উত্তরা সংবাদ দাতা ঃ উত্তরায় ছাত্র সমন্বয়ক ভুয়া পরিচয় দিয়ে দেশীয় অস্রের মুখে ম্যানেজার কাইয়ুমকে জিম্মি করে জোর পূর্বক বাসায় ঢুকে নগদ টাকা ও কয়েক লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার লুট করা হয়। এঘটনায় জড়িত মোঃ মারুফ হাসান পল্লব (৩২) ও আব্দুল্লাহ আল মামুন সজিব (২৬)কে গ্রেফতার করেছে উত্তরা-পশ্চিম থানা পুলিশ।
এই সময় তাদের হেফাজত থেকে লুট হওয়া ১৪ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ এক লক্ষ টাকা, একটি পাসপোর্ট ও ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
উত্তরা-পশ্চিম থানা সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) রাত সাড়ে এগারোটার দিকে অজ্ঞাতনামা ৯/১০ জন দুস্কৃতকারী উত্তরা-পশ্চিম থানার ১২নং সেক্টরের শাহ মখদুম এভিনিউ রোডের ৬১ নাম্বার বাসার ম্যানেজারকে জিম্মি করে বাসার ৬ষ্ঠ তলায় জনৈক ড. হারুনুর রশিদ হাওলাদারের ফ্ল্যাটে বিজিএমইএ ও শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটির ছাত্র এবং ছাত্র সমন্বয়কের পরিচয় দিয়ে ফ্ল্যাটের ভিতরে প্রবেশ করে। দুস্কৃতকারীরা ফ্ল্যাটের ভিতরে প্রবেশ করার পর ফ্ল্যাটে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ডিভিআর খুলে ফেলে এবং উপস্থিত ড. হারুনুর রশিদ হাওলাদারের স্ত্রী ড. মমতাজ শাহানারাকে (ইডেন কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল)কে বলে তাদের ফ্ল্যাটে অবৈধ অস্ত্র ও টাকা মজুদ আছে।
ডঃ হারুনুর রশিদ হাওলাদার পটুয়াখালী উপজেলার ২ বারের চেয়ারম্যান। তিনি কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পটুয়াখালি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। দুষ্কৃতকারীরা তাদেরকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কাছে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ড. মমতাজ শাহানারার নিকট ২৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। তিনি চাঁদা প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে দুষ্কৃতকারীদের মধ্যে কয়েকজন তার সাথে কথা বলতে থাকে এবং বাকিরা তার শোবার ঘর থেকে ৮৩ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ১৫ লক্ষ টাকা লুট করে নেয়। স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা লুট করে তারা রাত ২.৪০ টার দিকে চলে যাওয়ার সময় সিসিটিভি ক্যামেরার ডিভিআরও সাথে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় গত ২০ অক্টোবর রবিবার ড. মমতাজ শাহানারা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৯/১০ জন এর বিরুদ্ধে উত্তরা-পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা নং-৩৪।
উত্তরা-পশ্চিম থানা সূত্রে আরো জানা যায়, মামলা রুজু হওয়ার পর উত্তরা বিভাগের উপ- পুলিশ কমিশনার রওনক জাহান এর নির্দেশনায়, উত্তরা বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার সাদ্দাম হোসেন ও উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান পরিচালনা করেন।এর আগে তারা সিআইডি ও পিবিআই এর ক্রাইমসিন সদস্যদের মাধ্যমে হাতের ছাপসহ আলামত জোগাড় করেন। উত্তরা-পশ্চিম থানা পুলিশ ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় জড়িতদের সনাক্ত করে। এরপর তাদের গ্রেফতার ও লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধারে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) ভোর রাতে উত্তরা ৪নং সেক্টর হোটেল প্যারাডাইজ থেকে ঘটনায় জড়িত মোঃ মারুফ হাসান পল্লবকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার হেফাজত থেকে লুন্ঠিত ১৪ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, একটি পাসপোর্ট ও ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়।
উত্তরা-পশ্চিম থানা সূত্রে জানা যায়, (২৩ অক্টোবর) বুধবার গ্রেফতারকৃত মোঃ মারুফ হাসান পল্লবকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করলে সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে এবং অপর অভিযুক্তদের ব্যাপারে তথ্য প্রদান করে। মারুফ হাসান পল্লবের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার বিকাল সাড়ে পাঁচটায় উত্তরা ১২নং সেক্টর থেকে আব্দুল্লাহ আল মামুন সজিবকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে লুন্ঠিত এক লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সজিব উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
বাকী টাকা ও আসামী উদ্ধার বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ হাফিজুর রহমান বলেন ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামি গ্রেফতার এবং লুন্ঠিত বাকি মালামাল উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।