কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাজ্যের রাজনীতি বেশ উত্তাল। মন্ত্রীদের বরখাস্ত ও নিয়োগের জ্বরে ভুগছিল দেশটি। অবশেষে ছয় সপ্তাহ দায়িত্ব পালনের পর বৃহস্পতিবার ব্রিটেনের মন্ত্রিসভার প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন লিজ ট্রাস। একইসঙ্গে দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের ঘোষণা দেন তিনি। এতে লিজের স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তি হিসেবে বেশ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে।
ঋষি সুনাক
কর কমানো ও সরকারি খরচ ঠিক রাখার প্রতিশ্রুতিতে চলতি গ্রীষ্মে কনজার্ভেটিভস পার্টির প্রধান পদে যুক্তরাজ্যের রাজস্ব বিভাগের অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাককে পরাজিত করেন লিজ ট্রাস। তবে ঋষি সতর্ক করে বলেছিলেন, লিজের অতিরিক্ত ঋণের মাধ্যমের প্রস্তাব তহবিলের পরিকল্পনা বেপরোয়া এবং এটি যুক্তরাজ্যের কয়েক দশকের মধ্যে বাজারের আত্মবিশ্বাস ও মুদ্রাস্ফীতির পরিস্থিতি খারাপ করে দেবে।
ঋণ সুনাকের সেই শঙ্কা ছয় সপ্তাহ পর দেখল যুক্তরাজ্যবাসী। তাই ট্রাস তার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন এবং কোয়াসি কিয়ার্টেংকে সরিয়ে ঋষির সহকর্মী জেরেমি হান্টকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। এতে প্রমাণ হয় লিজের উত্তরাধিকারী হিসেবে কনজার্ভেটিভস পার্টিতে তার অবস্থান বেশ শক্ত।
সম্প্রতি পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের প্রথম ধাপের দৌড়ে শীর্ষ আইনপ্রণেতাদের বড় অংশের সমর্থন পেয়েছিলেন ঋষি সুনাক। তাই এখনো ক্ষমতাসীন দলটি এখনো তাকে বিবেচনায় রাখতে পারে।
বৃহস্পতিবারের নতুন একটি ইউগোব পুলে লিজ ট্রাসের বিকল্প হিসেবে ঋষি সুনাক বেশ ভালো সাড়া পেয়েছেন। তবে ঋষি একজন বিবেদসৃষ্টিকারী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে উৎখাতে ভূমিকা রাখায় ঋষিকে ক্ষমা করতে অনিচ্ছুক পার্টির অনেক শীর্ষ সদস্য।
বরিস জনসন
মন্ত্রিসভা এবং শীর্ষ এমপিদের বিদ্রোহ, অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে ঋষি সুনাকের পদত্যাগ ও ব্যক্তিগত বিভিন্ন অনিয়মের কারণে বিতর্কের পর পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন বরিস জনসন। তবে বিভিন্ন শক্তিশালী ইঙ্গিতের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থিতার বেশ গুঞ্জন রয়েছে। তিনি আবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। যদিও এত তাড়াতাড়ি বিষয়টি ঘটবে না বলে ধারণা করা হয়েছিল।
ব্রেক্সিটের মহানায়ক বরিস জনসন এখনো কনজার্ভেটিভস পার্টির এমপি ও দলের একটি অংশের কাছে জনপ্রিয় রয়েছেন। তবে বরিস ক্ষমতাকালীন তিন বছরের খারাপ পদক্ষেপ তার সম্মানকে ধূলিসাৎ করেছে।
বৃহস্পতিবারের ইউগোব পুলে ৫৮ বছর বয়সী বরিস এখনো লিজ ট্রাসের চেয়ে জনপ্রিয়। তবুও তার ব্যাপারে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ লোকের আপত্তি রয়েছে।
পদত্যাগের পর নিজেকে তেমনভাবে রাজনীতিতে আর মেলে ধরেননি বরিস জনসন। গত সপ্তাহে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বক্তব্য দেন। কিন্তু তার বক্তব্যে যুক্তরাজ্যের বর্তমান সংকটের কথা উল্লেখ করেননি তিনি।
