প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ হাজার মিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স অর্জিত হয়েছে।
বুধবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তরে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের লিখিত জবাবে তিনি জাতীয় সংসদকে এ তথ্য জানান। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি উচ্চ রেমিট্যান্সপ্রাপ্ত দেশ। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির পরও ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রাপ্ত রেমিট্যান্স যথাক্রমে ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার ৪৯৩ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স অর্জিত হয়েছে।
রেমিট্যান্সে প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত কয়েক বছরে গৃহীত নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান, বৈধভাবে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে কর্মীদের উৎসাহিত করা, অধিক কর্মী পাঠানের মাধ্যমে রেমিট্যান্সে প্রবাহ বৃদ্ধি করা, অধিক রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে অনিবাসী/প্রবাসী বাংলাদেশি ওয়েজ আর্নারদের জন্য সরকার বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং বিশেষ নাগরিক সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা উল্লেখযোগ্য।
তিনি জানান, প্রবাসীদের মাঝে রেমিট্যান্সে প্রেরণকারী বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৫৭ জন এবং বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যের আমদানিকারক ক্যাটাগরিতে ১০ জনসহ মোট ৬৭ জনকে সিআইপি (এনআরবি) ২০২০ ঘোষণাপূর্বক সম্মাননা হিসেবে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও সিআইপি কার্ড প্রদান করা হয়েছে।
সংসদ নেতা আরো জানান, প্রবাসী কর্মীদের অর্জিত অর্থ বৈধ পথে ও ব্যাংকিং চ্যানেলে বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য দূতাবাসসমূহ অব্যাহত প্রচার চালিয়ে আসছে। প্রতিবছর ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস’সহ দূতাবাসের সব অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশীদের বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে দূতাবাসের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত প্রচার চালানো হচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে রেমিট্যান্সের কোনো বিকল্প নেই এবং তা আনতে হবে বৈধ পথে।
তিনি জানান, নতুন শ্রম বাজার অনুসন্ধান, বিদ্যমান বাজার সংহত করা এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সম্ভাবনাময় দেশসমূহের সরকার ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনগুলো আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।
সরকারের নেয়া বেশকিছু পদক্ষেপের ফলে গত এক বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে রেকর্ড সংখ্যক প্রায় ১১ লাখ ১৩ হাজার ৩৭৪ কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
সরকারি দলের কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, এই ১১ লাখ ১৩ হাজার ৩৭৪ কর্মীর মধ্যে নারী কর্মীর সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ জন।
সাগরের পানি থেকে হাইড্রোজেন বিদ্যুত উৎপাদনের বিষয়ে আলোচনা চলছে বলেও এক প্রশ্নের উত্তরে জাতীয় সংসদকে জানান প্রধানমন্ত্রী।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সাগরের পানি থেকে হাইড্রোজেন বিদ্যুত উৎপাদন নতুন ধারণা। এ বিষয়ে যেসব কোম্পানি প্রস্তাব দিয়েছে তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। যদি সম্ভব হয় তাহলে মাতারবাড়ি, মহেষখালী বা বাঁশখালীতে হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবতা যাচাই করা হবে।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য বেনজির আহমদের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে যেখানে মোট খাদ্যশস্য উৎপন্ন হতো ৩ কোটি ২৮ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে ৭০টির বেশি দেশে সবজি ও ফল রফতানি হচ্ছে এবং কৃষিপণ্য রফতানি ১০০ কোটি ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়ে গেছে।
তিনি জানান, বর্তমান বাংলাদেশ বিশ্বে চাল উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে, সবজি ও পেঁয়াজে তৃতীয় স্থান, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, চা উৎপাদনে ৪র্থ এবং আলু ও আম উৎপাদনে ৭ম স্থানে উন্নীত হয়েছে।