ডেল্টা হেল্থ কেয়ার, রামপুরা লিমিটেড-এ বিগত ২০১২ইং সন হইতে ২০১৯ ইং সন পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকারী চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মসহ বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি কুক্ষিগত করে লুটপাটের বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা ।
১৩ মার্চ জমা দেয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি বিগত ২০১২ইং সালে হাসপাতালের আদলে নির্মিত ভাড়া ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে । চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা ডা. মো. আব্দুল কুদ্দুস এবং তৎসময়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে থাকা ডা. মোঃ সাইফুল ইসলাম সেলিম প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সময়ে নানা রকমের আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত । সর্বমোট ৯৬ (ছিয়ানব্বই) জন বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগকৃত ১০৭,৮০০,০০০.০০ (দশ কোটি আটাত্তর লক্ষ) টাকা ও প্রতিষ্ঠানের অর্জিত আয় ২৫,২৯৫,৯২৬/= (দুই কোটি বায়ান্ন লক্ষ পচানব্বই হাজার নয়শত ছাব্বিশ) টাকা এবং বকেয়া প্রায় ৬৬, ১৫১,১০৭/= (ছয় কোটি একষট্টি লক্ষ একান্ন হাজার একশত সাত) টাকাসহ সর্বমোট প্রায় ১৯৯, ২৪৭, ০৩৩/= (ঊনিশ কোটি বিরানব্বই লক্ষ সাত চল্লিশ হাজার তেতত্রিশ) টাকার হিসাব চাইলে দেব দিচ্ছি বলে কালক্ষেপণ করতে থাকে এরই একপর্যায় একটি ইন্টারনাল অডিট করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক চেয়ারম্যান ও পরবর্তী ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থপনা পরিচালক ডেল্টা লিমিটেড ও ডেল্টা ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালকে ইন্টারনাল অডিট করার জন্য একটি চিঠি প্রদান করেন । তখন ডেল্টা লিমিটেড ও ডেল্টা ফার্মার অডিট টিম ডেল্টা হেল্থ কেয়ার, রামপুরা লিঃ ইন্টারনাল অডিট করার দায়িত্ব গ্রহণ করেন । এরপর ১১/০৯/২০২১ইং তারিখ অডিট টিম একটি রিপোর্ট প্রদান করেন । সেই রিপোর্টে চেয়ারম্যান ডা. মোঃ আব্দুল কুদ্দুস ও সাবেক ব্যবস্থপনা পরিচালক ডা. মোঃ সাইফুল ইসলাম এর সময়কালে অর্থ আত্মসাৎ এর কিছু চিত্র ফুটে উঠেছে ।
নিম্নে সংক্ষিপ্ত ভাবে বিবরণ দেওয়া হলঃ-
২০১৬-২০১৭ অর্থ বছর কে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছর পর্যন্ত হাসপাতাল কালেকশন থেকে ৮৭,০৩,৫৮৮/= (সাতাশি লক্ষ তিন হাজার পাঁচশত আটাশি) টাকা আত্মসাৎ করেছেন ।
২০১৪-২০১৯ অর্থ বছর পর্যন্ত রেনোভেশনের নামে অগ্রীম হিসাবে ১,৬৭,৮৩,০৬১ /= (এক কোটি সাতষট্টি লক্ষ তিরাশি হাজার একষট্টি) টাকা দেখানো হয়েছে যার কোন ব্যাখ্যা বা বিল ভাউচার দেখাতে পারে নাই। ফলে তারা দুইজন মিলে টাকা গুলো আত্মসাৎ করেছে বলে প্রতিয়মান হয় ।
২০১৪-২০১৯ অর্থ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন কোম্পানির নামে অগ্রীম হিসাবে ১৩,০৭,৭৮২/= (তের লক্ষ সাত হাজার সাতশত বিরাশি) টাকা দেখানো হয়েছে যার কোন ব্যাখ্যা বা বিল ভাউচার দেখাতে পারে নাই। ফলে তারা দুইজন মিলে টাকা গুলো আত্মসাৎ করেছে বলে প্রতিয়মান হয় ।
