটি কারণ খুঁজে বের করেছে পাকিস্তানি এক গণমাধ্যম। আসুন দেখে নেয়া যাক তাদের বিশ্লেষণ…
১৯৯২ বিশ্বকাপ
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। শচিন টেন্ডুলকারের ৫৪ রানের উপর ভর করে প্রথম ইনিংসে ২১৬ রান করে ভারত। সহজ এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭৩ রানেই অল আউট হয়ে যায় পাকিস্তান। এই ম্যাচে তাদের রক্ষণাত্মক ভঙ্গিমায় খেলাকেই হারের মূল কারণ হিসেবে ভাবা হয়। সে ম্যাচে ১১০ বল খেলে ৩৬ স্ট্রাইকরেটে মাত্র ৪০ রান করেন জাভেদ মিয়াঁদাদের মতো বড় ব্যাটসম্যান। আর তাতেই কপাল পুড়ে পাকিস্তানের।
১৯৯৬ বিশ্বকাপ
বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচটিও ছিল উত্তেজনায় ঠাসা। ভারতের দেয়া ২৮৮ রানের লক্ষ্যে দুর্দান্ত ব্যাটিং শুরু করে পাকিস্তান। আমির সোহেল-সাঈদ আনোয়ার ভারতীয় বোলারদের পিটিয়ে ছাড়খার করতে থাকেন। ইনিংসের ১৫ তম ওভারে ভেঙ্কটেশ প্রসাদের বলে দৃষ্টিনন্দন এক কাভার ড্রাইভে চার মারেন আমির। তারপর সেই বল আমির সোহেল প্রসাদকে বাউন্ডারি থেকে তুলে আনতে বললে উত্তেজনায় ফেটে পড়ে পুরো গ্যালারি। ঠিক পরের বলেই দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে আমির সোহেলে স্ট্যাম্প উড়িয়ে তাকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান প্রসাদ। সেটিই ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। কেননা আমির আউট হওয়ার পর তাদের আর কোন ব্যাটসম্যানেই দাঁড়াতে পারেননি। ফলে ৩৯ রানের পরাজয় বরণ করতে পাকিস্তানকে।
১৯৯৯ বিশ্বকাপ
১৯৯৯ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে রাহুল দ্রাবিড়ের ৬১ ও অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহার উদ্দিনের ৫৯ রানের ইনিংসের উপর ভর করে ৫০ ওভারে ২২৭ রান করে ভারত। সহজ এই টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই ভারতের বোলারদের তোপে দিশেহারা হয়ে পড়েন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা। বিশেষ করে পেসার ভেঙ্কাটেশ প্রসাদের কাছে। তার ২৭ রানে ৫ উইকেটের ম্যাজিক ফিগারের কারণেই পাকিস্তানকে ৪৭ রানে হারায় ভারত। ১৯৯২ বিশ্বকাপের মতো এবারো রক্ষণাত্মক খেলাটাই ছিল পাকিস্তানের হারের মূল কারণ।
২০০৩ বিশ্বকাপ
বিশ্বকাপে খেলা ভারতের বিপক্ষে শুধুমাত্র এই ম্যাচেই টসে জিততে পারে পাকিস্তান। আগে ব্যাট করতে নেমে সাঈদ আনোয়ারের ১০১ রানের ইনিংসে উপর ভর করে ২৭৩ রানের বড় স্কোর করে পাকিস্তান। কিন্তু সেই ম্যাচেও শচিন টেন্ডুলকার, যুবরাজ সিংয়ের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে অনায়াসেই রান তাড়া করে ফেলে ভারত। শোয়েব আকতার, ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনুসদের মতো বোলারদের কোন পাত্তাই দেননি শচিন-শেবাগরা। বোলিং ব্যর্থতায় ম্যাচটা হারে পাকিস্তান।
২০১১ বিশ্বকাপ
ঘরের মাঠে দ্বিতীয়বারের মতো ২০১১ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয় ভারত। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। শচিন টেন্ডুলকারের ৮৫ রানে ভর করে ৫০ ওভারে ২৬০ করে ভারত। ওয়াহাব রিয়াজের ৪৬ রানে ৫ উইকেটের কারণে বড় স্কোর করতে ব্যর্থ হয় তারা। তবে এই রান তাড়া করতে পারেনি পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা। মিসবাহ উল হকের ৫৬ রানের ইনিংসের পরও ২৯ রানে হারে দলটি। বলা হয়ে থাকে ঐ ম্যাচে ফিল্ডারদের অনেক ক্যাচ মিসের ফলে ম্যাচটি হাত থেকে ফসকে যায় পাকিস্তানের।
২০১৫ বিশ্বকাপ
২০১৫ বিশ্বকাপের নিজেদের প্রথম ম্যাচেই একে অপরের মুখোমুখি হয়ে ভারত-পাকিস্তান। আগে ব্যাট করতে নেমে বিরাট কোহলির ১০৭ রানের ইনিংসে ভর করে সাত উইকেটে ৩০০ রানের বড় সংগ্রহ করে ধোনির দল। ব্যাটিংয়ের পারফরমেন্স বোলিংয়েও সমানভাবে বজায় রাখে ভারত। তাদের পেসারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে মাত্র ২২৪ রানেই অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান। এই ম্যাচে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্বল দল নিয়েই ভারতের বিরুদ্ধে খেলেছে আনপ্রেডিক্টেবলরা। এটাই ছিল হারের মূল কারণ।