প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, এবারের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ সব সভায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। এতে বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থান যেমন আরো সুদৃঢ় করেছে, তেমনি বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকেও আরো বিস্তৃত করবে।
তিনি বলেন, সামগ্রিক বিবেচনায় এবারের অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ অত্যন্ত সফল বলে আমি মনে করি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে তার সদ্য সমাপ্ত রাষ্ট্রীয় সফর সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা জানান, ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে বাংলায় বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের ফলে সৃষ্ট খাদ্য ও জ্বালানি সংকট ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তির জন্য অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিক পারস্পরিক সংহতি প্রদর্শন করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। এসব সংকটের কারণে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা-নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকট ও বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি চলমান সংকট নিরসনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শান্তি ও উন্নয়ন ভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতির প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের জন্য আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং অর্জিত সাফল্যের কথা তুলে ধরে অন্তর্ভুক্তিমূলক জলবায়ু কার্যক্রমের প্রসারের জন্য তিনি বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে প্রযুক্তির ব্যবহারে সবার ন্যায্য ও সমান সুযোগ সৃষ্টি এবং ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তিগত বিভাজন দূর করার উপরও গুরুত্বারোপ করেন।
বিশ্বশান্তি অর্জনের লক্ষ্যে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা ও শান্তি বিনির্মাণ কার্যক্রমে বাংলাদেশের অঙ্গীকার এবং অংশগ্রহণের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিনদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আমাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে মিয়ানমার হতে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়ে আসছে। মানবিক কারণে নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে।
রোহিঙ্গারা যেন সম্মানের সঙ্গে ও নিরাপদে তাদের নিজ দেশে ফিরতে পারে সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু মিয়ানমার সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করার জন্য জাতিসংঘকে কার্যকর ও জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন চলাকালে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- স্লোভেনিয়ার রাষ্ট্রপতি, ইকুয়েডরের রাষ্ট্রপতি, কসোভোর রাষ্ট্রপতি, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর, ইউএন হ্যাবিট্যাট-এর নির্বাহী পরিচালক, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক, জাতিসংঘের হাই রিপ্রেজেনটেটিভ, গ্লোবাল এফেয়ার্স মেটা’র প্রেসিডেন্ট, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং জাতিসংঘের মহাসচিব। এসব দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আমি পারস্পরিক ও বৈশ্বিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সফরের সময় ২৪ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজনে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। নিউইয়র্কে অবস্থানকালে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি এবং ভয়েস অব আমেরিকা তার সাক্ষাৎকার নেয় বলেও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, কয়েকজন সংসদ সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভা এবং দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।