বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক লোকসানে টুইটার কেনায় সাধারণ মানুষ বলছেন, বোকামি করেছেন ইলন মাস্ক। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, টুইটার নিয়ে বড় পরিকল্পনা আছে মাস্কের।
ইলন মাস্ক ৪৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করে টুইটারের মালিকানা পেয়েছেন। কিন্তু অনেকেই বলছেন, টুইটারের দাম এত নয়। বেশি দামে টুইটার কিনে ঠকেছেন মাস্ক।
এ ব্যাপারে চলতি বছরের অক্টোবরে মাস্ক বলেন, ‘অবশ্যই আমি বেশি দাম দিয়ে টুইটার কিনেছি। এখন হয়তো টুইটারের দাম কম হতে পারে, তবে সামনের দিনগুলোত টুইটার অনেক সম্ভাবনাময়। ভবিষ্যতে বর্তমান মূল্যের থেকেও টুইটার অনেক দামি হবে। এ ক্ষেত্রে এটাকে মোটেও বিচক্ষণহীনতা বলে ভাবছি না আমি।’
তাহলে কোন সম্ভাবনার কথা বলছেন মাস্ক? সম্প্রতি মাস্ক জানিয়েছেন টুইটারকে তিনি সুপার অ্যাপে পরিণত করতে চান। এ লক্ষ্যে মাস্ক অ্যাপটির নামও দিতে চাচ্ছেন ‘এভরিথিং অ্যাপস’। মূলত যেসব অ্যাপসে এক ছাতার নিচে সব ধরনের সুবিধা পাওয়া যায় সেগুলোকে সুপার অ্যাপস বলা হয়। বর্তমানে গুগল ও অ্যাপল স্টোরকে সুপার অ্যাপ হিসেবে ধরা হয়।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, মাস্কের এভরিথিং অ্যাপ ভবিষ্যতে গুগল-অ্যাপলকে টেক্কা দেবে। মাস্কের পরিকল্পনার সুপার অ্যাপ হবে এমন একটি অ্যাপ, যেটি ব্যবহার করে মানুষ বার্তা আদান-প্রদান, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং, অনলাইনে অর্থ লেনদেন, ই-কমার্স সাইটে কেনাকাটা থেকে শুরু করে সবকিছু করতে পারবেন।
মাস্কের আগে স্ন্যাপচ্যাটের মূল কোম্পানি স্ন্যাপ অনলাইনে পেমেন্ট সুবিধা চালু করেছিল, যেটির নাম ছিল ‘স্ন্যাপক্যাশ’। কিন্তু ২০১৮ সালে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। তবে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ম্যাসেজিং অপশনের বাইরে ই-কমার্স সুবিধা চালু করার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।
এদিকে বর্তমানে চীন ও এর আশপাশের এলাকায় উইচ্যাট নামের এই ধরনের একটি অ্যাপ চালু রয়েছে। উইচ্যাট চীনের মানুষের দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রায় সবার মোবাইল ফোনেই এই অ্যাপ রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও এই অ্যাপের মাধ্যমে ট্যাক্সি ক্যাব ভাড়া করা, টাকা লেনদেন, শপিং মলে কেনাকাটা করা যায়।
গুগল-অ্যাপলের একাধিপত্য
গুগল-অ্যাপেলের অ্যাপস্টোর হচ্ছে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে বাকি অ্যাপ মালিকরা নিজেদের টিকিয়ে রাখতে সার্বক্ষণিক লড়াই করে যান। বিখ্যাত গেমিং অ্যাপ অ্যাংরি বার্ডের কথাই ধরা যাক। এই অ্যাপটি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, ২০০৯ সালে চালু হওয়ার বছরেই অ্যাপটি ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে।
তবে এমন সৌভাগ্য সবার ভাগ্যে জোটে না। দ্য কনজারভেশনের একটি রিপোর্টে দেখা যায়, গুগল প্লে স্টোরে বর্তমানে ৩০ লাখ অ্যাপ রয়েছে, অ্যাপলে এর সংখ্যা ২০ লাখ। এত অ্যাপের মধ্যে মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ অ্যাপ ব্যবসায়িকভাবে লাভ করতে পারে। এদিকে লাভ যাই হোক না কেন গুগল-অ্যাপল অ্যাপগুলোর লভ্যাংশ থেকে ৩০ শতাংশ কমিশন হিসাবে রেখে দেয়। অর্থাৎ একজন অ্যাপ মালিক ১০০ টাকা লাভ করলে ৩০ টাকাই দিতে হয় গুগল-অ্যাপলকে।
লাভ নিয়েই বসে থাকে না গুগল-অ্যাপল। যাতে করে কোনো অ্যাপ নিজেদের মতো ফিচার যোগ করে স্বাবলম্বী হতে না পারে তার জন্য অনেক অ্যাপের আপডেটেড ডেভলপমেন্ট মুছে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে এ দুটি অ্যাপের বিরুদ্ধে। এমনটাই হয়েছিল স্ক্রাইবড অ্যাপ ও ফ্লিক টাইপের সঙ্গে। স্ক্রাইবড অডিও বুক ও ফ্লিক টাইপ কিবোর্ডের ফিচার চালু করতে চাইলে অ্যাপল তাদেরকে নিজ স্টোর থেকে বের করে দেয়ার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিল- যা অ্যাপল-গুগলের একাধিপত্যের পরিচয় দেয়।
যেখানে একটি অ্যাপ ডেভলপ করতেই ৩০ হাজার ডলার থেকে ৩ লাখ ডলার পর্যন্ত খরচ হয়, সেখানে আলাদা করে গুগল-অ্যাপলের সঙ্গে টেক্কা দেয়া অ্যাপ মালিকদের জন্য কষ্টসাধ্য। কিন্তু বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক যেভাবে উঠেপড়ে টুইটারকে সুপার অ্যাপ বানানোর লক্ষ্যে কাজ করছেন- এতে করে সহজেই ধারণা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে গুগল-অ্যাপলকে টেক্কা দিতে টুইটার হতে পারে বড় একটি মাধ্যম।