২০১৪-২০১৯ অর্থ বছর পর্যন্ত হাসপাতালের অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়ে যে কারণে স্টাফদের চার মাসের বেতন বকেয়া থাকা সত্ত্বেও স্টাফদের অগ্রীম বেতন বাবদ ২,১১,৮৬০/- (দুই লক্ষ এগারো হাজার আটশত ষাট) টাকা অডিট রিপোর্টে দেখিয়ে হিসাব মেলানো হয়েছে । পরবর্তীতে তারা যার কোন ব্যাখ্যা দিতে পারে নাই । উক্ত টাকা তারা আত্মসাৎ করেছে বলে প্রতিয়মান হয় ।
৫। ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ৫,৫৫,১০২/- (পাঁচ লক্ষ পঞ্চান্ন হাজার নয়শত দুই) টাকা অডিট রিপোর্টে মেলানো সম্ভব হয়নি । যা অডিটরস্ রিপোর্টে উল্লেখি আছে। উক্ত টাকা তারা দুইজন মিলে আত্মসাৎ করেছে বলে প্রতিয়মান হয় ।
২০১২-২০১৯ অর্থ বছর পর্যন্ত শেয়ার মানি ১০,২০০,০০০/= (এক কোটি দুই লক্ষ) টাকা ব্যাংক এ্যাকাউন্টে জমা না করে আত্মসাৎ করেছেন ।
শট টার্ম লোন ৪৩,০০০,০০/= (তেতাল্লিশ লক্ষ) টাকা ব্যাংক এ্যাকাউন্টে জমা না করে আত্মসাৎ করেছেন । ৮।০৫/০৮/২০১৯ ইং তারিখে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ মোঃ সাইফুল ইসলাম অব্যাহতি গ্রহণের পূর্বে ক্যাশ ইন হ্যান্ড ২৭,৯৪,০০০/= (সাতাশ লক্ষ চুরানব্বই হাজার) টাকা দেখালেও পরবর্তী দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিকে বুঝিয়ে দেন ।
নাই এবং সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন, এর পর থেকে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি তারা তাদের মতো করে অদ্যবদি পরিচলনা করে আসছে, যার কোনো সচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নেই ।
সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মোঃ সাইফুল ইসলাম এর সময়কালে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত দায়-দেনা ৬,৬১,৫১,১০৭/= (ছয় কোটি একষট্টি লক্ষ একান্ন হাজার একশত সাত) টাকা থাকলেও তিনি প্রতিটি বোর্ড মিটিংয়ে প্রতিষ্ঠানের দায়-দেনার হিসাব দেখিয়েছেন ৩,৩২, ৮৫, ১৬৪/- (তিন কোটি বত্রিশ লক্ষ পঁচাশি হাজার একশত চৌষট্টি) টাকা । এখানেও প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত দায়-দেনা গোপন করে আর্থিক অনিয়ম করেছেন প্রায় ৩,২৮,৬৫,৯৪৩/= (তিন কোটি আটাশ লক্ষ পয়ষট্টি হাজার নয়শত তেতাল্লিশ) টাকা ।
সর্বোপরি বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে চেয়ারম্যান ডা. মোঃ আব্দুল কুদ্দুস ও সাবেক ব্যবস্থপনা পরিচালক ডাঃ মোঃ সাইফুল ইসলাম অর্থ আত্মসাৎ করে প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারীদের ও রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন । স্বাস্থ্য সেবার নামে এদেশের জনগণ ও বিনিয়োগকারীদেরকে ঠকিয়ে অর্থ আত্মসাত করার প্রতিবাদ করলে তারা দুইজন উক্ত প্রতিষ্ঠানে ভিতর একটি গ্রুপিং করে অভিযোগকারীকে প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করে। অভিযোগকারী তখন হাতিরঝিল থানায় গত ২২/০৯/২০১১ইং তারিখ (জি.ডি নং ১১১৬) একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ।
বর্ণিত বিষয়ের আলোকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে দুদক চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ওই অভিযোগকারী ।