হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মকসুদপুর গ্রামের শামীম মিয়া অল্প বয়সেই গ্রাম্য দাঙ্গায় পিতৃহারা হয়ে আশ্রয় নেন হবিগঞ্জ সরকারি শিশু পরিবার বালকে। একইভাবে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের রুহেনা বেগম পিতৃহারা হয়ে আশ্রয় নেন শ্রীমঙ্গল সরকারি শিশু পরিবার বালিকায়।
শামিম কম্পিউটার সাইন্সে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন এবং রুহেনা এসএসসি পাশ করেন। সমাজ সেবা অধিদফতরের বার্ষিক খেলাধুলায় অংশ নিতে গিয়ে এক অপরের পরিচয় হলে শামিম মিয়া বিষয়টি জানান তার প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান সাইফুল ইসলামকে। তিনি বিষয়টি শেয়ার করেন সরকারি শিশু পরিবারের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট শাহ ফখরুজ্জামানকে।
পরে জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলে তিনি রাজি হন সুন্দর এই আয়োজনের। দুই অনাথের ঘরবাধার স্বপ্ন পূরণে উদ্যোগ নেয়া হলে অনেকেই এগিয়ে আসেন।
জেলা প্রশাসন থেকে বড় ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়ানোর পাশাপাশি সমাজসেবা অধিদফতর ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সমাজসেবী লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে সোমবার দুপুরে হবিগঞ্জ সরকারি শিশু পরিবারে আয়োজন করা হয় এক ব্যাতিক্রমধর্মী বিয়ের।
বর ও কনে এতিম হলেও আয়োজনের কমতি ছিল না এই বিয়ের অনুষ্ঠানে। শামিম ও রুহেনার বিয়েকে কেন্দ্র করে শিশু পরিবারে ছিল সাজ সাজ রব। গেট আর সাজসজ্জার কমতি ছিল না সেখানে। সমাজের বিত্তবানরা নিয়ে আসেন নানান উপহার। নিবাসীদের মাঝে ছিল ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান ও পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি রফিকুল আলমের উপস্থিতিতে কাজী ও মাওলানা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। পরে বর ও কনেকে আর্শীবাদ করেন সমাজের বিত্তবান সমাজসেবিরা। এরপর অতিথিদের জন্য আপ্যায়নে অংশ নেন সবাই।
ব্যতিক্রম এই বিয়ে আয়োজন করায় কৃতজ্ঞতার শেষ নেই শামীম মিয়া ও রুহেনা বেগমের। তারা এই আয়োজন দেখে নিজেদেরকে এতিম হিসেবে আর অসহায় ভাবছেন না। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সবার দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন তারা। এতিম বর ও কনের এই ব্যতিক্রম আয়োজনে আনন্দিত উভয়ের পরিবার। তাদের স্বজনরাও আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ব্যতিক্রমধর্মী এই বিয়ে আয়োজন করায় সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নিতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেন। তারা এ ধরনের উদ্যোগে সহযোগিতা করতে পেরেও আনন্দিত। ভবিষ্যতে তারা এ ধরনের ভালোকাজে সহযোগিতা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।
হবিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট মিজানুর রহমান শামীম বলেন, এই আয়োজন ব্যতিক্রম। আমরা সব সময় ভালো কাজের সঙ্গে আছে।
লন্ডন থেকে দেশে আসা সমাজসেবক অধ্যাপক আব্দুল হান্নান নিজ পরিবারসহ আসেন বিয়ের অনুষ্ঠানে। বাড়িয়ে দেন সহযোগিতার হাত। তিনি বলেন, জীবনে অনেক বিয়েতে গিয়েছি। এই প্রথম একটি এতিমের বিয়েতে এসে খুব ভালো লাগল।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের ভালো কাজে উৎসাহ দিয়ে থাকেন। কেউ যেন নিজেকে অসহায় মনে না করেন তার জন্যই এই আয়োজন। সবাই মিলে এ ধরনের কাজ করতে পারলে আমরা সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে পারব।
হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলিও আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। সমাজে এ ধরনের কাজ সবার সামনে উদাহরণ সৃষ্টি করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জেলা সমাজ সেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক রাশেদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমাদের এই আয়োজনে অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। আর না হলে এ ধরনের আয়োজন সম্ভব হত না।