গত গ্রীষ্মে কনজার্ভেটিভসের প্রধানের দৌড়ে ট্রাসকে বরিস সমর্থন করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। যদিও তার সাবেক শীর্ষ সহকারী ও সবচেয়ে বড় সমালোচক ডিমিনিক কামিঙ্কস বলছেন, ট্রাসের স্বল্পমেয়াদ এবং বিপর্যস্ত সময়ের প্রত্যাশ করছিলেন বরিস। কারণ ট্রাসের পতনের ফলে তার প্রধানমন্ত্রী পদে আসা সহজ হবে।
জেরেমি হান্ট
লিজ ট্রাস নেতৃত্বাধীন সরকারের সর্বশেষ অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট দুটি নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি বরিস জনসনের কাছে পরাজিত হন এবং এই বছর নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় এমপিদের প্রথম ব্যালটে তিনি শেষ স্থানে ছিলেন। কিন্তু তাকে যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় শক্তিশালী পদে নিয়োগ দেন দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়া লিজ ট্রাস। এতে জেরিমি রাজনীতির পশ্চাদপদ থেকে কেন্দ্রে চলে আসেন। এখন পর্যন্ত তার নিশ্চিত কর্মক্ষমতা তার অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। যেহেতু কনজার্ভেটিভসের এমপিরা ট্রাসকে উৎখাত করছেন তাই কিছু সংখ্যক এমপি হান্টকে সমর্থন দিচ্ছেন এবং হান্ট নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করতে পারেন। কারণ, সাবেক এ উদ্যোক্তা পার্টির কেন্দ্রীয় শাখার সমর্থন সংগ্রহ করেছেন। তবে ৫৫ বছর বয়সী এ ব্যক্তি তার বিপরীত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের চেয়ে সমর্থন কম পেতে পারেন। সম্ভবত একটি সাধারণ নির্বাচনের আহ্বান উজ্জিবিত হবে। এতে তার পার্টির শীর্ষ নেতারা হারবেন।
পেনি মর্ডান্ট
যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভার একজন সদস্য পেনি মর্ডান্ট বরিস জনসনের উত্তরাধীকারী হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি লিজ ট্রাসের কাছে আট ভোটে হেরে সুনাকের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা করতে পারেননি। সাবেক প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্যমন্ত্রী টরিসের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। তিনি ব্রেক্সিটের সমর্থক ছিলেন। ২০১৬ সালে ব্রেক্সিটের ‘ত্যাগ’ ক্যাম্পেইনের অন্যতম চালক ছিলেন।
তবে আগের সরকারের সময় তার কিছু অকার্যকর দক্ষতা রয়েছে। সেই অভিযোগে বর্তমানে তার নেতৃত্বের লড়াইয়ের সমালোচনা করেছেন তার সহকর্মীরা।
যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক বিপর্যয় বিষয়ে বিরোধীদল লেবার পার্টির প্রশ্নের জরুরি জবাব দিতে লিজ ট্রাসের পরিবর্তে গত সোমবার পেনিকে হাউস অব কমন্সে পাঠানো হয়। এরপর থেকেই তার অবস্থান শক্তিশালী হয়।
জোরপূর্বক ব্যাখ্যা চাওয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী ট্রাস হাউস অব কমন্সে যাননি। তিনি অভিযোগের জবাব না দিতে লুকিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠে। তবে পেনি হাউস অব কমন্সে বেশ ভালোভাবেই পরিস্থিতি সামাল দেন।
বৃহস্পতিবার ৪৯ বছর বয়সী পেনির একজন জ্যেষ্ঠ মিত্র জানান, তিনি গত সপ্তাহে ঋষি সুনাকের সঙ্গে একটি যৌথ বিষয়ে এগিয়ে যেতে চান। তবে ঋষি তা প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ তিনি কোনো জুনিয়র অংশীদারকে চান না।