উত্তরা সংবাদ দাতা : বি এইচ খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ এর অধ্যক্ষ ব্রাদার স্টিভেন্স লিউকের নির্দেশনায় গতকাল অনুষ্ঠিত হলো অত্র প্রতিষ্ঠানের স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচন -২০২৩।প্রমি গ্রুপের চেয়ারম্যান এনামুল হাসান খান শহীদ( সিআইপি)র মৃত বাবা বজলুল হক খানের নামে করা স্কুল এন্ড কলেজেটি ডিএনসিসি-র ৪৫ নং ওয়ার্ড উত্তরখান মাজার তালতলা এলাকায় অবস্থিত।ইতি মধ্য শতভাগ পাশের সুনাম অর্জন করা এই প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতে ঢাকা শহরের সেরা দশে স্থান করে নিবে এমনটাই আশাবাদী বলে জানিয়েছেন অভিভাবক মহল ও শিক্ষকবৃন্দ।
নির্বাচনকে ঘিরে গতকাল পুরো বিদ্যালয় প্রাঙ্গন ছিল উৎসবমুখর। অত্যন্ত সুন্দর , সুশৃংখল ও স্বচ্ছতার সাথে শিক্ষার্থিদের ভোট গ্রহণ কার্যক্রম আরম্ভ হয়। বিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট অফ দ্যা ইয়ার -২০২২ খ্রিস্টাব্দ এর অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবির কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দ্বায়িত্ব দেয়া হয় এবং তার সাথে আরো দুইজনকে সহকারী নির্বাচন কমিশনার এর দায়িত্ব দেয়া হয়।
এছাড়াও বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১০ জন শিক্ষার্থীকে প্রিজাইডিং অফিসার এবং পোলিং এজেন্ট হিসেবে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভোট প্রদানের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ কার্যক্রম আরম্ভ হয়। এরপর এক এক করে সিনিয়র সেকশন এর ৭১৩ জন শিক্ষার্থী ভোট প্রদান করে। বিদ্যালয়ের সিনিয়র সেকশন এর কোঅর্ডিনেটর মোহাম্মদ রাশেদুল হক , জুনিয়র সেকশন এর কোঅর্ডিনেটর সাদিকুর রহমান , প্রী প্রাইমারি সেকশন এর ইনচার্জ ফারহানা আফরিন নির্বাচন কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেন এবং সুষ্ঠ, সুন্দর ,স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পর্কে নিশ্চিত করেন । বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক রবিন খান সহ অন্যান্য শিক্ষকগণ এবং বিদ্যালয়ের চৌকস স্কাউট দল শিক্ষার্থীদের ভোট প্রদানে সহায়তা করেন। প্রার্থীরা যে যার মতো করে ভোটারদের কাছে তার নির্বাচনী ইশতেহার তুলে ধরে ভোট প্রার্থনা করে। এভাবে দিনব্যাপী ভোট গ্রহণ চলে এবং ভোটাররা সুশৃংখল ভাবে ভোট দেন ।
স্কুল সুত্রে জানা যায়, স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচন প্রক্রিয়াটি ২০১৫ সালে বাংলাদেশের মাধ্যমিক এবং দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে স্টুডেন্টস কেবিনেটের যাত্রা শুরু হয়৷ প্রথমবার প্রতিটি উপজেলায় একটি মাধ্যমিক স্কুল, একটি দাখিল মাদ্রাসা এবং একটি কারিগরি বিদ্যালয়ে স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচন হয়৷ এবছর দেশের সব মাধ্যমিক, দাখিল মাদ্রাসা এবং কারিগরি বিদ্যালয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ এই কেবিনেটের মেয়াদ এক বছর৷ প্রতিবছর নির্বাচন হয়৷ স্কুলগুলোর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ভোটে স্টুডেন্টস কেবিনেটের সদস্যরা নির্বাচিত হন৷ প্রত্যেক শ্রেণি থেকে একজন করে পাঁচজন এবং আরো তিনজন সর্বোচ্চ ভোটের ভিত্তিতে, এই মোট আট জন নির্বাচিত হন৷ তারাই নির্বাচনের পর প্রথম বৈঠকে কেবিনেট লিডার নির্বাচন করে৷ সাধারণভাবে কোনো নির্দেশনা না থাকলেও কোথাও কেবিনেট লিডারকে মন্ত্রী বলা হয়৷ আবার কোথাও সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং কেবিনেট সদস্য বলা হয়৷ আবার যেসব স্কুলে একাধিক সেকশন থাকে সেখানে কেবিনেট সদস্য বেশি হতে পারেন৷
নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে তারা জানান,নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই৷ দশম শ্রেণির একজন ছাত্র প্রধান নির্বাচন কমিশনার হয়৷ শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার করা হয়৷ তারাই নির্বাচন পরিচালনা- তফশিল ঘোষণা, প্রার্থিতা চূড়ান্ত এবং ভোট গ্রহণ সবই করে তারা৷ জাতীয় নির্বাচনের সব প্রক্রিয়াই এখানে থাকে, থাকে পোলিং এজেন্টও৷ শুধু ব্যালট পেপারে কোনো প্রতীক থাকেনা৷ থাকে প্রার্থীর নাম, শ্রেণি এবং রোল নাম্বার৷ স্টুডেন্টস কেবিনেটের উদ্দেশ্য কী জানতে চাইলে তারা জানান, স্টুডেন্টস কেবিনেটের একটি ম্যানুয়াল রয়েছে৷ প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ সংরক্ষণ (বিদ্যালয়, আঙিনা ও টয়লেট পরিষ্কার এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পুস্তক ও শিখন সামগ্রী, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও সহপাঠ কার্যক্রম, পানিসম্পদ, বৃক্ষ রোপণ ও বাগান তৈরি ইত্যাদি দিবস ও অনুষ্ঠান উদষাপন, অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ন এবং আইসিটি) এই ৮টি প্রধান দায়িত্বে আটজন নির্বাচিত প্রতিনিধি দায়িত্ব পালন করবেন।
তারা আরো জানায়, স্টুডেন্টস কেবিনেট কোনো প্রকল্প নয়৷ এটা সরকারের মাধ্যমিক শিক্ষার মূল কার্যক্রমেরই অংশ৷ এটা কোনো সাময়িক বিষয় নয়৷ মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতেই এটা করা হয়েছে৷ কেবিনেট নির্বাচনের প্রধান উদ্দেশ্য দুইটি, লিডারশিপ তৈরি করা এবং সহযোগিতা ও সহনশীলতার মানসিকতা তৈরি করা৷ সাইটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জনের জন্য দরকার কোয়ালিটি এডুকেশন৷ আর কোয়ালিটি এডুকেশন শুধু পরীক্ষায় ভালো ফল করলেই হবেনা৷ সে কত যোগ্য মানুষ হলো, যোগ্য নাগরিক হলো, এটা আসল বিষয়৷ এই স্টুডেন্টস কেবিনেটের মাধ্যমে সেটাই করা হচ্ছে।